চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

নিউইয়র্ক বইমেলা ও বিশ্বজয়ী বাঙালি ড. নূরুন নবী

আবারো আয়োজিত হতে চলেছে নিউইয়র্ক বইমেলা। এবার বসছে মেলার ২৮তম আসর। নিউইয়র্কে এই বইমেলা আয়োজনের পেছনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছেন বিশ্বজয়ী বাঙালি ড. নূরুন নবী। তিন দিনব্যাপী এই মেলা শুরু হবে আগামী ২২ জুন। এ উপলক্ষে ৮ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হয়েছে মেলার আয়োজক কমিটির সভা।

নিউইয়র্ক বইমেলা কমিটির আহ্বায়ক ড. নূরন নবীর সভাপতিত্বে নিউজার্সির ক্যানবেরি কংলেট ড্রাইভ সাউথে তার নিজ বাসভবনে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়।

বেলা ৩টায় অনুষ্ঠিত এই সভায় বইমেলা আয়োজনের সর্বশেষ পরিস্থিতির প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। এছাড়া মুক্তধারা সাহিত্য পুরস্কার-সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ, হোস্ট কমিটি গঠন ও তহবিল সংগ্রহ বিষয়েও সভায় আলোচনা হয়।

সভায় বইমেলা আয়োজনের সর্বশেষ অগ্রগতির প্রতিবেদন তুলে ধরেন বিশ্বজিৎ সাহা। এসময় তিনি বাংলাদেশেরে জ্ঞান ও সৃজনশীল পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির নবনির্বাচিত কমিটিকে অভিনন্দন জানান।

তিনি জানান, এবার সবচেয়ে বেশি সংখ্যক প্রকাশনা সংস্থা নিউইয়র্ক বইমেলায় অংশ নেবে। ইতোমধ্যেই প্রকাশকদের বড় অংশ তাদের বই পাঠিয়ে দিয়েছে। মেলার বেশ আগেই তাদের বই নিউইয়র্ক পৌঁছে যাবে। মেলার আগেই বইয়ের তালিকা প্রকাশ করা হবে, যাতে আগ্রহীরা আগে থেকেই বই কেনার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। বাংলাদেশ থেকে অনেক লেখক মেলায় যোগ দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন।

সভায় জানানো হয়, গত দুই বছর ধরে মুক্তধারা ফাউন্ডেশন ‘মুক্তধারা সাহিত্য পুরস্কার’ নামে পুরস্কার দিয়ে আসছে। এই পুরস্কার আগামী পাঁচ বছর ২০১৮-২২ নিউজার্সির জিএফবি গ্রুপের অর্থায়নে দেওয়া হবে। এ সংক্রান্ত চুক্তিতে মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের পক্ষে ড. নূরন নবী ও জেএফবি গ্রুপের পক্ষে গোলাম ফারুক ভূঁইয়া সাক্ষর করেন। আগত অতিথিদের তদারকি, তাদের থাকার ব্যবস্থা ইত্যাদি নিয়েও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় সভায়।

বইমেলার তিন দিনের অনুষ্ঠানসূচি নিয়েও প্রয়োজনীয় আলোচনা হয়েছে। এবারের বইমেলায় নিউইয়র্কের পাশের রাজ্য নিউজার্সির বিশিষ্ট শিল্পীদের উল্লেখযোগ্য অংশগ্রহণ থাকবে বলে সভায় জানানো হয়।

সবশেষে বইমেলা পরিচালনা তহবিলের অর্থ সংগ্রহ বিষয়ে আলোচনা করা হয়। এই পরিপ্রেক্ষিতে তহবিল কমিটির সচিবের দায়িত্ব দেওয়া হয় শুভ রায়কে। এবারের বইমেলায় শিশু-কিশোর মেলা আয়োজনে অর্থ ঘাটতির বিষয়টি উত্থাপন হলে তা পূরণের ঘোষণা দেন কানেকটিকাট অঙ্গরাজ্য থেকে আসা মেলা কমিটির সদস্য নসরত শাহ।

সভায় নিউজার্সি থেকে যোগ দেন ড. নূরুন নবী, ড. জিনাত নবী, নাজনীন হোসেইন, অজন্তা সিদ্দিকী, ডা. ফারুক আজম, গোলাম ফারুক ভূঁইয়া, রহিমা করিম, অনিন্দিতা কাজী, ড. রেজাউল করিম, ড. কামরুল হাসান, সাব্বির আহমেদ, ড. দলিলুর রহমান ও সুমি রহমান।

নিউইয়র্ক থেকে যোগ দেন ফেরদৌস সাজেদীন, হাসান ফেরদৌস, আহমাদ মাযহার, জীবন চৌধুরী, রানু ফেরদৌস, আদনান সৈয়দ, ওবায়দুল্লা মামুন, নাসরিন চৌধুরী, শিরীন বকুল, আবু রায়হান, দিঠি হাসনাৎ, তানভীর রাব্বানী, শুভ রায় ও বিশ্বজিৎ সাহা। কানেকটিকাট অঙ্গরাজ্য থেকে যোগ দেন নসরত শাহ।

