নারায়ণগঞ্জ শহরের বাবুরাইলে আলোচিত মা ও দুই শিশুসহ পাঁচ হত্যা মামলার রায়ে একমাত্র আসামি মাহফুজকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত।
সোমবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক বেগম হোসনে আরা আকতার এ রায় ঘোষণা করেন।
মামলার নথি থেকে জানা যায়, শহরের বাবুরাইল এলাকার ভাড়াটিয়া শফিকুল ইসলামের ছোট ভাইয়ের স্ত্রী লামিয়ার সঙ্গে তার ভাগ্নে মাহফুজের সম্পর্ক তৈরি হয়। বিষয়টি জানাজানি হলে মাহফুজকে জুতাপেটা করে মামা শফিকুল তার বাড়িতে আসা বন্ধ করে দেয়।
২০১৬ সালের ১৫ জানুয়ারি রাতে মাহফুজ গোপনে শফিকুলের বাবুরাইল এলাকার ভাড়া বাসায় ঢুকে খাটের নীচে লুকিয়ে থাকে। গভীর রাতে তাসলিমার ভাই মোশারফ বাথরুমে যাওয়ার সময় মাহফুজকে দেখতে পেয়ে রেগে যান। এসময় মাহফুজ ক্ষিপ্ত হয়ে মসলা বাটার পাথর দিয়ে মোশারফের মাথায় আঘাত করে হত্যা করে।
শব্দ শুনে তাসলিমা ঘুম থেকে উঠে এগিয়ে আসলে তাকেও মাহফুজ পাথর দিয়ে আঘাত করে হত্যা করে। তারপর তাসলিমার জা লামিয়া, মেয়ে সুমাইয়া ও ছেলে শান্তকে হত্যা করে মাহফুজ সকালে বাসা থেকে পালিয়ে যায় । সেসময় শফিকুল বাসায় ছিলেন না।
পরে ১৬ জানুয়ারি রাতে আত্মীয়স্বজন বেড়াতে এসে সাড়াশব্দ না পেয়ে প্রতিবেশীদের সহযোগীতায় তালা ভেঙ্গে বাসার ভেতরে প্রবেশ করে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা লাশ দেখতে পায়। পরে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে পাঁচটি লাশ উদ্ধার করে।
১৭ জানুয়ারি শফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে সদর থানায় মামলা করে। মামলাটি ওইদিন রাতেই জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কাছে হস্তান্তর করা হয়। মামলায় ভাগ্নে মাহফুজ, ঢাকা কলাবাগানের নাজমা ও শাহজাহানের নাম উল্লেখ করে সন্দেহজনক আসামি করা হয়। মাহফুজ ও নাজমাকে গ্রেফতার করা হলে ২১ জানুয়ারী মাহফুজ হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দী দেয়। তদন্ত শেষে ডিবি পুলিশ একমাত্র আসামি হিসেবে মাহফুজকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে।
দেড় বছরে ২৩ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ ও যুক্তি তর্ক শেষে গত ৩০ জুলাই আদালত ৭ আগস্ট রায়ের দিন ধার্য করেন। ধার্য তারিখ অনুযায়ী আলোচিত পাঁচ হত্যা মামলার রায়ে আদালত একমাত্র আসামি মাহফুজকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন।
এ রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্র পক্ষের আইনজীবী। দ্রুত রায় কার্যকরের দাবী জানান মামলার বাদী শফিকুল ইসলাম।
রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করবেন বলে জানিয়েছে আসামি পক্ষের আইনজীবীরা।