দুই দশক ধরে সুনামের সঙ্গে অভিনয় করছেন মনিরা মিঠু। চরিত্র বদলের প্রতিযোগিতায় তার তুলনা নেই! তাই সিনিয়র-জুনিয়র সকল নির্মাতাদের নাটকে কঠিন চরিত্রগুলো প্রাণবন্ত আর সহজ করে পর্দায় তুলে আনতে ভরসা পান মনিরা মিঠুতেই!
প্রয়াত নন্দিত কথা সাহিত্যিক ও নাট্যকার হুমায়ূন আহমেদের নাটকে অভিনয় করে পরিচিতি পাওয়া মিঠু ক্যারিয়ারে তুমুল জনপ্রিয় সময় পার করছেন। সম্প্রতি শেষ হওয়া ঈদ আয়োজনে কুড়িটির মতো নাটকে অভিনয় করেছেন। আলোচনায় এসেছেন বেশকিছু নাটকের জন্য।
২৪ ঘণ্টার মধ্যে বেশিরভাগ সময় লাইট ক্যামেরার ঝলকানিতে কাটে মনিরা মিঠুর। হয়তো এজন্য নাটকের ‘ক্লিন ইমেজ’র এ অভিনেত্রীর কর্মক্ষেত্রে কিছু সীমাবদ্ধতার মুখোমুখি হতে হয়। যেগুলো পরিবর্তন হওয়া অতি জরুরী বলে মনে করেন মনিরা মিঠু।
এই প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে জনপ্রিয় এই অভিনেত্রী জানালেন, বাংলা নাটক এমনিতেই সমৃদ্ধ। দারুণ দারুণ আইডিয়া আর গল্প নিয়ে প্রতিনিয়ত নাটক নির্মিত হচ্ছে। মেধাবী তরুণরা আসায় নাটকে আরো জৌলুস ফিরেছে, তবে নাটকে তিনটি জিনিসের পরিবর্তন প্রয়োজন। তারমতে, তিনটি জিনিসের পরিবর্তন হলে নিকট ভবিষ্যতে আরও সমৃদ্ধ হবে নাট্যাঙ্গন।
চ্যানেল আই অনলাইনকে মনিরা মিঠু প্রথমেই বাজেটের কথা উল্লেখ করলেন। তবে তিনি মনে করেন, ইতোমধ্যে বাজেটের সীমাবদ্ধতা পরিবর্তন হতে শুরু হয়েছে। মনিরা মিঠু যেমনটা বললেন, বর্তমানে বড় বাজেটে নাটক নির্মিত হচ্ছে। ফলে আমরা অনেকখানি শান্তিতে কাজ করতে পারছি। ‘২১ বছর পরে’ নাটকটির ভালো বাজেট ছিল। কিন্তু শিল্পীদের শিডিউল কম ছিল। সময়ের সঙ্গে এগিয়ে গিয়ে বাজেট বৃদ্ধির বিষয়টি আরেকটু বাড়ানো উচিত। আমার বিশ্বাস, আগামীতে হবে।
মনিরা মিঠু মনে করেন, নাটকে দ্বিতীয় যে বিষয়টি পরিবর্তন হওয়া উচিত তা হচ্ছে, শুটিংয়ের উপযুক্ত সময় নির্ধারণ। তার কথা, আট ঘণ্টা নাকি দশ ঘণ্টা কাজ করবো! সত্যি কথা বলতে, আমার চেয়েও যারা তরুণ আট ঘণ্টা কাজের পর তাদেরও মানসিক শক্তি, নতুন উদ্যোমে কাজের এনার্জি হারিয়ে যায়। আট ঘণ্টার শুটিংয়ের পর ইমোশনাল দৃশ্য হলে আরও বেশি সময় লাগে শেষ করতে, যদি পরিচালক ভালো হন তাহলে সময় আরও লাগে। শুটিং এর সময় ৮/১০ ঘণ্টা হওয়া উচিত। সেটা গড়ায় অনেক ক্ষেত্রে ১৮ ঘণ্টায়। এতে অভিনয়ের মান ঠিক থাকে না। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কর্মঘণ্টা যদি ১৮ ঘণ্টা হয়, তবে যেকোনো মানুষই শারীরিক মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়তে বাধ্য। স্বস্তি নিয়ে কাজ না করলে ভালো অভিনয় করাও সম্ভব হয় না। সকাল ১১ টায় শুটিং শুরু হয়ে রাত ১০টায় শেষ হবে- শুটিং সময় এমনটা নির্ধারণ করা উচিত।
নাটকে চলমান তৃতীয় যে সিস্টেমটির কারণে মারাত্মক অসুবিধার মুখোমুখি হচ্ছেন হুমায়ূন আহমেদের ‘চন্দ্রকথা’, ‘আমার আছে জল’ সিনেমার এই অভিনেত্রী তা হচ্ছে কস্টিউম (পোশাক)। মনিরা মিঠুর ভাষ্য, শুধু আমি নই, অনেক অভিনেত্রী কস্টিউম সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন। কস্টিউমের চিন্তায় অনেকটা ঘুম হারাম হয়। রাতে দেরি করে শুটিং শেষে বাসায় এসে পরদিনের কস্টিউম গোছাতে গিয়ে অনেকসময় ভোর হয়ে যায়।
মনিরা মিঠু যোগ করে বলেন, মেধা দিয়ে অভিনয় করতে হয়। এর সঙ্গে মেধা খাটিয়ে কস্টিউমও যোগাড় করতে হয়। অভিনয় করে রাতে বাসায় ফিরে পরের দিনের জন্য কস্টিউম নির্বাচন এটা অনেক কষ্টের কাজ। তাই প্রযোজক পরিচালকদের কস্টিউমের জন্য আলাদা বাজেট ও ডিজাইনার রাখা উচিত। আমরা শিল্পীরাও কস্টিউম রাখতে পারি। তবে সঠিক কস্টিউম সরবরাহের বিষয়টি প্রোডাকশন থেকে দেখভাল করা হলে আমাদের জন্য মারাত্মক উপকার হবে।