প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রত্যক্ষ ভূমিকায় দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থী নানা অভিযোগে ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতৃত্বে পরিবর্তন এসেছে কিছুদিন আগে। তার কিছুদিন পরেই বুয়েট ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতাদের সংশ্লিষ্টতায় শিক্ষার্থী আবরার হত্যাকাণ্ড, যা পুরো জাতিকে নাড়িয়ে দিয়েছে। সব ধরণের রাজনৈতিক সংগঠন এবং তাদের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করেছে বুয়েট।
ওই দুই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই আবারও বেপরোয়া ছাত্রলীগ। এবার ঘটনা রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে। রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ ফরিদ উদ্দিন আহমেদকে পুকুরে ফেলে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় ২৫ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে পুলিশ। রাজশাহীর বিভিন্ন ছাত্রাবাসে অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়।
এর আগে প্রয়োজনীয় সংখ্যক ক্লাসে উপস্থিত না থাকা এবং মধ্যপর্ব পরীক্ষায় অংশ না নেয়ায় দু’জন শিক্ষার্থীকে ফাইনাল পরীক্ষার ফরম ফিলাপের সুযোগ না দেয়ায় শনিবার সকাল ১১টার দিকে অধ্যক্ষ প্রকৌশলী ফরিদ উদ্দিন আহম্মেদকে পুুকুরে ফেলে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। একজন শিক্ষকের সঙ্গে এ কী ধরণের আচরণ! বিষয়টি খুবই উদ্বেগজনক বলে আমরা মনে করি।
প্রচলিত ধারার ছাত্র রাজনীতি শিক্ষার্থীদের কী শিক্ষা দিচ্ছে বা উপকার করছে, এ প্রশ্ন উঠতে শুরু হয়েছে। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে, দেশের নানা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্ররাজনীতি থাকবে কি থাকবে না, এই প্রশ্নেরও অবতারণা হতে শুরু করেছে। বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি বন্ধের উদাহরণকে টেনে এনে রাজশাহী পলিটেকনিকেও রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি উঠেছে।
ছাত্র রাজনীতি দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাসহ গণতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ঐতিহাসিকভাবে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ছাত্ররা বড় ভূমিকা পালন করেছে। কিন্তু বর্তমানে ছাত্রলীগসহ নানা ছাত্র সংগঠনগুলোর বিভিন্ন কর্মকাণ্ড নানা কারণে বেশ সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। রাজনীতিবিদ থেকে শুরু করে সমাজবিজ্ঞানীদের অভিমত, দেশের শিক্ষাঙ্গণে সাধারণ শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায় ও শিক্ষা ব্যবস্থায় ইতিবাচক ধারা বজায় রাখার প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ ছাত্র সংগঠনগুলো। অবৈধ অর্থ রোজগার আর মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলোর পেশীশক্তি হিসেবে তাদেরকে বেশি দেখা যাচ্ছে সাম্প্রতিক সময়ে।
বর্তমানে দেশে একটা মারাত্মক রাজনীতিবিমুখ প্রজন্ম বেড়ে উঠছে৷ শুধু নতুন প্রজন্মই নয়, সব বয়সের মানুষের মধ্যেই রাজনীতি নিয়ে এক ধরনের নেতিবাচক মনোভাব কাজ করে৷ সাধারণ মানুষ বলতে গেলে রাজনীতিকে ভয় পেয়ে তা থেকে দূরে থাকে৷ এখন আর কেউ চান না, তার সন্তান ছাত্ররাজনীতি করুক৷ এমনকি মন্ত্রী-এমপি-নেতা-আমলাদের একটি বিরাট অংশ তাদের সন্তানদের বিদেশে লেখাপড়া করান৷ তাই হয়তো মনোযোগের অভাবে ছাত্র রাজনীতিতে একটা অন্তঃসারশূন্য পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে৷ যার ফলাফল বর্তমানের ছাত্র সংগঠনগুলোর কর্মকাণ্ডে প্রকাশ পাচ্ছে, এই প্রবণতা দেশ ও জাতির জন্য বিপদজনক৷
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংস্কার কর্মকাণ্ডে হাত দিয়েছেন, তার শুরুটা হয়েছে ছাত্রলীগ দিয়ে। কিন্তু আমাদের মনে হচ্ছে, কোনো এক অদৃশ্য কারণে হয়তো প্রধানমন্ত্রীর এই সংস্কার বার্তা তৃণমূল পর্যন্ত সেভাবে পৌঁছায়নি। পৌঁছলে বুয়েটে ওইরকম ঘটনার পরেও সেই শিক্ষাকে অগ্রাহ্য করে রাজশাহী পলিটেকনিকে শিক্ষক নিগৃহের ঘটনা ঘটতো না। বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে ভেবে দেখার সময় এসেছে বলে আমরা মনে করি। আমাদের আশাবাদ, সংশ্লিষ্টরা এ বিষয়ে দায়িত্বশীল হয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেবেন।