ধর্ষণ যে ইতোমধ্যে মহামারী আকার ধারণ করেছে তা নিয়ে কোনো ধরনের সন্দেহ নেই। শঙ্কার বিষয় হচ্ছে ধর্ষণের হার ক্রমেই বাড়ছে। এমন অবস্থায় জনমত যখন ধর্ষকের কঠোর ও প্রকাশ্য শাস্তির দিকে, তখন ধর্ষণ কমাতে কিছু পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
চ্যানেল আই অনলাইনে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশে এই বিষয়ে কঠোর আইন আছে। কিন্তু ধর্ষণকারীরা আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে ঠিকই কিন্তু বেরিয়ে যাচ্ছে। ফলে সুস্থ প্রতিকার দেখতে পাচ্ছি না আমরা।
ধর্ষণের বেশিরভাগ ঘটনাই ধামাচাপা পড়ে যায় বলে জানিয়েছেন তারা। তাদের মতে, যারা আইনটিকে প্রয়োগ করবেন তারাও অনেক সময় ধর্ষণের মামলাগুলো নিয়ে কিভাবে কাজ করবেন সেই বিষয়ে ধারণা রাখেন না। রিপোর্ট দিতেও বেশ গড়িমসি করা হয় আর রাজনৈতিক প্রভাব থাকলে তাৎক্ষণিক আলামত সংগ্রহ কঠিন হয়ে পড়ে। আবার দেখা যায় যারা ধর্ষণের শিকার হচ্ছে তাদের বেশিরভাগই ক্ষমতাহীন শ্রেণীর মেয়ে। ফলে তারা আক্রান্ত ও ভুক্তভোগী হচ্ছে বেশি।
বিশেষজ্ঞদের এ অভিমতের সাথে দ্বিমত পোষণ করার কোনো সুযোগ নেই। আমরা ইতোমধ্যে লক্ষ্য করেছি যে, অন্যায়কারীরা এখন দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠছে। এমনকি তারা অন্যায় করে ফেসবুকে লাইভ দিচ্ছে এমন ঘটনাও ঘটেছে।
এমন সামাজিক অবক্ষয় রোধে কিশোর ও তরুণদের পারিবারিক শিক্ষা এবং নিয়ন্ত্রণের বিকল্প নেই। সবার হাতে হাতে থাকা স্মার্ট ফোন ও ইন্টারনেটের সদ্ব্যবহার করতে হবে। ইন্টারনেটের ক্ষতিকর কোনো কন্টেন্ট যেন তাদের কাছে না পৌঁছায়। এছাড়া ধর্ষণবিরোধী সামাজিক প্রচারণা বাড়াতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ও সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সাদেকা হালিম এ বিষয়ে একটি উদাহরণ দিয়েছেন। তিনি বলেন: এসব অপরাধীদের অনেককে পিটিয়ে মারা হয়েছে, এখন বলা হচ্ছে যাবৎজীবন হলে হবে না, মৃত্যুদণ্ড দিতে হবে। কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশে তো মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। সেখানে কি এসব অন্যায় কমেছে? হয়তো সাময়িকভাবে প্রশমিত হতে পারে। তবে এর সঙ্গে আরো অনেক বিষয় জড়িত।
এটা ঠিক যে, একমাত্র কঠোর শাস্তি কোনো অপরাধকে নির্মূল করতে পারে না। কঠোর শাস্তির পাশাপাশি বেকার যুবক, স্কুল কলেজ ফাঁকি দেওয়া কিশোর বা পরিবারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়া সন্তান তাদের অবাধে মাদক সেবন, স্মার্টফোনের ব্যবহার কমাতে দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। আমাদের সন্তানদের সামাজিকতা ও মূল্যবোধ শেখাতে হবে। তা না হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারপারসন অধ্যাপক মাহফুজা খানমের সঙ্গে একমত পোষণ করে আমরা বলতে চাই, কঠোর শাস্তির পাশাপাশি আমাদের নিয়ম অনুযায়ী বিচারের দিকে নজর দিতে হবে। আমাদের দেশে একটা অন্যায় করলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিচারের সংস্কৃতি দেখা যায় না। এই বিচারহীনতা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। তারা যখন দেখবে অপরাধ করলে পার পাওয়ার সুযোগ নেই। তখন তা থেকে বেরিয়ে আসবে। এছাড়া ধর্ষণসহ নানাবিধ অপরাধ কমাতে দীর্ঘসূত্রতা ছেড়ে তাৎক্ষণিক বিচার নিশ্চিত করতে আমরা সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।