চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

নিজেকে ফিরে পেয়ে মোস্তাফিজের নজর বিশ্বকাপে

ফিজের একান্ত সাক্ষাৎকার

অপ্রত্যাশিত চোট, অস্ত্রোপচারের ধকলে মোস্তাফিজুর রহমান যখন ছন্দ হারিয়ে ফেললেন, বড় দুশ্চিন্তায় পড়ে গেল বাংলাদেশ দল, ভক্ত-সমর্থকদের মাঝে তো দুশ্চিন্তা ছড়াল আরও বেশি। চেনারূপে কি ফেরা হবে আর! এমন ফিসফাসও বাড়ল। সব শঙ্কা উড়িয়ে ফিজ স্বরূপে ফিরেছেন, ফিরেছেন আরও শানিত ও ধারালো হয়ে।

আইপিএলে ফ্র্যাঞ্চাইজি বদলেছে, কিন্তু কাটারের ধার একই আছে তার। রাজস্থান রয়্যালসের হয়ে ১৪ ম্যাচে নিয়েছেন ১৪ উইকেট। টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে বাঁহাতি পেসারের দারুণ ছন্দ আশাবাদী করছে টাইগার দলকেও। লাল-সবুজদের তুরুপের তাস মোস্তাফিজ নিজে কী ভাবছেন বিশ্বকাপ নিয়ে সেটি জানা গেল দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে।

ফিট থাকতে সবার আগে চিনি বাদ দিন, প্রাকৃতিক ও নিরাপদ জিরোক্যাল-এর মিষ্টি স্বাদ নিন।

মোবাইল অ্যাপের ভয়েস কলে চ্যানেল আই অনলাইনের সঙ্গে একান্ত আলাপে তারকা ক্রিকেটার মোস্তাফিজ কথা বলেছেন ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের নানা দিক নিয়েও।

এখন আপনি কোথায়?
মোস্তাফিজ: আবুধাবি, বাংলাদেশের টিম হোটেলে।

ওমান থেকে পুরো দল আজই আসছে বিশ্বকাপের প্রস্তুতি ম্যাচ খেলতে। নিশ্চয় সতীর্থদের কাছে পেতে মুখিয়ে আছেন?
মোস্তাফিজ: সেটা দল যখন ওমান আসছে তখন থেকেই। সন্ধ্যার পর পুরো দলকে পাবো, যদি কোভিড-১৯ রেজাল্ট সবার ভালো থাকে।

মরুর দেশে আইপিএলের সময়টা কেমন কাটল?
মোস্তাফিজ: আলহামদুলিল্লাহ, সময় খুব ভালো কেটেছে।

ভিডিওতে দেখলাম রাজস্থান রয়্যালস ছেড়ে আসার মুহূর্তটা। বিদায়পর্ব যেন শেষই হচ্ছিল না!
মোস্তাফিজ: একটা জায়গায় অনেকদিন থাকার পর ছেড়ে আসা, খারাপ তো লাগবেই। সবাই ছিলাম একসঙ্গে। আমাদের দেশেও একটা টুর্নামেন্ট শেষ হয়ে গেলে তো একটু খারাপ লাগে, এই আরকি!

রাজস্থান রয়্যালসে প্রথমবার খেললেন, কেমন লেগেছে দলটা?
মোস্তাফিজ: এই টিমে প্রতিটা মানুষ যে সাপোর্ট দিয়েছে, এটা আমার কাছে খুবই ভালো লেগেছে। কয়েকজন বাঙালি থাকাতে সুবিধা হয়েছে। মন খুলে বাংলা বলতে পেরেছি।

আমাদের কোচ আছেন একজন, ক্যামেরাম্যান ছিল একজন কলকাতার, হোটেলেও কলকাতার মানুষ ছিল। সব দলেই বাংলা জানা লোক ছিল। তবে এবার আমার অনেক ভালো লেগেছে। আমরা শুরু করছিলাম ভালোই। প্লে-অফে খেলতে পারলে খুব ভালো লাগত। আফসোস থেকে গেল।

জাতীয় দলের পাশাপাশি আইপিএলের মঞ্চেও অভিজ্ঞ হচ্ছেন। চারটা আসর খেলে ফেললেন। এখানকার অভিজ্ঞতা টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপে কীভাবে কাজে লাগাতে চান?
মোস্তাফিজ: যা যা শিখি তা চেষ্টা করি জাতীয় দলে কাজে লাগাতে, মূল খেলা আসলে ন্যাশনাল টিম, দেশের হয়ে খেলাটাই তো গুরুত্বপূর্ণ, তাই না?

