ধর্মভীরু স্বল্প শিক্ষিতদেরকে উস্কে দিয়ে নিজেদের উদ্দেশ্যপূরণ করতে সামাজিক মাধ্যমে ছড়ানো হচ্ছে ভুয়া খবর। প্রযুক্তি যুগের এই অভিশাপে এবার জর্জরিত হলো ইন্দোনেশিয়া। ভুয়া ও বানোয়াট খবরের শিকার হচ্ছেন মুসলিমপ্রধান দেশটির রাজধানী জাকার্তার গভর্নর নির্বাচনে খ্রিস্টান প্রার্থী বাসুকি জাহাজা পুরনামা। ‘আহক’ নামেই তিনি সুপরিচিত।
জনপ্রিয় এই প্রার্থীর সম্ভাব্য বিজয় ঠেকাতে মরিয়া হয়ে সামাজিক মাধ্যমে তার বিরুদ্ধে পরিকল্পিত প্রচারণা চালাচ্ছে আহক বিরোধীরা। ২০১৬ সালে তার বিরুদ্ধে আনা ধর্মঅবমাননার অভিযোগেও কাজ হয়নি। তাই এবার কয়েক হাজার ভুয়া সংবাদের লিংক ছড়িয়ে একের পর এক মিথ্যা-বিভ্রান্তির জাল বিছানো চলছে তার বিরুদ্ধে। প্রচার করা হচ্ছে তিনি গভর্নর হলে সব কিছুতে খ্রিস্টানীকরণ হবে। এমনকি সম্প্রতি উদ্বোধন হওয়া জাকার্তার একটি মসজিদের ডিজাইনের সঙ্গে নাকি খ্রিস্টানদের ক্রুস চিহ্নের মিল খুঁজে পেয়েছে এই গোষ্ঠীটি।
অথচ জার্কাতার ১৭ তম গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব পালন করা পুরনামার ডেপুটি গর্ভনর ছিলেন মুসলিম। মুসলিমদের সঙ্গে ভাতৃত্বের প্রকাশে তিনি আন্তরিকতা দেখিয়ে আসছেন। সম্প্রতি ইন্দোনেশিয়ায় সফর করা সৌদি বাদশা সালমানের সঙ্গে পুরনামার আন্তরিক করমর্দনও ছিলো এরকমই এক সৌজন্যতা। অথচ দেশটির প্রেসিডেন্ট দপ্তরের তোলা ওই করমর্দনের ছবিটিকেও নকল বলে প্রচার করা হচ্ছে। আবার কেউ কেউ বলছে,‘বিধর্মীর সঙ্গে সৌদি বাদশার হাত মেলানোটাই হারাম।’
এরকম ছবি পুরনামার জন্য সাধারণ মুসলিমদের মনের শঙ্কা কাটিয়ে দিতে পারে বলে ধারণা করা হয়। তাই অপপ্রচারণা চলছে বলে মনে করে ইন্দোনেশিয়ার অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টরা।
এই নির্বাচনে অনলাইনের ধর্মীয় উস্কানি একেবারেই ধর্মভীরুদেরকে প্রভাবিত করবে বলে মনে করেন তারা।
ভুয়া সংবাদ দমন নিয়ে কাজ করা ‘টার্ন ব্যাক হোক্স’ সংস্থার সহ-প্রতিষ্ঠাতা খায়রুল আশার বলেন,‘ গত ৩ মাসে আমরা ১ হাজার ৯’শরও বেশি ভুয়া সংবাদ চিহ্নিত করেছি। এগুলোর বেশিরভাগই জাকার্তার নিবার্চন সম্পর্কিত। এখানে ধর্মীয় উস্কানি বেশ বড়ধরণের প্রভাব রাখতে পারে।’
ভুয়া সংবাদ মহামারী আকার ধারণ করায় এসবের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদো।
উল্লেখ্য, ইন্দোনেশিয়াতে ৪০ হাজারেরও বেশি অনলাইন সংবাদমাধ্যম রয়েছে বলে জানায় দেশটির প্রেস কাউন্সিল। তবে এগুলোর বেশিরভাগেরই কোনো নিবন্ধন নেই। তাই ভুয়া সংবাদ যাচাইয়ে একটি বিশেষ যাচাই ব্যবস্থাও চালু করেছে এই কাউন্সিল।