যুদ্ধ বলের, যুদ্ধ অভিজ্ঞতা আর মানসিকতার। ক্রোয়েশিয়া প্রথমার্ধে প্রথমটিতে জিতেও অনাকাঙ্ক্ষিত দুই গোলে পিছিয়ে পড়ে। এরপর তারা হেরে যায় মানসিক লড়াইয়ে। ফ্রান্সের অভিজ্ঞতার কাছে খেই হারিয়ে ২-৪ ব্যবধানে হেরে প্রথমবার বিশ্বকাপ জেতার স্বপ্ন মাটি হয়েছে দলটির। ৯৮’র চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স বিশ্বসেরা হয়েছে আরেকবার।
ক্রোয়েশিয়ার মানজুকিচ এদিন প্রথমে নিজেদের জালে বল জড়িয়ে দেন। এরপর পেরিসিচ তাদের সমতায় ফেরান। ক্রোয়েশিয়া আবার পিছিয়ে পড়ে পেনাল্টি থেকে গোল হজম করে। এরপর দ্বিতীয়ার্ধে পগবা এবং এমবাপে আরও দুই গোল করেন। শেষদিকে মানজুকিচ এক গোল শোধ দিলেও যথেষ্ট ছিল না।
১৯তম মিনিটে বক্সের ঠিক বাইরে ফ্রি-কিক পায় ফ্রান্স। কিক নিতে এগিয়ে আসেন সেটপিস বিশেষজ্ঞ গ্রিজম্যান। এদিনও তিনি বাজিমাত করেন। তার দারুণ শট হেডে ক্লিয়ার করতে গিয়ে নিজেদের জালে জড়িয়ে দেন মানজুকিচ।
এর আগে কোনো বিশ্বকাপের ফাইনালে কোনো খেলোয়াড় নিজেদের জালে বল জড়াননি।
গোল খাওয়ার আগ পর্যন্ত ক্রোয়েশিয়া দারুণ ছন্দবদ্ধ ফুটবল খেলতে থাকে। ফ্রান্সের চেয়ে বল দখলের লড়াইয়ে বেশ এগিয়ে ছিল তারা।
ক্রোয়েশিয়া গোল শোধ দিয়ে দেয় ২৯তম মিনিটে। বক্সের বেশ খানিকটা দূরে ফ্রি-কিক পায় দলটি। কয়েক পা ঘুরে ভিদার কাছে যায় বল। বক্সের ভেতর টোকা দিয়ে তিনি বল দেন সেমিফাইনালের নায়ক পেরিসিচকে। বল নিয়ন্ত্রণে নিয়েই বাঁপায়ের শটে দূরের পোস্ট দিয়ে বল জালে পাঠান।
৩৮তম মিনিটে আরেকটি অনাকাঙ্ক্ষিত গোল থেকে পিছিয়ে পড়ে ক্রোয়েশিয়া। কর্নার থেকে বক্সে আসা বল পেরিসিচের হাতে লাগে। রেফারি প্রথমে পেনাল্টি না দিলেও ভিডিও রেফারির নির্দেশে রিপ্লে দেখে পেনাল্টি দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। কিক নিতে আসেন গ্রিজম্যান। ক্রোয়েশিয়ান গোলরক্ষক নিজের ডানদিকে ডাইভ দিলে গ্রিজম্যান ঠাণ্ডা মাথায় বল বাঁদিকে পাঠিয়ে দেন।
ফ্রান্স মূলত বড় ম্যাচের আবহাওয়া বিবেচনায় সতর্ক ফুটবল খেলতে চেয়েছে। আর সেটি করেই তারা বাজিমাত করেছে। খুব বেশি তাড়াহুড়া না করে কাউন্টার অ্যাটাকে নজর দেয় তারা।
দ্বিতীয়ার্ধের ৪৮তম মিনিটে ফ্রান্সকে বাঁচান গোলরক্ষক লরিস। মদ্রিচের কাছ থেকে বল পেয়ে বক্সের বাইরে থেকে শট নেন রেবিচ। লাফিয়ে কোনোমতে হাত দিয়ে বের করে দেন লরিস।
৫২তম মিনিটে এমবাপে গতির ঝলক দেখান। বাঁদিক থেকে বল নিয়ে বক্সে ঢুকে পড়েন। সঙ্গে লেগে ছিলেন ভিদা। তাকে এড়িয়ে গোলে শটও নেন। কিন্তু গোলরক্ষক পা দিয়ে সেটি ঠেকাতে সক্ষম হন।
৫৯তম মিনিটে পগবা ব্যবধান ৩-১ করেন। বাঁদিক থেকে লংপাস ধরে বক্সে ঢুকে পড়েন এমবাপে। নিজে শট নেয়ার সুযোগ না পেয়ে বল দেন গ্রিজম্যানকে। গ্রিজম্যানও জায়গা করতে না পেরে বল দেন সামনে থাকা পগবাকে। পগবার প্রথম শট প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডারের শরীরে লাগে। তিনি আবার ফিরতি বল পেয়ে গেলে দেখেশুনে বল জালে প্লেস করেন।
৬৫তম মিনিটে এমবাপের গোলে ব্যবধান ৪-১ হয়ে যায়! হার্নান্দেজের কাছ থেকে বল পেয়ে বক্সের বাইরে দাঁড়িয়ে শট নেন। গোলরক্ষক লাইনে ছিলেন না। বল অনায়াসে জালে জড়িয়ে যায়।
৬৯তম মিনিটে ‘পড়ে পাওয়া’ এক গোলে ব্যবধান ৪-২ করে ক্রোয়েশিয়া। ফ্রান্স গোলরক্ষক বল না ধরে নিজের সতীর্থকে দিতে চান। আগুয়ান মানজুকিচ খুব কাছে ছিলেন। তিনি পা বাড়িয়ে দিলে বল জালে চলে যায়। বাকিটা সময় ফ্রান্স নিরাপদে পার করে দেয়।