নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনে রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপের মধ্ যদিয়ে গত ১৮ ডিসেম্বর যে উদ্যোগের শুরু হয়েছিল তার পরিসমাপ্তি ঘটেছে নতুন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এবং অন্য চারজন কমিশনার নিয়োগের মাধ্যমে। সার্চ কমিটি প্রস্তাবিত নামের ভিত্তিতে সিইসি হিসেবে সাবেক সচিব কে এম নূরুল হুদাকে নিয়োগ দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি। একইসঙ্গে নির্বাচন কমিশনার হিসেবে সাবেক সচিব রফিকুল ইসলাম, সাবেক অতিরিক্ত সচিব মাহবুব তালুকদার, ব্রি. জে. (অব.) শাহাদৎ হোসেন চৌধুরী ও সাবেক জেলা ও দায়রা জজ কবিতা খানমকে নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ দেন। সিইসি হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পরেরদিন মঙ্গলবার সকালে উত্তরায় নিজের বাসায় আনুষ্ঠানিকভাবে সাংবাদিকদেরকে নুরুল হুদা বলেছেন, ‘সাংবিধানিক এ গুরুত্বপূর্ণ পদে তাকে নিয়োগ দেওয়ায় রাষ্ট্রপতির কাছে তিনি কৃতজ্ঞ। সাংবিধানিক দায়িত্বটি তিনি নিরপেক্ষভাবে সংবিধান ও আইন মেনে পালন করবেন। তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে আরো বলেন, ‘আমি সরকারি চাকরিতে থাকার সময় কোন অনিয়মের সঙ্গে আপস করিনি, ইসির দায়িত্বেও তা করবো না।’ তার ভাষায় কঠিন এ দায়িত্ব পালনে দীর্ঘদিন সিভিল সার্ভিসে নিজের চাকরির অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাবেন। এজন্য তিনি সবার সহযোগিতা চেয়েছেন। বাংলাদেশে নির্বাচন কমিশনের অতীত অভিজ্ঞতা থেকে আমরা নিশ্চিত করেই বলতে পারি নতুন সিইসির আগামী দিনগুলোর পথচলা খুব একটা সহজ হবে না। বিশেষ করে যখন দেশের অন্যতম বড় একটি দলের দশম জাতীয় নির্বাচন বর্জনের নজির সামনে থাকে। এই অবস্থায় তার সবচেয়ে বড় কাজ হবে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি ও তাদের সমমনাদলগুলোর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা। যদিও এজন্য নতুন নির্বাচন কমিশন প্রায় দুই বছর সময় পাবে। কিন্তু এই সময়ের মধ্যে নির্বাচন বর্জন করা দলগুলোর কাছে আস্থা ও বিশ্বাসের প্রমাণ দিতে হবে নতুন সিইসিকে। এক্ষেত্রে তাদেরকে আগামী মাসেই বড় একটা পরীক্ষা দিতে হবে গাইবান্ধায়। আততায়ীর গুলিতে সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনের মৃত্যুতে শূন্য হওয়া গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনের উপ-নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। ২২ মার্চ সেখানে নির্বাচন হবে। এরপর সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত’র মৃত্যুতে শূন্য হওয়া আসনেও নির্বাচন হবে। আমরা জানি, নতুন এ কমিশনকে নানা দিক থেকে সমালোচনা ও বিরোধিতার মুখোমুখি হতে হবে। এদেশে সেটাই স্বাভাবিক, এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। তবে সেটা মিথ্যা প্রমাণ করতে কমিশনকে তার কাজ নিরপেক্ষভাবে করে যেতে হবে। এতে জনগণও তাদের প্রতি আস্থা রাখবে। আর জনগণের আস্থা অর্জনই নির্বাচন কমিশনের বড় অর্জন। আমরা চাই নতুন সিইসির আজকের কথাগুলোর সঙ্গে তার মেয়াদের শেষ দিনটি পর্যন্ত করা কাজের যেন মিল থাকে। আমরা মনে করি, সেটাই হবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে তার ঐতিহাসিক সাফল্য যদি তিনি সেটা করে দেখাতে পারেন। আপাততঃ সেজন্য আমরা অপেক্ষার পক্ষে।