চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

নতুন বছরকে কেমন দেখতে চান ব্যবসায়ীরা?

২০১৭ সালে অনেক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ও অগ্রগতির পাশাপাশি দেশের ব্যাংক খাতে মালিকানা পরিবর্তন, খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি, আর্থিক খাতে বিশৃঙ্খলা, জঙ্গি দমনে অভিযান, বন্যা ও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশসহ নানা সমস্যা ছিল বছরজুড়ে।

অবকাঠামোর উন্নয়ন, ঋণের সুদের হার হাতের নাগালে আসা এবং সহায়ক মুদ্রানীতি প্রণয়নের পরও বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ মন্দায় কেটেছে বিদায়ী বছর।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, ব্যাংক খাতের চলমান অস্থিরতা রোধ করতে ব্যর্থ হচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতে উদ্বিগ্নতা বাড়ছে। এখাতে শৃঙ্খল ফেরাতে সঠিক আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন দরকার।

পাশাপাশি নতুন বছর যেহেতু নির্বাচনের বছর। তাই ব্যবসায়ীরা যেন নির্বিঘ্নে ব্যবসা করতে পারে সেই পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে সরকারকে।

এসব বিষয়ে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, দেশে যখন উন্নয়ন হচ্ছে ঠিক তখনি ব্যাংক খাতে লুটপাট চলছে। আর এতে মানুষের মধ্যে এক ধরনের অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। পিছিয়ে যাচ্ছে অর্থনীতি। তাই নতুন বছরে অন্তত আর্থিক খাতে শৃঙ্খা ফিরে আসুক তা ব্যবসায়ীরা প্রত্যাশা করে।

বিদায়ী বছরের পুনরাবৃত্তি দেখতে চান না জানিয়ে এফবিসিসিআইর সাবেক এই সহসভাপতি বলেন, এখন দেশ এগিয়ে যাওয়ার সময়। তাই কোনো ভাবেই ব্যাংকিং খাতে অস্থিরতা বা বিশৃঙ্খলা হতে দেয়া যাবে না। দেশের বাইরে যেন অর্থপাচার না হতে পারে সে দিকে সূক্ষ্ম নজর রাখতে হবে। ইতোমধ্যে যেসব অর্থ দেশের বাইরে পাচার হয়ে গেছে তা ফেরত আনার ব্যবস্থা নেয়ার পাশাপাশি নিশ্চিত করতে হবে অর্থপাচারকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি।

বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ হচ্ছে না মন্তব্য করে হেলাল উদ্দিন বলেন, দেশে বিনিয়োগ করার যথেষ্ঠ সুযোগ রয়েছে। কিন্তু বিনিয়োগ হচ্ছে না। সরকারি পর্যায়ে কিছু বিনিয়োগ হলেও বেসরকারি খাতে তা নাই বললেই চলে। এই অবস্থা চলতে থাকলে দেশকে চরম মূল্য দিতে হবে। এমনকি উন্নত দেশে পৌঁছানোর যে লক্ষ্য রয়েছে সেক্ষেত্রেও হোঁচট খেতে পারে। তাই এই বিষয়ে উদ্যোগ নেয়া জরুরী।

নতুন বছরসহ ভবিষ্যতকে সংকটময় সময় হিসাবে মনে করেন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই’র সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন।

তিনি চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, বিশ্বব্যাপী যেমন, দক্ষিণ কোরিয়া, সিরিয়া, ইরাক ও সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশে একটা যুদ্ধ যুদ্ধ ভাব। এটা একটা সংকটময় সময়। তবু বাংলাদেশ গত বছর ৬ দশমিক ২৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এবার আমাদের লক্ষ্যমাত্রা ৬ দশমিক ৪০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করা। সে লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে হবে।

শীর্ষ এই ব্যবসায়ী নেতা বলেন, বর্তমানে দেশের অবকাঠামোর উন্নয়ন ও অনেক মেগা প্রকল্পের কাজ চলমান। এটা ভাল দিক। তবে বিদায়ী বছরে অনেক চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে। যেমন, হাওরে অকাল বন্যায় ফসলের ক্ষতি, লাখ লাখ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়া ইত্যাদি। নতুন বছরে এসব মোকাবেলায় প্রস্তুত থাকতে হবে।

তবে নতুন বছরে কিছুটা আশার আলোও দেখছেন শফিউল। আর তাই জানালেন, গেল বছর মুদ্রাস্ফীতি কিছুটা বেড়েছিল। এটা শিগগিরই কেটে যাবে। কারণ বিনিয়োগ বাড়া শুরু হয়েছে, রেমিটেন্সও বাড়ছে। চ্যালেঞ্জ থাকবেই তা মোকাবিলা করে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।

ব্যবসা খাতের উন্নয়নে সরকারকে পরামর্শ দিয়ে এফবিসিসিআইর সভাপতি বলেন, ই-বিজনেস আরো সহজ করা দরকার, বিদ্যুৎ ও অবকাঠামোর উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে হবে। তাহলে ব্যবসায় গতি আসবে। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর পাশাপাশি নতুন নতুন ব্যবসা ক্ষেত্র এবং ধারণা উদ্ভাবন করতে হবে।

নতুন বছরে কোনোভাবেই রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখতে চান না তৈরি পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা।

তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, নতুন বছরে যেন কেনো ধরনের রাজনৈতিক অস্থিরতা না থাকে, যাতে আমরা শান্তিতে ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পারি-এটা আমাদের একান্ত প্রত্যাশা। পাশাপাশি বিনিয়োগ বাড়ুক, নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হোক। সার্বিকভাবে মানুষ উপকৃত হোক এটাই চাই আমরা।

তৈরি পোশাক খাত সম্পর্কে তিনি বলেন, গত ৫ এ খাতে প্রবৃদ্ধি ছিল ৬ শতাংশ। নতুন বছরে এই প্রবৃদ্ধি আরো বাড়ানোর প্রত্যাশা। সেজন্য দরকার স্থিতিশীল অবস্থা। আর তা নিশ্চিত করতে হবে সরকারকে।