দুপুর ঠিক ১১টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে কাঠফাঁটা রোদে হাতে একজোড়া ফুল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন বাংলার মহানায়ক নায়করাজ রাজ্জাককে শেষ দেখার জন্য ও শেষবারের মতো শ্রদ্ধা জানাতে। রোদের মাত্রা যত বাড়ছে রাজ্জাকের ভক্তদের লাইন তত দীর্ঘ হচ্ছে। ৬০ বছরের বৃদ্ধ থেকে শুরু করে ১০ বছরের ছোট্ট ভক্ত দাঁড়িয়ে আছে তাকে দেখার জন্য। সবার চোখে মুখে শুধু কষ্ট শুধু বেদনা। কেউ কেউ চোখের পানি মুছে নিচ্ছে আড়ালে।
ভক্তদের মুখ থেকে শুধু একটি কথাই উচ্চারিত হয়েছে, চলচ্চিত্রের পিতা নায়করাজ রাজ্জাক। তার সিনেমা দেখেই জীবনের অনেকটা সময় কাটিয়েছি। তার সিনেমায় নিজেকে খুঁজে পেয়েছি।
পাকিস্তান আমল থেকে রাজ্জাকের ছবি দেখা অধ্যক্ষ আজিজুর রহমান মিন্টু বলেন, ছোটবেলা থেকেই নায়করাজ রাজ্জাকের সিনেমা দেখে বড় হয়েছি। তিনি অনেক গুণে গুণান্বিত। এই গুণগুলো ছিলো বলেই তাকে আমরা এত ভালোবাসি। অন্তর থেকে তার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছে। তার মৃত্যুর খবর শুনেই রাতেই নফল নামাজ ও এক পারা কোরআন শরীফ পড়েছি। সেসময় নায়করাজ রাজ্জাকে অনুসরণ করে চলেছি। তিনি সবার কাছে নায়ক কিন্তু তিনি আমার কাছে জীবনের অণুপ্রেরণা।
রাজ্জাকের সিমেনা হয়তো হলে দেখা হয়নি তাতে কি, টেলিভিশনে দেখেই তার ভক্ত ২০ বছরের তরুণ বেলাল। রাজ্জাকের মৃত্যুর খবর শুনে কক্সবাজার থেকে ছুটে এসেছেন এক নজর দেখার জন্য।
লাইনে দাঁড়িয়ে খুব কষ্ট হচ্ছে এরপরও প্রিয় মানুষটিকে দেখে বাড়ি ফিরবেন ৬৬ বছরের আব্দুল। বলেন, রাজ্জাক অনেক ভালো লোক ছিলেন। তিনি ভারত থেকে বাংলাদেশে এসেছেন কিন্তু আর ফিরে যাননি। এদেশের মানুষকে ভালোবেসে এখানেই রয়ে গেছেন। এখানে অনেক কষ্ট করে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। অনেক কষ্টের বিনিময়ে তিনিই বাংলার মানুষের মনে জাগয়া করেছেন।
ষাট সত্তর দশকে রাজ্জাক কবরী সিনেমা দেখে প্রেম করা শিখেছেন লায়লা আক্তার। বলেন, তাদের মতো করে প্রেম করার অনেক সাধ ছিল, কিন্তু পারিনি। কিন্ত তাকে যে এভাবে ছেড়ে দিতে হবে, সেটি ভাবতে পারিনি।
চোখের অশ্রুজল দিয়ে রাজ্জাককে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে হালিমা বলেন, টিফিনের পয়সা জমিয়ে বলাকা সিনেমা হলে রাজ্জাকের ছবি দেখতে যেতাম। তার ছবি দেখার জন্য মায়ের কাছে প্রচুর বকা খেয়েছি কিন্তু তার ছবি দেখা ছাড়িনি। তিনি আমাদের হৃদয়ের নায়ক। তিনি মরেনি তিনি আমাদের হৃদয়ে বেঁচে আছেন।
ছবি: জাকির সবুজ