যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যবর্তী নির্বাচনে মার্কিন পার্লামেন্ট কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটে ক্ষমতাসীন রিপাবলিকান দলের জয় প্রায় নিশ্চিত হলেও নিম্নকক্ষের দখল চলে যাচ্ছে বিরোধী ডেমোক্র্যাটদের হাতে।
উচ্চকক্ষের দখল হাতে থাকা মানে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের হাতে ক্ষমতা থাকা। কারণ সিনেট সদস্যদের মেয়াদ ৬ বছর করে। কিন্তু মেয়াদের মাঝখানে এসে হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভস বা প্রতিনিধি পরিষদে হেরে যাওয়াটা খুবই বড় ব্যাপার একজন প্রেসিডেন্টের জন্য। কেননা প্রকৃত অর্থেই তারা জনপ্রতিনিধি।
যদিও হোয়াইট হাউজ প্রেস সচিব সারাহ স্যান্ডারস জানিয়েছেন, যে-ই জিতুক, প্রেসিডেন্ট তার সঙ্গেই কাজ করবেন।
কিন্তু তখন আগের দু’ বছরের সঙ্গে পরের দু’বছরের শাসনে পার্থক্য থাকবে অনেকখানি। কেননা তখন ডেমোক্র্যাটরা ট্রাম্পের যে কোনো পরিকল্পনায় অনুমোদন না দিয়ে সেটির বাস্তবায়ন ঠেকাতে পারবেন বা দেরি করাতে পারবেন।
বিবিসি’র নির্বাচন বিশ্লেষক অ্যানথনি জুরকারের মতে, হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভস থেকে প্রেসিডেন্টের পরিকল্পনাসহ বিভিন্ন ইস্যুতে একেকটি সিদ্ধান্ত সিনেটে যায়। ডেমোক্র্যাটরা যেহেতু সেই হাউজের দখল পেয়ে যাচ্ছেন, তারা এখন চাইলেই একজোট হয়ে ট্রাম্পের যে কোনো আইনি এজেন্ডা আটকে দিতে পারেন।
শুধু তাই নয়, হাউজ থেকে নিজেদের পরিকল্পনামাফিক আইন পাস করে সেগুলো সিনেটে পাঠাতে পারেন। সংখ্যাগরিষ্ঠ রিপাবলিকান সিনেটরদের জন্য সেসব ডেমোক্রেটিক ধাঁচের পরিকল্পনা নিয়ে ভোটাভুটি হবে নিঃসন্দেহে অস্বস্তিকর। যে সিদ্ধান্তই তারা নেবেন, সেটা নিতে হবে ডেমোক্রেটিক দৃষ্টিভঙ্গি বিবেচনা করেই। ভোটাভুটি না করে তাদের উপায়ও থাকবে না।
হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভসের হাতে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় ও কেন্দ্রীয় কমিটির নিয়ন্ত্রণ। ডেমোক্র্যাটরা এখন চাইলেই সেই নিয়ন্ত্রণ কাজে লাগিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারণার সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্কও জোর দিয়ে তদন্ত শুরু করতে পারেন।
হয়তো তারা তদন্তের খাতিরে এ সুযোগে ট্রাম্পের ব্যক্তিগত অার্থিক তথ্যাবলীতে হাত দিতে পারেন, যার ফলে অবশেষে সবাই তার আয়কর রিটার্ন সম্পর্কে জানার সুযোগ পাবে।
গত দু’বছরে ট্রাম্প প্রশাসনের বেশ কয়েকজন সিনিয়র কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এতদিন ডেমোক্র্যাটরা এসব নিয়ে গভীর তদন্তের শুধু দাবিই জানিয়ে আসতে পেরেছেন।
হাউজের নিয়ন্ত্রণ পাবার পর তারা সরাসরি কঠোর তদন্ত শুরু করে দিতে পারবেন। আর তাতে এমন কিছু তথ্যও বেরিয়ে আসতে পারে যা শেষমেশ ট্রাম্প সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে দেবে।
তবে সিনেটে সংখ্যাগরিষ্ঠতা এরপরও অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ সবকিছুর পরও চূড়ান্ত সিদ্ধান্তগুলো আসে সিনেট থেকেই। সিনেটই যে কোনো ব্যক্তিকে প্রশাসন বা বিচার বিভাগে নিয়োগের ব্যাপারে ট্রাম্পের সিদ্ধান্তকে নিশ্চিত হিসেবে অনুমোদন দেয়ার ক্ষমতা রাখে।
ট্রাম্প ইতোমধ্যে দেশটির বিচার বিভাগে ৮৪ কনজারভেটিভ বিচারক নিয়োগ দিয়েছেন। সিনেটে রিপাবলিকানদের বিজয় নিশ্চিতের ফলে আশা করা হচ্ছে, এই ধারা বাকি দু’বছরেও থাকবে।
এছাড়া সিনেটে বিজয়ের কল্যাণে ট্রাম্প যে কোনো উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাকেও পদ থেকে সরিয়ে নিজের পছন্দ মতো ব্যক্তিকে সেখানে বসাতে পারবেন। যেমন, হয়তো মধ্যবর্তী নির্বাচনের পর ট্রাম্পের মনে হলো তিনি অ্যাটর্নি জেনারেল জেফ সেশনসকে সরিয়ে দেবেন। তিনি চাইলেই তা করতে পারবেন। আর সেখানে সমর্থন দেবে রিপাবলিকান সিনেট।
সব কথার শেষ কথা, হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভসে হারলে ট্রাম্প সরকারের জটিলতা হবে অনেক বেশি, এতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু এটাও সত্যি, রিপাবলিকানরা যদি একজোট থাকে, সিনেটের ক্ষমতা কাজে লাগিয়েই বাকি দু’বছর তাদের সরকার মোটামুটি তাদের মতোই চালাতে পারবে।