পবিত্র মাহে রমজান আসন্ন, আর এই মাসকে ঘিরে অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের ফন্দি-ফিকিরের প্রভাব বাজারে স্পষ্ট। বিগত বছরগুলোর মতো এবছরও রমজান শুরুর দুই মাস আগ থেকেই বাজারে নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে বসে আছে, এতে করে রমজানে পণ্যমূল্য বৃদ্ধি নিয়ে অভিযোগ করার কোনো সুযোগ থাকছে না।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকে উপলক্ষ বানিয়ে ইতোমধ্যে রাজধানীর খুচরা বাজারগুলোয় ভোজ্যতেলসহ নানা নিত্যপণ্যের দাম বাড়ানো হয়েছে। গরুর মাংসের দাম অন্য একমাত্রায় পৌঁছে গেছে। সবচেয়ে উদ্বেগজনক হলো, রমজানের আগে ধাপে ধাপে বিভিন্ন পণ্যসামগ্রীর মূল্য বাড়লেও, পরে তা আর কমে না বললেই চলে।
বিষয়টি উপলব্ধি করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নানা পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দিলেও কমেনি অনেককিছুরই দাম। বুধবারও (৩০ মার্চ) সংসদে তিনি দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বিষয়ে কথা বলেছেন। অন্যদিকে বাণিজ্যমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থা তাদের রুটিন ডিউটি পালন করে যাচ্ছেন, কাজ কতোটুকু হচ্ছে তা বাজারে বিভিন্ন পণ্যের দাম দেখলেই বোঝা যাচ্ছে। কঠোর মনিটরিংয়ের মাধ্যমে বাজার নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি কোনো অনিয়ম পাওয়া গেলে সঙ্গে সঙ্গে দায়ীদের কঠোর শাস্তির আওতায় আনতে হবে। না হলে ভবিষ্যতে হয়তো বড় সঙ্কটের মুখে পড়তে হবে জাতিকে।
রমজান মাসকে বলা হয় সংযম ও আত্মশুদ্ধির মাস। পবিত্র এ মাসে সিয়াম সাধনার মাধ্যমে মুসলমানরা আল্লাহর নৈকট্য ও সন্তুষ্টি লাভের চেষ্টা করেন। অথচ এ রমজানেই বাড়তি চাহিদার সুযোগ নিয়ে একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী অতি মুনাফা লাভের আশায় নিত্যপণ্যের দাম অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে, যা নিন্দনীয়।
বাজারে চাপ তৈরি হলে সরকারের পক্ষ থেকে ভ্যাট-ট্যাক্স ছাড়সহ দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া হয়। তারপরেও উদার বাণিজ্য ব্যবস্থার সুযোগ নিয়ে স্বার্থান্বেষী গুটিকয় ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বাজারের স্বাভাবিক গতি ব্যাহত করার অপচেষ্টায় লিপ্ত থাকে। এটি যে অসাধু ব্যবসায়ীদের একচেটিয়া বাজার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা, এতে কোনো সন্দেহ নেই। যদিও এতে সরকারের শক্ত কোনো ভূমিকা নেই বললেই চলে। এ অবস্থায় টিসিবিকে কার্যকর করাসহ সরকারের উচিত নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করা, যাতে ভোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। বাজার ব্যবস্থার স্বাভাবিক গতি বাধাগ্রস্ত করা হলে তাতে ভোক্তাস্বার্থের হানির সাথে সাথে দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে বিরূপ প্রভাব পড়ে।
ব্যবসায় মুনাফা অর্জন স্বাভাবিক একটি প্রক্রিয়া। কিন্তু মুনাফার নামে অনৈতিক কর্মকাণ্ড সমর্থনযোগ্য নয়। বিগত কয়েক বছরে সরকারের আন্তরিকতা ও নানামুখী পদক্ষেপ সত্ত্বেও পণ্যের অযৌক্তিক মূল্যবৃদ্ধি কেন রোধ করা যায়নি, তা খতিয়ে দেখা উচিত। রমজান মাসসহ সারাবছর দ্রব্যমূল্য জনগণের নাগালের মধ্যে থাকুক, এই আমাদের প্রত্যাশা।