চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

দেশের ৩১ জেলায় করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী

দেশের ৩১ জেলায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগের ৯টি জেলা, ময়মনসিংহের একটি, চট্টগ্রামের ৫টি, রাজশাহীর ৩টি জেলা রয়েছে।

এছাড়া রংপুর বিভাগের ৩টি, খুলনার ৬টি, বরিশালের ৩টি এবং সিলেট বিভাগের ২টি জেলা রয়েছে।

গত ৬ জুন দেশের গড় সংক্রমণের হার ছিল ১০ দশমিক ৭৩। দুইদিনের ব্যবধানে এই হার বেড়ে আজ দাঁড়িয়েছে ১২ দশমিক ৩৩ শতাংশ। সেদিক থেকে দুইদিনের ব্যবধানে সংক্রমণের হার বেড়েছে এক দশমিক ৬ শতাংশ।

সংক্রমণের হার এভাবে ঊধ্বমুখী হওয়া আশংকাজনক জানিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে আক্রান্তদের আইসোলেশন নিশ্চিত করতে হবে। যারা অসুস্থ হয়ে পড়বেন তাদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি কন্টাকট্রেসিং করে তাদের কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করতে হবে।

যে ৩১টি জেলায় করোনা সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত ৪৮ ঘণ্টায় দেশের যেসব জেলায় সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে সেগুলো হলো- ঢাকা মহানগর ৪ দশমিক ৪৮ শতাংশ;  ফরিদপুর ২৯ দশমিক ৫৮ শতাংশ; গাজীপুর ১১ দশমিক ২১ শতাংশ।

গোপালগঞ্জ ১৮ দশমিক ৬০ শতাংশ; কিশোরগঞ্জ ৮ দশমিক ৩৮ শতাংশ; মাদারীপুর ১০ দশমিক ৩৯ শতাংশ; মুন্সীগঞ্জ ১০ দশমিক ১৪ শতাংশ; রাজবাড়ী ২০ দশমিক ৬৫ শতাংশ; শেরপুরে ১৭ দশমিক ২৪ শতাংশ।

রাঙ্গামাটি ১২ দশমিক ১২ শতাংশ; খাগড়াছড়িতে ১০০ শতাংশ, লক্ষ্মীপুর ৫ দশমিক ৮৮ শতাংশ; কুমিল্লা ৭ দশমিক ১৯ শতাংশ; ব্রাহ্মণবাড়িয়া ৫ দশমিক ২৪ শতাংশ;  চাঁপাইনবাবগঞ্জ ২৯ দশমিক ২১ শতাংশ; সিরাজগঞ্জ ১৪ দশমিক ০৪ শতাংশ;  বগুড়া ১৪ দশমিক ০৪ শতাংশ; ঠাকুরগাঁও ২৫ শতাংশ; দিনাজপুর ৩৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ; গাইবান্ধা ২২ দশমিক ২২ শতাংশ;

মেলা, সামাজিক অনুষ্ঠান, বিনোদন কেন্দ্র বন্ধের সুপারিশ করেছে কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। ছবি: তানভীর আশিক

চুয়াডাঙ্গা ৪৫ দশমিক ১৬ শতাংশ; যশোর ৪৭ দশমিক ৫৩ শতাংশ; ঝিনাইদহ ২৫ দশমিক ৪৫ শতাংশ; খুলনা ৩১ দশমিক ৫২ শতাংশ; কুষ্টিয়া ২৭ দশমিক ৭৮ শতাংশ।

সাতক্ষীরা ৫৫ দশমিক ০৮ শতাংশ; ভোলা ২৭ দশমিক ২৭ শতাংশ;  পিরোজপুর ৬৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ; ঝালকাঠি ৩১ দশমিক ২৫ শতাংশ; সুনামগঞ্জ ২৮ দশমিক ৫৭ শতাংশ;  হবিগঞ্জ ১১ দশমিক ১১ শতাংশ।

স্বাস্থ্যবিধি মানার বিকল্প নেই
সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ও সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মোশতাক হোসেন চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, ‘যেসব এলাকায় দ্রুত সংক্রমণ ছড়াবে সেখানে কোয়ারেন্টাইন ও আইসোলেশন নিশ্চিতসহ অধিক হারে নমুনা পরীক্ষা করাতে হবে। ওই এলাকাগুলোর সাথে যাতায়াত-চলাচল সীমিত করতে হবে।’

ডা. মোশতাক হোসেন

স্বাস্থ্যবিধি মানার বিকল্প নেই জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের সুনির্দিষ্ট জায়গা চিহ্নিত করে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। সেখানে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। পাশাপাশি ভ্যাকসিন দিতে হবে। যদিও এখন ভ্যাকসিন সরবরাহ অনেকটা কম। তবুও ঝুঁকিপূর্ণ মানুষদের যতো আমরা ভ্যাকসিন দিতে পারবো মৃত্যুর হার ততো কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।’

সংক্রমিত জেলাগুলোয় ডাক্তার ও নার্সের প্রতিনিধি দল পাঠাতে হবে
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক ডা. বে-নজির আহমেদ চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, ‘জেলা পর্যায়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য সংক্রমিত রোগীদের জিনোম সিকুয়েন্সিং করে দেখতে হবে দেশে ইন্ডিয়ার ভ্যারিয়েন্টের পরিস্থিতি কী। এছাড়াও ঢাকা থেকে করোনা বিশেষজ্ঞ ডাক্তার ও নার্সের একটি প্রতিনিধি দল পাঠাতে হবে যাতে তাদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করা যায়।’

ডা.বে-নজির আহমেদ

তিনি বলেন, ‘‘যেসব জেলায় বর্তমানে সংক্রমণের হার ঊর্ধ্বমুখী সেসব জেলায় সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে একটা বাজেট রাখতে হবে। যাতে করে সেসব জায়গায় দ্রুত রোগীদের আনা নেওয়ার জন্য গাড়ি বা অ্যাম্বুলেন্স নিশ্চিত করা যায়। পাশাপাশি করোনার প্রয়োজনীয় ওষুধসহ অক্সিজেন, হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা, অক্সিজেন সিলিন্ডার, অক্সিজেন কনসেনটেট্ররের ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি মানতে জনসাধারণকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।’’

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, দেশের যেসব জেলায় বা উপজেলায় করোনা সংক্রমণ বাড়ছে, সেখানে জরুরি বিধিনিষেধ আরোপের পাশাপাশি ওইসব এলাকায় সুচিকিৎসা নিশ্চিতে দক্ষ ও প্রশিক্ষিত জনবল পাঠানো হচ্ছে।