লাগামহীন হয়ে পড়েছে কয়েকটি নিত্যপণ্যের দাম। তাই আয়ের সাথে ব্যয়ের হিসাব মেলাতে হিমশিম খাচ্ছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। এতে সবচেয়ে বড় বিপদে পড়ে এখন তারা দিশেহারা।
মঙ্গলবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারসহ কয়েকটি বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দাম বাড়ার তালিকায় রয়েছে চাল, আলু ও সবজিসহ কয়েকটি পণ্য।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, পণ্যের সবরাহ কমছে। বন্যায় উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। এ কারণে দাম বাড়ছে।
তবে ভোক্তাদের অভিযোগ, ব্যবসায়ীরা কারসাজি করে দাম বাড়াচ্ছেন। মজুত পর্যাপ্ত থাকলেও কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে ক্রেতাদের পকেট কাটছে।
বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, আইনের যথাযথ প্রয়োগ না থাকায় ব্যবসায়ারা কারসাজির মাধ্যমে পণ্যের দাম বাড়ায়। এতে জনগণের পকেট কাটা হয়ে থাকে। যতদিন আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগ না হবে ততদিন বাজারে এই অনিয়ম হতে থাকবে।
ব্যবসায়ীদের দেয়া তথ্যমতে, বাড়তে থাকা সব ধরনের চালের দাম গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে বেড়েছে গড়ে ২ থেকে ৩ টাকা। আলুর কেজিতে বেড়েছে ১০ থেকে ১৫ টাকা। এছাড়া সব ধরনের সবজিরই আকাশছোঁয়া দাম।
এক সপ্তাহ আগে আলুর কেজি ছিল ৩৬ থেকে ৪০ টাকা। সেই আলু এখন বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা। তবে পাড়া-মহল্লার দোকানে রাখা হচ্ছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা।
বাজারে এখন মিনিকেট ও নাজিরশাইল চালের কেজি ৫৭ থেকে ৬২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ৫৬ থেকে ৬০ টাকা।
মাঝারি (পায়জাম ও লতা) চালের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকায়, যা ছিল ৪৮ থেকে ৫৩ টাকা।
তবে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে নিম্নবিত্তদের খাদ্য হিসেবে পরিচিত মোটা চালের দাম। এই চালের (স্বর্ণ ও চায়না ইরি) কেজি এখন বিক্রি হচ্ছে ৪৬ থেকে ৫২ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৪৫ থেকে ৫০ টাকা।
সরকারি বিপণন সংস্থা টিসিবির দৈনিক বাজার দরের তথ্যেও এসব পণ্যের দাম বাড়ার চিত্র পাওয়া গেছে। তবে বাজারের বর্তমান দরের চেয়ে কিছুটা কম দেখা গেছে সংস্থাটির ওয়েবসাইটের মূল্য তালিকায়।
চালের দাম বাড়ার কারণ হিসেবে কারওয়ান বাজারের চাল বিক্রেতা মো. রহমান চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, দাম কমানোর জন্য দরকার চালের সরবরাহ বাড়ানো। আমদানি করতে হবে। আমদানিতে শুল্ক বাদ দিতে হবে। এতে আমদানি বাড়বে। দামও হাতের নাগালে আসবে।
বাজারে শীতের কিছু সবজি আসলেও গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে প্রায় সব ধরনের সবজি।
শিমের কেজি ১৬০ টাকা, পাকা টমেটোর কেজি ১৩০ টাকা, বেগুন ১০০ থেকে ১২০ টাকা, পেঁপের কেজি ৪৫ টাকা। এছাড়া পটল ৮০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকা, কচুর ছড়া ৭০ টাকা, করলা ৬০ থেকে ৭০ টাকা, দেশি শশা ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
তবে কাঁচা মরিচের কেজি এখনও ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা এবং ধনিয়া পাতা ২৪০ থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
তবে ৬০ টাকার কমে এখন কোনো সবজিই পাওয়া যাচ্ছে না।
স্বস্তি নেই পেঁয়াজেও। দেশি পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৯০ টাকায়। ভারতীয় পেঁয়াজের কেজি ৮০ থেকে ৮৫ টাকা। রসুনের কেজিতেও বেড়েছে প্রায় ১০ টাকা। প্রতিকেজি রসুন এখন বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১২০ টাকা।
কারওয়ান বাজারে আলুর দাম দেখে চোখ কপালে তুললেন আমেনা বেগম নামের একজন গৃহিণী।
তিনি বলেন, সবকিছুর দাম অস্বাভাবিক। প্রতি সপ্তাহে একের পর একটা জিনিসের দাম বেড়েই চলেছে। কিন্তু আয় তো বাড়েনি। বরং করোনায় চাকরিবাকরি হারিয়ে বেকার হয়েছে হাজার হাজার মানুষ। এই পরিস্থিতিতে খেটে খাওয়া নিম্ন আয়ের মানুষদের জীবন বাঁচানোই চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
পণ্যের দামের সার্বিক বিষয়ে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, শাকসবজির সরবরাহ কিছুটা কম হতে পারে। কিন্তু আলু ও চালের সরবরাহ তো কম নয়। তাহলে এগুলোর দাম বাড়বে কেন?
তিনি বলেন, কেউ যদি সরবরাহ কম দেখিয়ে দাম বাড়ায় তাহলে তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে। শাস্তির ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
“তবে আইন যদি না থাকে, আইনের যথাযথ ব্যবহার যদি না হয় বা বিচার ব্যবস্থায় যদি দীর্ঘসূত্রতা থাকে তাহলে কারসাজিকারীদের দৌরাত্ম আরো বাড়বে। এতে দূর্ভোগের শিকার হতে হবে সাধারণ মানুষের।”