নদী দখল বা দূষণকে ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে গণ্য করে দখল ও দূষণকারীদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ এবং ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে অযোগ্য বলে হাইকোর্টের দেয়া ৩টি ‘নির্দেশনাকে’ এবার ‘মতামত’ করে দিয়ে রায় দিয়েছেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত।
এই রায়ের ফলে হাইকোর্টের দেয়া ওই ৩ টি নির্দেশনার বাধ্যবাধকতা রইল না উল্লেখ করে রিটের পক্ষের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ চ্যানেল আই অনলাইকে বলেছেন, ‘তবে যেহেতু আপিল বিভাগ মতামত হিসেবে রেখেছেন, সেহেতু সরকার যেন এই মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে আইন প্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেন।’
এর আগে তুরাগ নদ রক্ষায় মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের করা রিটের চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে গত বছর হাইকোর্ট নদীকে জীবন্ত সত্তা এবং লিগ্যাল পারসন ঘোষণা করে ১৭টি নির্দেশনা দিয়ে রায় দেন। হাইকোর্টের সে রায়ের বিরুদ্ধে নিশাত জুট মিলস কর্তৃপক্ষের করা আপিল নিষ্পত্তি করে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি রায় দেয় প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন চার বিচারপতির আপিল বেঞ্চ। পূর্ণাঙ্গ সে রায় সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে। যেখানে আগাম প্রতিরোধ নীতি এবং ক্ষতিপূরণ প্রদানের নীতিকে আইনের অংশ হিসেবে ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেয়া ৪ নম্বর নির্দেশনাটি বাতিল করা হয়েছে। আর হাইকোর্টের দেয়া ৭, ১৪ ও ১৫ নম্বর ‘নির্দেশনাকে’ ‘মতামত’ করে রায় দিয়েছেন সর্বোচ্চ আদালত। রায়ে বলা হয়েছে, ‘আইন প্রণয়ন করার সম্পূর্ণ এখতিয়ার জাতীয় সংসদের। আদালত সংসদকে আইন প্রণয়নের নির্দেশ দিতে পারে না। তবে কোনো আইন জনস্বার্থবিরোধী বা সংবিধান পরিপন্থি হলে তা বাতিল করতে পারে এবং কোনো আইন সংশোধনের জন্য আদালত কেবল মতামত দিতে পারে।
এর আগে গত বছর নদীকে জীবন্ত সত্তা ঘোষণা করে ১৭ টি নির্দেশনা দিয়ে রায় দেন হাইকোর্ট। সে রায়ে বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত সব নদ-নদীকে একই মর্যাদা দেয়া হয়। বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চের দেওয়া রায়ে বলা হয়, ‘নদীর বাঁচা-মরার ওপর বাংলাদেশের অস্তিত্ব জড়িত। বাঁচলে নদী বাঁচবে দেশ, বাঁচবে প্রিয় বাংলাদেশ।’
হাইকোর্টের রায়ে নির্দেশনায় নদী রক্ষা কমিশনকে তুরাগ নদসহ দেশের সব নদ-নদীর দূষণ ও দখলমুক্ত করে সুরক্ষা, সংরক্ষণ ও উন্নয়নের নিমিত্তে আইনগত অভিভাবক ঘোষণা করা হয়।