অপরিচিত গোলাপি বলে প্রথমে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন অধিনায়ক মুমিনুল হক। পরের ফলাফল, প্রথম ইনিংসে অলআউট ১০৬ রানে। বাংলাদেশ দলের এমন সিদ্ধান্তে বেশ অবাক হয়েছেন নাজমুল হাসান পাপন। ইডেন টেস্টের দ্বিতীয় দিনের খেলা শেষে সংবাদ মাধ্যমকে বিসিবি প্রধান জানালেন, তার সঙ্গে অধিনায়ক ও কোচের নেয়া সিদ্ধান্ত ছিল ভিন্ন!
ইন্দোর টেস্টেও টস জিতে প্রথমে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন মুমিনুল। সেই টেস্টে প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ অলআউট হয়েছিল ১৫০ রানে। ম্যাচ হেরেছিল ইনিংস ও ১৩০ রানে। একসঙ্গে বসে তাই অধিনায়ক, কোচ ও বোর্ড প্রধানের সিদ্ধান্ত ছিল ইডেনে ফিল্ডিং নেয়ার। টসে গিয়ে সিদ্ধান্ত পাল্টে যাওয়ায় বেশ অবাক হয়েছেন নাজমুল হাসান।
‘প্রথমে ব্যাটিং নেয়ায় সত্যি আশ্চর্য হয়েছি। ম্যাচের আগেরদিন আমি দলের সঙ্গে বসেছি। অধিনায়ক-কোচ দুজনেই বলেছিল যে টসে জিতলে প্রথমে ফিল্ডিং নেবো। তখন তাদের কথা শুনে মনে হয়েছে এখানে চিন্তার কী আছে?’
‘টসে গিয়ে যখন দেখেছি আমরা ব্যাটিং নিয়েছি, প্রথম ধাক্কাটা আসলে তখনই খেয়েছি আমি। তখনই মনে হয়েছে দল আসলে বেশি আত্মবিশ্বাসী। ভারতের যতজনের সঙ্গে আমি কথা বলেছি, সবাই বলেছে তারা টসে জিতলে ফিল্ডিংই নিতো। ওরা কখনোই ব্যাটিং নিতো না কারণ একদম নতুন পিচ এবং এই গোলাপি বল, কেমন আচরণ করছে না জেনেশুনে ওরা ব্যাটিং নিতো না।’
পুরো সিরিজজুড়ে এক মুশফিকুর রহিম ছাড়া ব্যর্থ অধিনায়ক মুমিনুল, ইমরুল কায়েসের মতো অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যানরা। তাদের কাছে প্রত্যাশা পূরণ হয়নি বলেও জানালেন বোর্ড প্রধান, ‘আমাদের যারা সিনিয়র খেলোয়াড় ছিল, তাদের কাছে আমাদের ধারণা ছিল যে প্রতিপক্ষ যত ভালো বলই করুক, ওরা তো ভালো বল খেলে এসেছে অতীতে। তাদের কাছে যে প্রত্যাশাটা ছিল তার কিছুই পূরণ হয়নি।’
‘আমাদের প্রথম ইনিংস তো খুবই খারাপ ছিল, দ্বিতীয় ইনিংসের শুরুটাও ভালো হয়নি। দলে যাদের আমরা সিনিয়র বলি- ইমরুল, মুমিনুল, মুশফিক, মাহমুদউল্লাহ, এই চারজন। মুশফিক-মাহমুদউল্লাহ দ্বিতীয় ইনিংসে ভালোই খেলছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত মাহমুদউল্লাহ চোটের কারণে এখন মাঠের বাইরে। তার চোট বেশ গুরুতর। আশা করি দ্রুত সুস্থ হয়ে গেলে হয়তো তৃতীয় দিন মাঠে নামবে সে।’
ইডেন টেস্টের প্রথমদিনেই পরপর মাথার আঘাতে মাঠ ছেড়েছেন লিটন দাস ও নাঈম হাসান। লিটনের জায়গায় কনকাশন বদলি হিসেবে ব্যাট হাতে নামেন মেহেদী হাসান মিরাজ। যিনি মূলত বোলিং অলরাউন্ডার। আর নাঈমের জায়গায় নামেন তাইজুল ইসলাম।
পরপর দুজন বদল করায় বাংলাদেশ দলে এখন অতিরিক্ত খেলোয়াড়ের সংকট। এ কারণে ইমার্জিং কাপের ফাইনাল শেষেই কলকাতায় উড়াল দিয়েছেন ব্যাটসম্যান নাজমুল হোসেন শান্ত। এভাবে খেলোয়াড় সংকট তৈরি হওয়ায় বেশ সমালোচনা হচ্ছে দলীয় পরিকল্পনাকে ঘিরে।
সমালোচনার জবাব দিয়েছেন নাজমুল হাসান, ‘বাংলাদেশের দুটো দল খেলছিল। যেহেতু আজ(শনিবার) ইমার্জিং কাপের ফাইনাল চলছিল, তাই তখন সেখান থেকে কাউকে আনতে চাইনি। আমাদের ব্যাকআপ খেলোয়াড় ছিল। থাকলে কী ওরা দলে সুযোগ পেত। আমার ধারণা সেরা একাদশে যারা সুযোগ পেয়েছে তারাই খেলত। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত কনকাশনের জন্য যে দুজন বদল করতে হবে তাতো আমরা চিন্তা করিনি। সেরকমটা হলে অনেক লম্বা এক দল বানাতে হবে।’
টেস্ট দলের বর্তমান খেলোয়াড়দের অস্থির আখ্যা দিয়ে মানসিকতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন বোর্ড প্রধান, ‘১২-১৩টা খেলোয়াড়ই ঘুরে ফিরে খেলছে তিন ফরম্যাটে। মাত্রই টি-টুয়েন্টি খেলে টেস্ট খেলতে হলে যে মানসিকতা দরকার হয়, আমি মনে করি তারা সেটা ধরে রাখতে পারে না। বিশেষ করে অস্থির প্রকৃতির একটু। এই পাঁচদিনের খেলা, ধৈর্য ধরে খেলতে হবে, এর সঙ্গে আকাশ-পাতাল পার্থক্য। তারা বেশিরভাগ যে শটগুলো খেলতে যায় তার কোনো দরকারই নেই।’
টেস্ট মানসিকতা ধরে রাখার জন্য বাড়তি কয়েকজন টেস্ট বিশেষজ্ঞ ব্যাটসম্যানকেও দলে আনা হবে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন নাজমুল হাসান। খেলোয়াড়দের মানসিকতা বদলের আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি।