প্রায় ১০ বছর ধরে নাট্যাঙ্গনে কাজ করছেন বিপু পাল। এরমধ্যে অনিমেষ আইচের ‘গাধার পাল’ স্কুলে ফিল্ম মেকিংয়ের ছাত্র ছিলেন। ৮ বছর ধরে তিনি অমিত আশরাফ, মেজবাহ গালিব, রেজওয়ান শাহরিয়ার সুমিতসহ কয়েকজন নির্মাতার সহকারি (এডি) ও ফ্রিল্যান্সার এডি হিসেবে কাজ করেছেন।
২০১৯ সালে প্রথমবার দুটি নাটক নির্মাণ করেন। ওই বছরই শতাব্দী ওয়াদুদকে নিয়ে গোয়েন্দা গল্প অবলম্বনে ‘সন্ধ্যে রাতের অতিথি’ ও অ্যালেন শুভ্র ও তাসনোভা তিশাকে নিয়ে ‘টিউশনি’ নামের নাটকগুলো দুটি ভালো চ্যানেলে প্রচার হয়েছিল। ২০২০ সালে এসে কাজ করতে চাইলেও বাধা হয়ে দাঁড়ায় করোনা। বন্ধ হয়ে যায় সবকাজ। তখনই নির্মাতা বিপুর জীবনে নেমে আসে অন্ধকার।
চ্যানেল আই অনলাইনের সঙ্গে আলাপে বিপু পাল তার জীবনের সবচেয়ে কঠিন সময় ও সাফল্যের গল্প জানিয়ে বলেন, আমি একটু শিল্প সাহিত্য নির্ভর কাজ করতে পছন্দ করি। এজন্য হয়তো আমার কাজগুলো ভিউ কম। তাই কাজ করতে অসুবিধা হচ্ছিলো। আর করোনার প্রথম মাস বইপড়ে, সিনেমা দেখে কাটিয়েছি। যা সঞ্চয় ছিল ভেঙে খরচ করেছি। এরপর দিন যতই যেতে থাকে দেয়ালে পিঠ ঠেকে যায়।
‘খুবই ভয়াবহ অবস্থা গেছে। দোকানে বাকি করতে করতে দোকানদারও বাকি দেয়া বন্ধ করে দেয়। কাল কি খাব এই চিন্তা হতো। গালিব ভাইসহ অনেকেই সাহায্য করেছিল। কিন্তু মানুষের কাছ থেকে সাহায্য নিয়ে কতদিন চলা যায়!’
জানান, কী করবেন ভাবতে ভাবতেই চোখে সরিষার ফুল দেখতে থাকেন বিপু রায়! ঢাকা ছেড়ে গ্রামে ফিরে যাওয়ার কথাও ভেবেছেন একাধিকবার। ফেসবুক ঘাঁটতে ঘাঁটতে খেয়াল করেন ‘উইমেন এন্ড ই-কমার্স’ নামে একটি গ্রুপ। সেখানে পুরুষের চেয়ে মেয়েরাই বেশি উদ্যোক্তা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক ওই গ্রুপটি পরিচালনা করেন। তিনি সবসময় পরামর্শ দিতেন বিদেশি নয়, দেশি পণ্য নিয়ে কাজ করার। ওই গ্রুপের বিভিন্ন পোস্ট দেখে বিপুর মাথায় চিন্তা আসে তিনি বসে থাকবেন না। ইলিশ মাছ নিয়ে কাজ করবেন। রিসার্চ করে দেখলেন অরজিনাল ইলিশ লোকাল বাজারে বেশি পাওয়া যায় না। কীভাবে সতেজ মাছ মানুষের বাসায় পৌঁছে দেয়া যায় সেটা নিয়েও কাজ করেছেন তিনি।
এরপর সরাসরি চাঁদপুর গিয়ে ১৯ জুলাই থেকে ইলিশের ব্যবসা শুরু করেন বিপু। তার ভাষ্য, মাছ নিয়ে শিক্ষিত যুবকরা কাজ করতে চান না। এজন্যই আমি মাছের ব্যবসায় ঝুঁকেছি।নিজে চাঁদপুর গিয়ে জেলেদের সঙ্গে কথা বলে একেবারে ফ্রেশ মাছটাই কিনে আনি। ২০ হাজার টাকা পুঁজিতে ব্যবসা শুরু করি।
তিনি বলেন, আমার আর্থিক অবস্থা মোটেও ভালো ছিল না। এক বড় ভাইয়ের থেকে শেয়ারে টাকা নেই। মাত্র ১০ দিনের মাথায় ১ লাখ ১ হাজার ৬০০ টাকার মাছ বিক্রি করেছি। অনেক লাভ করেছি। একইসঙ্গে বড়ভাইয়ের টাকা শোধ করে এখন নিজেই ব্যবসা করছি।
বিপু পাল বলেন, ঘুরে দাঁড়ানোর পর আমি সফল কিনা জানিনা তবে মা ঠাকুরগাঁ-তে একা ছিল। ঈদের দিন মা ঢাকায় এসেছে। তাকে এখন আমি সঙ্গে করে রেখেছি। তিনি বলেন, মাথার মধ্যে ফিল্ম পোকা যেহেতু আছেই তাই এই কাজ ছাড়তে পারবো না। তবে ইলিশের ব্যবসা চালিয়ে যেতে চাই। ব্যবসায় স্বাবলম্বী হয়ে আবার ফিল্ম মেকিংয়ে ফিরতে চাই। তবে নাটক আগের মতো আর করা হবে কিনা জানিনা। মনোযোগ এখন ব্যবসায়র দিকে।