এখানকার উইকেট, কন্ডিশন সম্পর্কে কেমন ধারণা হল?
মোস্তাফিজ: আবুধাবি আর দুবাইয়ে প্রায় একই ধরনের উইকেট হয়। আর আমাদের দিনে খেলা আছে কিনা সূচি দেখতে হবে। দিনে হলে বল হালকা ওঠে-নামে, সেগুলো আমাদের খেলোয়াড়রা ম্যানেজ করতে পারবে। আশা করি আমারা যেভাবে খেলে আসছি তাতে কোনো সমস্যা হবে না।

অধিনায়ক ও দলের সিনিয়র খেলোয়াড়দের অনেকেই এবারের বিশ্বকাপে খুব ভালো কিছু করার সম্ভাবনা দেখছেন। সেটি সত্যি করতে গেলে নিশ্চয় বল হাতে আপনার কাঁধে অনেক দায়িত্ব থাকবে। আপনাকে ঘিরে প্রত্যাশাও থাকবে আকাশ সমান।
মোস্তাফিজ: আমার কাছে ভাবনাটা একই থাকে, আমাকে দিয়ে যেন দলের উপকার হয়। যদি ভালো কিছু হয় দেশের, আমাকে দিয়ে টিমও জিতুক আর দেশের সম্মানও থাকুক, এটিই চাওয়া।

আপনি যখন শুরু করেছিলেন, মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা তখন টি-টুয়েন্টি ও ওয়ানডে অধিনায়ক। দুটি সংস্করণে একটি করে বিশ্বকাপ খেলেছেন তার অধীনে। পেস আক্রমণের নেতাও ছিল সে। এই আসরে সম্ভবত আপনাকে পেস আক্রমণে লিড দিতে হবে। আপনি ভালো করলে অনেক ভালো কিছু হতে পারে বিশ্বকাপে। তাছাড়া আগের দুটি বিশ্বকাপে আপনার পারফরম্যান্স বেশ ভালো।
মোস্তাফিজ: জানেন তো আমি ভাবনা-চিন্তা একটু কম করি। বুঝেছি ব্যাপারটা, ভালো করার ইচ্ছা থাকবে। দেশের সম্মান যেন রাখতে পারি সে প্রচেষ্টা থাকবে। একটা টুর্নামেন্টে সবাই ভালো খেলে না। আগে একটা জায়গায় বলেছি, যদি চার-পাঁচজন ক্লিক করে যায়, তিনজন ব্যাটে দুইজন বলে, তাহলে আল্লাহ দিলে খুব ভালো একটা রেজাল্ট আসবে। দেশবাসীর সবার দোয়া আমাদের সঙ্গেই আছে।

বিশ্বকাপে ‘ভালো রেজাল্ট’ বলতে কোথায় চোখ রাখছেন?
মোস্তাফিজ: খেলা বাকি আছে, বাছাইপর্বের তিনটা ম্যাচ, তার আগে দুটি প্র্যাকটিস ম্যাচ খেলব। বাছাইপর্বের তিন ম্যাচ হোক, এখন কীভাবে বলব… (হাসি)।

বাংলাদেশের হয়ে টানা সিরিজ খেলেছেন, আইপিএলে টানা ম্যাচ। বিশ্বকাপের ম্যাচও কম নয়। এত ধকল কীভাবে সামলাবেন, ওয়ার্মআপ ম্যাচে বিশ্রাম নেবেন কিনা?
মোস্তাফিজ: আমি জানি না, এটা আমার হাতে নেই। সবাইকে আগে কাছে পাই, কোচ-ক্যাপ্টেন নিশ্চয়ই এটি নিয়ে কিছু বলবেন। চেষ্টা করে যাচ্ছি, আমার হাতে যা আছে- কীভাবে সুস্থ থাকা যায়। দোয়া করবেন যেন ফিট থাকতে পারি।

একটু আইপিএল প্রসঙ্গে ফিরি। সাকিব-মোস্তাফিজ, দুজনই আইপিএল খেলেন। বাংলাদেশের বাকিদের কেন সুযোগ হয় না, এই প্রশ্ন কী মাথায় আসে?
মোস্তাফিজ: এবারের বিশ্বকাপে যদি আমাদের খেলোয়াড়রা ভালো করে, তাহলে ভালো সুযোগ আছে সামনে। এখানে যারা আছে তাদের আমাদের খেলোয়াড়দের সম্পর্কে ভালো ধারণা আছে। তারাও খেলা দেখে আমাদের দেশের, দেখে না এরকম না। কে কোন জায়গায় ব্যাটিং করে সবই জানে।

রাজস্থান রয়্যালসে কি বাংলাদেশের অন্য খেলোয়াড়দের নিয়ে আলাপ হয়েছে?
মোস্তাফিজ: বাংলাদেশ থেকে আরও ক্রিকেটার খেললে আমাদের জন্য ভালোই হয়। কারও নাম ধরে বলা হয় না। সুযোগ হলে আমি বলি, বিদেশি যারা আসতেছে তাদের চেয়ে অনেক ভালো ভালো খেলোয়াড় আছে আমাদের। কিছু কিছু বিদেশি খেলোয়াড়ের জায়গায় আমাদের দেশের খেলোয়াড়ও এখানে খেললে ভালো করবে। যারা কোচ তাদের সঙ্গে টুকটাক আলাপ হয়েছে।

ভিত্তিমূল্য ১ কোটি রুপিতে খেলতে হল এবার। আইপিএলে এটি তেমন কোনো পারিশ্রমিক নয়! আগে এরচেয়ে কয়েকগুণ বেশি পেয়েছেন।
মোস্তাফিজ: এটি নিয়ে আফসোস নেই। ভালো খেললে কদর বাড়বে। কোন দল নেবে, এটা আমার হাতে থাকে না। আমার তরফ থেকে আমি আমার সেরাটা দেয়ার চেষ্টা করছি সবসময়। এই বছর না যে কয়বছর খেলেছি। ভালো করলে ভালো (পারিশ্রমিক) হওয়ার কথা।

শুরুর মোস্তাফিজ আর এখনকার মোস্তাফিজের মধ্যে পার্থক্য কতটা?
মোস্তাফিজ: আমি পরিবর্তন বুঝতে পারি না। আমি বোলিং করি, এটুকুই জানি।

বিস্ময়কর উত্থানের পর কাঁধের চোট আপনাকে খুব ভুগিয়েছে। অনেকেই ভেবেছিল আপনি পথ খুঁজে পাবেন না। অনেক কোচ আপনাকে নিয়ে কাজ করেছেন। বোলিংয়ে বৈচিত্র্য ফিরে পেতে সময় লেগেছে। ওই সময়টায় ভেতরে কী চলছিল?
মোস্তাফিজ: শুধু ক্রিকেট নাম সব খেলাতেই ভালো-খারাপ নিয়ে সময় যাবে। হাল ছাড়িনি। চেষ্টা করেছি। কে কী বলে সেদিকে কান না দিয়ে কীভাবে ভালো করব, কী করলে ভালো হবে। যখন খারাপ সময় গিয়েছে তখনও আত্মবিশ্বাস ছিল। ইনজুরি নিয়ে খেলাই কষ্ট, তাই না? খারাপ হয়নি আল্লাহর রহমতে ভালো হয়েছে, এমন সময়েও (চোট) হতে পারতো যে বাংলাদেশের সামনে বড় কোনো ইভেন্ট। মিস করতে পারতাম, সেটা হয়নি।

ছয় বছর ধরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলছেন। আশা করি আরও দশ বছর বাংলাদেশকে সার্ভিস দেবেন। ক্যারিয়ার শেষের আগে বিশ্বকাপ জয়ের সম্ভাবনা কতটা দেখেন?
মোস্তাফিজ: আমাদের টিম যেভাবে যাচ্ছে তাতে অসম্ভব কোনো কিছু না। ওয়ানডে বা টি-টুয়েন্টি যে কোনো একটা বিশ্বকাপ জেতার সম্ভাবনা দেখি। আমার মনে হয় এখন যারা দলে আছে সবাই এই স্বপ্নটা দেখে, ক্যারিয়ারে একটা বিশ্বকাপজয়ী দলের অংশ হতে সবাই চায়।