নামের শুরতে ‘মোহাম্মদ’ এবং শেষে ‘খান’ থাকায় আমেরিকার মুসলিমরা হেনস্থার শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। অনেকে অবশ্য বলছেন, আমেরিকায় দুস্কৃতিদের তালিকায় এরকম নামের লোকজনের আধিক্য বলেই এমনটি হচ্ছে।
শুধুমাত্র নামের কারণে বারবার হয়রানির শিকার হচ্ছেন বাংলাদেশ থেকে আমেরিকায় ইমিগ্রেশন নেয়া ঢাকার মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান খান (৫৮)। ২০১৪ সালে সপরিবার ইমিগ্রেশন নিয়ে বাংলাদেশ থেকে আমেরিকার নিউইয়র্ক আসেন তিনি। আমেরিকায় আসার পর আমেরিকার নিয়ম অনুযায়ী, লাস্ট (ফ্যামিলি) নেম- ইনিসিয়াল মিডল নেম- ফার্স্ট নেম এর চক্করে পড়ে মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান খান হয়ে যান- মোহাম্মদ এম খান।
ইমিগ্র্যান্ট হয়ে আমেরিকায় প্রথমবার ঢোকার সময় নিউ ইয়র্ক এয়ারপোর্টে ইমিগ্রেশন স্ত্রী-কন্যা-পুত্রকে সাধারণ সময়ে ছেড়ে দিলেও মোহাম্মদ খানকে সিকিউরিটি ক্লিয়ারেন্স এর নামে ৩ ঘণ্টা আটকে রাখা হয়।
একই ঘটনা ঘটে ২০১৫ সালে ঢাকা থেকে নিউ ইয়র্ক আসার সময়।
তবে এতদিন বিষয়টি শুধুমাত্র বসিয়ে রেখে বিলম্ব করার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও গত ১১ জুলাই কানাডা থেকে আমেরিকা আসার পথে আমেরিকার ইমিগ্রেশন পুলিশের হাতে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয় তাকে। পুরো পরিবার নিয়ে কানাডা যাওয়ার সময়ও তাকে বাড়তি জিজ্ঞাসাবাদ ও তল্লাশির মুখোমুখি হলেও সেটা ছিল সম্মানজনক।
কিন্তু গত ১১ জুলাই কানাডা থেকে নিউ ইয়র্ক আসার সময় তাদের গাড়ি আমেরিকার ইমিগ্রেশনে পৌঁছানোর পর পাসপোর্ট, গ্রিনকার্ড জমা নেয়ার ২/১ মিনিটের মধ্যেই হঠাৎ করে প্রায় ১০ জন পুলিশ গাড়িটিকে ঘিরে ফেলে এবং জিজ্ঞাসা করে- হু ইজ মোহাম্মদ খান?
উদ্ভূত ঘটনায় স্বভাবতই আতঙ্কজনক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। ইমিগ্রেশন পুলিশ মোহাম্মদ খানসহ সবাইকে হাত তোলা অবস্থায় গাড়ি থেকে নামিয়ে হাত পেছনে রেখে হাতকড়া পরিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে যায়। গাড়ি থেকে সবাইকে নামিয়ে দিয়ে গাড়ির নিয়ন্ত্রণও নিয়ে নেয় পুলিশ এবং গাড়িতে ব্যাপক তল্লাশি চালায়।
ঘটনার আকস্মিকতায় হত-বিহ্বল বাঙালী এই পরিবার খুবই অসহায়বোধ করে। তারা বলেন- যখন আমরা শুনলাম, পুলিশ মনিরুজ্জামানকে বলছে- ইউ আর আন্ডার অ্যারেস্ট; তখন খুবই বিস্মিত ও হতাশ হয়েছি। তারপর যখন হাতকড়া পরাতে দেখলাম তখন অপমানিতবোধ করেছি। কিন্তু ভয় পাইনি, কারণ আমরা জানি আমরা কোন অন্যায়ের সঙ্গে জড়িত নই।
আমেরিকার আইন অনুযায়ী এ ধরনের তল্লাশি কিংবা জিজ্ঞাসাবাদের সময় সন্দেহভাজন সদ্ব্যবহার পাওয়ার অধিকারী হলেও অনেকসময়ই তারা দুর্ব্যবহারের মুখোমুখি হচ্ছেন বলে অভিযোগ আছে। বিশেষ করে মুসলমান, মুসলমানের লেবাস-চেহারা এবং দক্ষিণ এশীয়দের ক্ষেত্রে এই ঘটনা বেশি ঘটছে বলেও অভিযোগ আছে অনেকের। অনেক সময় সিকিউরিটির নামে এই হয়রানি হাস্যকর অবস্থায় পৌঁছায়।
এর আগে ৬ মাসের এক শিশুকে সন্দেহভাজন টেরোরিস্ট হিসে ৩ ঘণ্টা আটকে রাখার ঘটনাও ঘটেছে। বলিউড তারকা শাহরুখ খানকেও দু’বার একই পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়েছে।
যাই হোক, অবশেষে চতুর্থবারের মতো ৩ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদের পর ছেড়ে দেয়া হয় সন্দেহভাজনের তালিকাভুক্ত ইউএস গ্রিনকার্ডধারী মোহাম্মদ খানকে, যিনি বাংলাদেশে মনিরুজ্জামান বা মনির নামে পরিচিত। বিদায় বেলায় ইমিগ্রেশন পুলিশ ঘটনার জন্য দুঃখও প্রকাশ করে।
মনিরুজ্জামান তার ফার্স্ট নেম আর লাস্ট নেমের গুরুত্বের কবলে পড়ে হয়রানির শিকার হয়েছেন। তিনি বলেন, এই হয়রানি ও হেনস্থা থেকে হয়তো আমার সহজে মুক্তি মিলবে না; এ থেকে পরিত্রাণের পথও জানা নেই।
‘কিন্তু মাঝে মাঝে সিকিউরিটির নামে হয়রানি যখন অপমানজনক পর্যায়ে পৌঁছায় তখন খুবই কষ্ট পাই। এতো হয়রানিই যদি পোহাতে হবে তাহলে গ্রিনকার্ড দেয়ার আগেই সেটা পরখ নেয়া উচিত ছিল,’ বলে মনে করেন তিনি।
বাংলাদেশী এই মুসলিম পরিবারটিসহ ইমিগ্রেন্ট বাংলাদেশীরা ইমিগ্রেন্ট এবং বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত নাগরিক হিসেবে অকারণ, অসম্মানজনক এই পরিস্থিতির অবসান চান।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)