আমেরিকা এবং সারা পৃথিবীব্যাপী এই রকম সাংগঠনিক উদ্যোগ, লেখালেখি আর সৃজনশীল কাজে অগ্রগণ্য নাম ড. নুরুন নবী। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাণরসায়ন বিষয়ে বিএসসি অনার্স ও এমএসসি, জাপানের ওসাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি আর আমেরিকার নিউ ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ে পোস্ট ডক্টোরাল ডিগ্রি অর্জন করেন। ৭০ দশকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং প্রথম সিনেটের সদস্য তিনি। ১৯৮০ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন এই বাঙালি ব্যক্তিত্ব।

ড. নুরুন নবী পেশায় গবেষক ও বিজ্ঞানী। বর্তমানে একটি বহুজাতিক কোম্পানির শীর্ষস্থানীয় বিজ্ঞানী হিসেবে অবসর গ্রহণ করেছেন। ড. নূরুন নবীর পেটেন্টকৃত আবিষ্কারের সংখ্যা বর্তমানে ৫৫। বিজ্ঞানের পেশাদার জার্নালে এ যাবৎ তার ৫০টি গবেষণা নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। ১৯৬৭-৭১ সালে তিনি ঢাবির ফজলুল হক হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন।

মুক্তিসংগ্রামের দিনগুলোতে নিবেদিতপ্রাণ ছাত্রকর্মী আর ১৯৭১ এর বীর মুক্তিযোদ্ধা তিনি। মুক্তিযুদ্ধের কিংবদন্তী টাঙ্গাইলের বাঘা সিদ্দিকীর ঘনিষ্ট ও বিশ্বস্ত সহযোদ্ধা ছিলেন। ফারইস্টার্ন ইকোনমিক রিভিউ বর্নিত টাঙ্গাইল মুক্তিবাহিনীর ‘ব্রেইন’ ছিলেন ড. নবী। মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য প্রধান সেনাপতি কর্তৃক প্রদত্ত ‘স্পেশাল সাইটেশন’ প্রাপ্ত তিনি। ৮০ এর দশকে আমেরিকায় ইউনাইটেড মুভমেন্ট ফর ডেমোক্রেটিক বাংলাদেশ এবং ৯০ এর দশকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন ও ৭১ এর ঘাতক দালাল নির্মূল জাতীয় কমিটি প্রতিষ্ঠায় ও নেতৃত্বে তার প্রধান ভূমিকা ছিল।

বঙ্গবন্ধু পরিষদ আমেরিকা শাখার প্রতিষ্ঠাতা যুগ্ম আহ্বায়ক এবং বর্তমান সভাপতি ড. নবী। বাংলাদেশ সোসাইটি অব নিউ জার্সির প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক আর সাবেক সভাপতি, বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব নিউ জার্সির পৃষ্ঠপোষক এবং ফেডারেশন অব বাংলাদেশি এসোসিয়েশনস ইন নর্থ আমেরিকা ‘ফোবানা’র প্রতিষ্ঠাতা সদস্য।

এছাড়া তিনি ইউএসএ কমিটি ফর সেকুলার অ্যান্ড ডেমোক্রেটিক বাংলাদেশ এর সাবেক সভাপতি। অধুনালুপ্ত সাপ্তাহিক প্রবাসীর প্রেসিডেন্ট ও সম্পাদক ছিলেন তিনি। তিনি এস আর বি কমার্সিয়াল ব্যাংক এর স্পন্সর ডিরেক্টর। সাহিত্যে অবদানের জন্য তিনি বাংলা একাডেমি পুরষ্কারও লাভ করেন।

আমেরিকা থেকে প্রকাশিত প্রথম বাংলা বই ‘বিশ বছর পর’ এর প্রকাশক ড. নূরুন নবী । তার প্রকাশিত বই: ‘জন্মেছি এ বাংলায়’ ‘আমার একাত্তর আমার যুদ্ধ’, ‘জন্ম ঝড়ের বাংলাদেশ’, ‘Born in bengal’, ‘Bullets of 71-A freedom fighter’s story’ এবং আমেরিকায় ‘জাহানারা ইমামের শেষ দিনগুলি’ পাঠক মহলে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে।

বর্তমানে তিনি নিউজার্সি অঙ্গরাজ্যের প্লেইনসবোরো শহরের কাউন্সিলম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ড. নবীর স্ত্রী ড. জিনাত নবীও বিজ্ঞানী। দুই পুত্র মুসফিক নবী এবং আদনান নবী। নবী পরিবার বর্তমানে যুক্তরোষ্ট্রের নিউ জার্সি রাজ্যে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন।