দক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগরে ৪৪ জন ক্রু নিয়ে আর্জেন্টিনা নৌবাহিনীর একটি সাবমেরিন গত বুধবার থেকে নিখোঁজ রয়েছে। সান হুয়ান সাবমেরিন থেকে শেষবার যোগাযোগে জানানো হয়েছিল, সেখানে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে ব্যাটারিতে বৈদ্যুতিক ত্রুটি দেখা দিয়েছে।
এরপর ওই সাবমেরিনের সঙ্গে আর যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি বলে জানায় দেশটির নৌবাহিনী। দেশি-বিদেশি সূত্র দিয়ে সাবমেরিনটি যত দ্রুত সম্ভব খুঁজে বের করার চেষ্টা করা হচ্ছে। মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার একটি বিমানও এই নিখোঁজ সাবমেরিন উদ্ধারে অংশ নেয়।
সাবমেরিন কেন শনাক্ত করা যায় না?
গোপনে অভিযান চালনোই সাবমেরিনের কাজ। এ কারণে কেউ যাতে সাবমেরিন শনাক্ত করতে না পারে, সেভাবেই সাবমেরিন তৈরি করা হয়। এ বিষয়ে যুক্তরাজ্যের কেনটাকি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক ড. রবার্ট ফার্লে বলেন: কোন সাবমেরিন যদি সমুদ্রতলে বিশ্রামে থাকে তখন তা শনাক্ত করা যায় না। কারণ এই পরিস্থিতিতে সাবমেরিন কোন শব্দই করে না। শব্দের সূত্র ধরে সাবমেরিন শনাক্তকরণের পদ্ধতিকে ‘সোনার’ বলে। কিন্তু সাবমেরিন যখন সমুদ্রতলে থাকে তখন সোনার সিস্টেমকে নিস্ক্রিয় করে ফেলে।
তাহলে কীভাবে সাবমেরিন খুঁজে পাওয়া যাবে?
সাবমেরিনের ক্যাপ্টেন বা নাবিকরা যদি বিপদে পড়েন তাহলে তাদের অবস্থান জানানোর বেশকিছু পন্থা রয়েছে। এর মধ্যে নৌঘাটি বা সাহায্যকারী জাহাজে সংকেত পাঠানো কিংবা তাদের সাবমেরিনের সঙ্গে যুক্ত কোন যন্ত্র পানির উপরে পাঠিয়ে দেয়া।
সমুদ্রতলে ক্রুরা কতদিন টিকে থাকতে পারে?
পানির নিচে ক্রুরা কতদিন থাকতে পারবেন তা নির্ভর করে তারা কতক্ষণ ধরে দায়িত্ব পালন করছেন এবং তাদের প্রস্তুতি কত ভালো। সাবমেরিনের ব্যাটারির চার্জ যদি পর্যাপ্ত থাকে এবং বাতাস সতেজ থাকে, তাহলে ফলাফল আশাব্যঞ্জক বলে জানান ড. ফার্লে।
এজন্য ক্রুদের কী ধরণের প্রশিক্ষণ নিতে হয়?
আটকে পড়া ক্রুদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রশিক্ষণ হলো অক্সিজেন সঞ্চয়ের জন্য তাদের নিঃশ্বাসের হার কমিয়ে দেয়া। ড. ফার্লে বলেন: এ কাজের প্রশিক্ষণ অনেক কঠিন। এসব পরিস্থিতিতে অক্সিজেন সঞ্চয়ের জন্য ক্রুদের কাজ এবং কথা বলা কমিয়ে দেয়ার জন্য সতর্ক করতে হবে।
এ ধরণের ঠান্ডা এবং স্যাঁতসেঁতে অবস্থার মধ্যে মানসিক অবক্ষয় হতে পারে, কিন্তু সুপ্রশিক্ষিত এবং সুশৃংখল হতে হবে। তাদের নিয়মতান্ত্রিক হতে হবে এবং যখন তাদের চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হবে তখন এতে মানিয়ে নেয়াসহ উদ্ধারের আগ পর্যন্ত একে অপরকে সহযোগিতা করতে হবে।
কী কারণে সাবমেরিন দুর্ঘটনায় পড়তে পারে?
আর্জেন্টিনা নৌবাহিনীর সাবমেরিনের ব্যাপারে এখনও জানা যায়নি আসলে বিষয়টি কী হয়েছে। ড. ফার্লে বলেন: বৈদ্যুতিক ত্রুটির কারণে এর ব্যাটারিতে সমস্যা হয়েছিল বলে প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে। এ ধরণের যান্ত্রিক ত্রুটি ইঞ্জিন এবং যোগাযোগ মাধ্যম বন্ধ করে দিতে পারে।
এ ধরণের দুর্ঘটনায় পড়লে করণীয় কী?
সমুদ্রতলে আটকে পড়া সাবমেরিন উপরে তুলতে কয়েকটি পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়। এর মধ্যে একটি হলো- ভাসমান অবস্থা নিয়ন্ত্রণের জন্য জ্বালানি তেল ও ডিজেলের ট্যাংক খালি করে দিতে হবে। এসব ট্যাংকে বাতাস ভরতে হবে যেন সাবমেরিনিটি ভেসে থাকতে পারে।
কী ধরণের বিপদ হতে পারে?
প্রধান ঝুঁকি হলো অক্সিজেনের অভাব এবং কার্বন মনোক্সাইডের কারণে দম বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এক্ষেত্রে টিনের কৌটা বা জেনারেটরের মাধ্যমে অক্সিজেন সরবরাহ করতে হবে। একে ‘ইলেক্ট্রোসাইস’ বলে যা কার্যকরভাবে পানি এবং বাতাসের উপাদান পৃথক করে। কিন্তু বিদ্যুতের অভাব এই প্রক্রিয়াতে বিঘ্ন ঘটাতে পারে।
ড. ফার্লে জানান: এ ধরণের দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে সাবমেরিনের ভেতর পানি ঢুকে যায়। বায়ু সংকুচিত হয়ে যাওয়ায় আগুনসহ অন্যান্য ঝুঁকি মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে।