বরিশালের বাকেরগঞ্জে এক শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে অপর চার শিশুর বিরুদ্ধে করা মামলার কার্যক্রম স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট।
ওই শিশুদের বিরুদ্ধে হওয়া মামলার প্রেক্ষাপটে হাইকোর্টের জারি করা রুল নিস্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত এই স্থগিতদেশ দেয়া হয়ছে। সেই সাথে ওই শিশুদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাকেরগঞ্জের ওসির প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
রোববার বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মহি উদ্দিন শামীমের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
এর আগে হাইকোর্টের দেওয়া আদেশ অনুযায়ী রোববার ওই চার শিশু ও তাদের অভিভাবককে নিয়ে আদালতে উপস্থিত হন বাকেরগঞ্জের ওসি ও থানার শিশু বিষয়ক পুলিশ কর্মকর্তা। এছাড়া হাইকোর্টের আদেশে হাজির হন চার শিশুকে যশোর কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এনায়েতউল্লাহ ও বরিশালের প্রবেশন কর্মকর্তা। একপর্যায়ে খাস কামরায় নিয়ে শিশুদের কথা শুনেন আদালত। এরপর আদালত কক্ষে একে একে বক্তব্য শুনেন শিশুদের অভিভাবক, বাকেরগঞ্জের ওসি, শিশু বিষয়ক পুলিশ কর্মকর্তা, বরিশালের প্রবেশন কর্মকর্তা ও সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের। শিশুদের বিচারের এখতিয়ার না থাকার পরেও চার শিশুর বিষয়ে আদেশ দেওয়ায় হাইকোর্টের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চান জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট। এরপর আদালত শিশুদের বিরুদ্ধে হওয়া মামলার কার্যক্রম স্থগিত করে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের নির্দেশ দিয়ে সার্বিক বিষয়ে আদেশের জন্য ২২ নভেম্বর দিন ধার্য করেন। এসময় আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নওরোজ রাসেল চৌধুরী।
এর আগে ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেপ্তারের পর যশোর কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো চার শিশুকে নিয়ে গণমাধ্যমে প্রচারিত সংবাদ দেখে গত বৃহস্পতিবার রাতে হাইকোর্টের এই বেঞ্চ আদেশ দেন। ওইদিন হাইকোর্ট যশোরের জেলা প্রশাসককে পুলেরহাট শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র হতে ওই শিশুদেরকে সে রাতের মধ্যেই শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত মাইক্রোবাসে করে অভিভাবকের কাছে পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন। সেই সাথে চার শিশুকে তাদের অভিভাবকের কাছে পৌঁছে দিয়ে শুক্রবার সকাল ১০টার মধ্যে আদেশ প্রতিপালনের বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টের স্পেশাল অফিসারকে অবহিত করতে বাকেরগঞ্জের ওসির প্রতি নির্দেশ দেয়া হয়।
এছাড়া চার শিশুকে তাদের অভিভাবকসহ ১১ অক্টোবর সকাল সাড়ে ১১ টায় হাইকোর্টে উপস্থিত হতে বাকেরগঞ্জের ওসিকে নির্দেশ দেওয়া হয়। সেই সাথে থানার শিশু বিষয়ক পুলিশ কর্মকর্তা, বরিশালের প্রবেশন কর্মকর্তা ও সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে একই দিন আদালতে হাজির হতে বলা হয়।
বৃহস্পতিবার রাতে দেয়া হাইকোর্টের ওই আদেশ অনুযায়ী শুক্রবার সকালে বাকেরগঞ্জের ওসি সুপ্রিম কোর্টের স্পেশাল অফিসার মোহাম্মদ সাইফুর রহমানকে টেলিফোনে জানান, ‘যশোরের পুলেরহাট শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র থেকে ৪ শিশুকে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত মাইক্রোবাসে করে তাদের অভিভাবকের কাছে পৌঁছে দেয়া হয়েছে।’
গত ৬ অক্টোবর বাকেরগঞ্জে ছয় বছর বয়সী এক শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে তার বাবা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন। ওই মামলার অভিযোগে বলা হয়, আসামিরা ভিকটিম শিশুটির খেলার সাথী। ৪ অক্টোবর বিকেলে বাগানে খেলার সময় তাকে তিন আসামির সহযোগিতায় এক আসামি ধর্ষণ করে। আসামিদের একজনের বয়স ১১ ও বাকি তিন জনের বয়স ১০ বছর দেখানো হয় মামলায়। পরবর্তীতে ৭ অক্টোবর বিকেলে ৪ শিশুকে বাকেরগঞ্জের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সোপর্দ করে পুলিশ। এরপর বিচারক চার শিশুকে যশোর কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানোর নির্দেশ দেন।