বাংলাদেশে ফেসবুক,ইউটিউবের মতো সামাজিক মাধ্যমগুলোতে নানা রকম সাইবার অপরাধ হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম।
এসব সামাজিক মাধ্যমে সাইবার বুলিং (আপত্তিকর মন্তব্য), মানহানী,ঘৃণা ছড়ানো পোস্ট, জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ করা নিত্যদিনের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। এজন্য সামাজিক মাধ্যমের সবদেশে একনীতিতে পরিবর্তন এনে ভিন্ন ভিন্ন দেশ এবং এসব দেশের সংস্কৃতির সঙ্গে খাপ খায় এমন নীতি প্রণয়ন করা দরকার বলে মনে করেন তিনি।
আজ মঙ্গলবার রাজধানীতে ৮ম এশীয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় সাইবার নিরাপত্তা ফোরামের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী।
দেশের সাইবার জগতের ঝুঁকিগুলো তুলে ধরে প্রতিমন্ত্রী বলেন,‘একেবারেই উন্মুক্ত পর্নোগ্রাফির জগতে সহজেই প্রবেশাধিকার পেয়ে যাচ্ছে আমাদের নবীন প্রজন্ম। নারীদের আপত্তিকর ছবি প্রকাশ করা হচ্ছে অনলাইনে। এই ধরণের অপরাধের শিকার হয়ে বাংলাদেশসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশে অনেকেই বেছে নিচ্ছে আত্মহত্যার পথ।’
ইন্টারনেট অব থিংকস, আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা), রোবটিক্সের অগ্রযাত্রাকে সাইবার নিরাপত্তার নতুন চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন তারানা হালিম।
প্রযুক্তিভিত্তিক সাইবার অপরাধ এই সময়ের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ জানিয়ে তিনি বলেন,‘টেলিকম এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির উৎকর্ষতার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নিত্য-নতুন সাইবার অপরাধ বাড়ছে। দেশের দুর্বল অনলাইন অবকাঠামোকে টার্গেট করে আক্রমণের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করছে সাইবার অপরাধীরা।’
এই বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জকে বৈশ্বিকভাবে মোকাবেলা করতে হবে মন্তব্য করে তিনি বলেন,‘সাইবার স্পেসের কোনো সীমান্ত নেই। সাইবার নিরাপত্তার কোনো নির্দিষ্ট সংজ্ঞায়ন দাঁড় করানো যায় না। কেবল সাইবার অপরাধের নানা রকম বৈশিষ্ট্য চিহ্নিত করা যায়। এগুলোর মধ্যে সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে বেশি আলোচিত হচ্ছে সামাজিক মাধ্যমে সাইবার অপরাধ।’
দেশের ডিজিটালাইজেশনে নেয়া সরকারের পদক্ষেপ তুলে ধরেন প্রতিমন্ত্রী। এখন সরকার সাইবার নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন,‘বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের জন্য ডিজিটালাইজেশন দরকার। একই সঙ্গে দরকার সাইবার নিরাপত্তাকে গুরুত্ব দেয়া। দেশে এখন প্রায় ৩ কোটি স্মার্টফোন ব্যবহারকারী আছে। অভ্যন্তরীণ ডেটা ব্যবহারের মাত্রা শূন্য শতাংশ থেকে বেড়ে ৪০ শতাংশ হয়েছে। মাত্র ৮ বছরে এতোসব অগ্রগতির পর এখন সর্বোচ্চ গুরুত্ব সাইবার নিরাপত্তায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।’
সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিতে সরকারের পদক্ষেপগুলো তুলে ধরে তিনি বলেন,‘আইসিটি আইন প্রণয়ন করার পর ২০১৬ সালে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট প্রণয়নের জন্য কাজ শুরু হয়। ইতোমধ্যে বায়োমেট্রিক সিম নিবন্ধনের মাধ্যমে মোবাইলফোন-সিম দিয়ে করা অপরাধগুলো অনেকটাই কমিয়ে আনা গেছে। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) এবং বাংলাদেশ কম্পিউটার ইমার্জেন্সি রেসপন্স টিম (বিডিসার্ট) দেশের ইন্টারনেট থেকে সাম্প্রদায়িক উস্কানি,সমাজ-রাষ্ট্রবিরোধী প্রচারণা, ধর্ম বিরোধী কনটেন্ট কমিয়ে আনার কাজ করছে।’
অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন এশিয়া প্যাসিফিক টেলিকমিউনিটির উপ-মহাসচিব মাসানরি কোনদো, বিটিআরসি চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব শ্যাম সুন্দর শিকদার প্রমুখ।
আইন প্রয়োগকারী ও নিরাপত্তা সংস্থার কর্মকর্তা, বিভিন্ন টেলিকম প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
ফোরামে বাংলাদেশ,ভারত, চীন, কোরিয়া, মালয়েশিয়া, শ্রীলংকা, আফগানিস্তান, ভুটান, কম্বোডিয়া, লাওস,থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, টোঙ্গা, ভানুয়াতুসহ ১৪ টি সদস্য দেশ, সহযোগি সদস্য দেশ অংশ নিচ্ছে।