মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও ফজিলতপূর্ণ মাস রমজান। প্রত্যেক মুসলমানই চেষ্টা করেন প্রতিটি রোজা রাখার। তারকারাও এর ব্যতিক্রম নন। শুটিংসহ অন্যান্য কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকার পাশাপাশি তারাও রোজা রাখার চেষ্টা করেন। চ্যানেল আই অনলাইনের পাঠকদের চিত্রনায়িকা শবনম বুবলী জানালেন তার শৈশবে রোজা রাখার অভিজ্ঞতা। সংবাদ পাঠিকা থেকে চিত্রতারকা বনে যাওয়া জনপ্রিয় এই নায়িকার কথাগুলো হুবহু তুলে ধরা হলো..
আমাদের পরিবার খুব রক্ষণশীল। নামাজ, রোজা অবশ্যই রাখতে হবে এমন একটা ব্যাপার। এমনও সময় গেছে নামাজ না পড়লে আব্বু খাবার টেবিলে বসতে দিতেন না। আমার আব্বু-আম্মু, বড় বোনেরা, ছোটভাই সহ কেউ কখনও কেউ নামাজ রোজা মিস দেয় না। আর আমাদের বাসায় এটা সবসময়ের চর্চা। যখন আমার বোনেরা দুলাভাইরা বাসায় আসে, তখন ঘন্টার পর ঘন্টা আব্বু আর বড় দুলাভাই মিলে হাদিস ও ধর্ম নিয়ে কথা বলেন। তারা এতো কিছু নিয়ে আলোচনা করেন যে, সেখান থেকে অনেক কিছু শেখা যায়।
আমার ছোটবেলায় রোজা তো অন্যরকম ছিল। ছোটোবেলা থেকেই আমার নামাজের প্রতি খুব আগ্রহ, তখন ভালো করে বুঝতামও না সবকিছু। বয়স বড়জোর তিন বছর! আম্মু আমাদের খুব ছোট বয়সে স্কুলে ভর্তি করেছিল। তাই খুব অল্প বয়সে পড়ালেখার প্রেসার শুরু হয়। আম্মু স্কুলে নিয়ে এসে স্কুলের পরিবেশের সাথে কেবল পরিচিত করছে। পাশাপাশি বাসায় নিয়মিত আরবি শেখানোর জন্য হুজুর আসতেন। কিন্তু আমি সর্বপ্রথম আরবি শেখা শুরু করি আমার নানুর কাছ থেকে। আমার নানীকে ‘নানু’ ডাকতাম আমরা। আর নানু আমাকে আদর করে সবসময় ‘বুবুমনি’ ডাকতেন।
নানু প্রায় আমাদের বাসায় বেড়াতে আসতেন। আম্মু যখন রান্না-বান্না আর আমার বড় বোনদের পড়ালেখা নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন, তখন নানুর সাথেই আমার সময় কাটতো বেশি। দেখতাম নানু কীভাবে নামাজ পড়তেন, রোজা রাখতেন, তসবিহ পড়তেন। আমাদের বাসায় তখন নামাজের জন্যই আলাদা একটা রুম ছিল। যেখানে জায়নামাজ, কোরআন শরীফ , নামাজ পড়ার জন্য আলাদা করে বানানো একটা চৌকি, নামাজ শিক্ষাবই সহ অনেক তসবিহ থাকতো ওই রুমটায়। প্রথম তিন বছর বয়স থেকেই নানুর সাথে নামাজে চুপ করে দাঁড়াতাম, কিছু বুঝি আর না বুঝি নানু যা করতো তাই করতাম। নানু আমাকে ছাড়া নামাজে দাঁড়ালে কান্নাকাটি করতাম।
তখন থেকেই খেয়াল করতাম রোজার সময় আলাদা একটা ব্যাপার। যখন আমার ৬ বছর তখন আম্মুকে বলতাম, সেহেরির সময় আমাকে ডাকতে। আমি রোজা রাখবো। আম্মু ভেবেছিল আমি হয়তো এমনি বলছি। তাই আমাকে ডাকেনি। যখন সকাল হলো আর আমি বুঝতে পারলাম আমাকে ডাকেনি। হায়রে আমার সেকি কান্না! তখন আম্মু বাধ্য হয়ে পরের দিন সেহরির সময় ডাকলো। তখনও আমার নানু ছিল। আম্মু আর নানু বললো, তুমি যদি সেহরির সময় খাও আবার দিনের বেলা সকালে, দুপুরে আর বিকেলে খাও তাহলে তোমার একসাথে তিনটা রোজা হবে।
আমি তো যেই কথা সেই কাজ। তিনবেলা খাওয়া তিনটা রোজা এমন করে বেশ কয়েকটা রোজা রেখেছিলাম। হাহাহা…! এসব স্মৃতি মনে হলে এখনও হাসি পায়। তারা এমন করেছিল কারণ ভেবেছে ওই বয়সে রোজা রাখলে অসুস্থ হয়ে যাবো। সাত বছর বয়সে আমি প্রথম রোজা রাখি। সে বার আমি চারটি রোজা রাখি। এভাবে আস্তে আস্তে রোজা রাখার সংখ্যা বাড়তে থাকে। এরপর বড় হবার পর থেকে সব রোজাই রাখার চেষ্টা করি। এমনকি শুটিং থাকলেও আমি কখনও রোজা ভাঙিনা। রোজা রেখেই শুটিং করি।