ধীরগতিতে চলছে রোহিঙ্গাদের বায়োমেট্রিক নিবন্ধন কার্যক্রম। কারিগরি নানা জটিলতায় পর্যাপ্ত কেন্দ্র খোলা যায়নি। ফলে সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নিবন্ধনের অপেক্ষায় থাকা রোহিঙ্গাদের ভোগান্তিও বাড়ছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, গত ৩ দিনে মাত্র ২ হাজার রোহিঙ্গার নিবন্ধন সম্পন্ন করা গেছে। উখিয়া এবং টেকনাফে বেশ কয়েকটি কেন্দ্র খোলার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত কুতুপালং এবং নয়াপাড়া এ দুটি কেন্দ্রেই বায়োমেট্রিক নিবন্ধন কার্যক্রম চলছে।
এছাড়া ধীরগতির কারণে নিবন্ধনের জন্য ঘন্টার পর ঘন্টা লম্বা লাইনে বসে অপেক্ষা করতে হচ্ছে নতুন রোহিঙ্গাদের। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের প্রয়োজনেই দ্রুত নিবন্ধন কার্যক্রম শেষ করতে হবে। তা না হলে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়তে পারে রোহিঙ্গারা। যার প্রভাব হবে সূদুরপ্রসারী।
গত ৩ সপ্তাহ ধরে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ অব্যাহত আছে। জাতিসংঘের হিসেবে এখন পর্যন্ত নতুন আসা রোহিঙ্গার সংখ্যা প্রায় ৪ লাখ। এ রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতে হলে এদের সংখ্যা নির্দিষ্ট থাকা উচিত। এ চিন্তা থেকে রোহিঙ্গাদের সংখ্যা নির্দিষ্ট করতে তাদের বায়েমেট্রিক নিবন্ধনের ঘোষণা দেয় সরকার।
অন্যদিকে ১৮ থেকে ২২ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে রোহিঙ্গা ইস্যুই হবে অন্যতম আলোচ্যসূচি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও ওই অধিবেশনে বক্তৃতা করবেন। সেখানে মিয়ানমারকে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে কিভাবে চাপ সৃস্টি করা যায় তা নিয়ে কূটনৈতিক আলোচনা চলছে।
ইতোমধ্যে মিয়ানমারে জাতিগত নিধনের শিকার হয়ে পালিয়ে আসা বিশাল রোহিঙ্গা জনস্রোত সামলানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশের মানবিক পদক্ষপের প্রশংসা করে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট একটি প্রস্তাব গ্রহণ করেছে। এছাড়া ইইউভুক্ত দেশগুলোর প্রতি মিয়ানমারের ওপর অবরোধ আরোপের বিষয় বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছে তারা।
ব্রাসেলসে অনুষ্ঠিত ইইউ পার্লামেন্ট অধিবেশনের প্রস্তাবে বলা হয়, ইউরোপীয় পার্লামেন্ট এই মানবিক বিপর্যয়ের মুখে কয়েক লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীর সুরক্ষা নিশ্চিতে বাংলাদেশের প্রচেষ্টার স্বীকৃতি দিচ্ছে। পাশাপাশি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর চালানো হত্যা, নির্যাতন, ধর্ষণ এবং তাদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়া দ্রুত বন্ধে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রস্তাবে সামরিক ও নিরাপত্তা বাহিনীর প্রতি জোরালো আহ্বান জানানো হয়।মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সঙ্গে সেনাবাহিনীর বহুদিন ধরে চলমান সংঘর্ষ-সহিংসতা সঙ্কট সমাধানে ২০১৬ সালের আগস্টে গঠিত হয় অ্যাডভাইজরি কমিশন অন রাখাইন স্টেট। জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের নেতৃত্বে ওই কমিশন এক বছরের তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন দলের প্রধান অং সান সু চির কাছে জমা দেয় চলতি বছরের ২৪ আগস্ট।
৬৩ পৃষ্ঠার এই প্রতিবেদন জমা দেয়ার কয়েক ঘণ্টা পরই ২৪ আগস্ট দিবাগত রাতে ত্রিশটি পুলিশ ও সেনাচৌকিতে রহস্যজনক হামলার ঘটনা ঘটে। হামলায় নিহত হয় নিরাপত্তা বাহিনীর ১২ সদস্য। তারপরই হামলার জন্য রোহিঙ্গা ‘জঙ্গি’দের দায়ী করে জবাব হিসেবে সেনাবাহিনী পুরো অঞ্চলে হত্যাযজ্ঞ শুরু করে।
সেনাবাহিনীর ওই হামলায় এখনও পর্যন্ত প্রায় ৫শ’ মানুষ মারা গেছে, আর প্রাণভয়ে লাখ লাখ রোহিঙ্গা সীমান্ত পেরিয়ে পাড়ি জমাচ্ছে বাংলাদেশে। নৌপথে পালিয়ে আসার পথে নৌকাডুবিতেও বাড়ছে মৃতের সংখ্যা।
আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, আনান কমিশনের রিপোর্ট বাস্তবায়ন না করার উদ্দেশ্যেই মিয়ানমারের সেনাবাহিনী এই হত্যাকাণ্ড শুরু করে।