অর্থ প্রাপ্তির বিবেচনায় প্রবাসীদের গুরুত্ব বর্তমান সময়ে উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। এছাড়াও কোনো দেশের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে অভিমত প্রকাশের মাধ্যমে সাহায্য সহায়তা প্রদানে প্রবাসীদের অবদান কোনো অংশেই কম নয়।
বিশ্বের বহুদেশে এমন অনেক উদাহরণ রয়েছে। অনুন্নত দরিদ্র দেশগুলো যেমন প্রবাসীদের দেখে রেমিট্যান্স প্রাপ্তির দৃষ্টিতে; তেমনি দুর্যোগের সময় এদের চিন্তা ও মেধার সহায়তাও পায় অনেক দেশ।
১৯৮০-এর আগে বিশ্বে খুব বেশি হলে ১২ টি দেশের প্রবাসী বিষয়ক মন্ত্রণালয় ছিলো। বিশ্বব্যাংকের হিসেবে বর্তমানে প্রায় ২৫০ মিলিয়ন মানুষ তাদের মাতৃভূমির বাইরে অবস্থান করেন। ২০০০ সালের পর থেকে বিশ্বায়নের এই যুগে কোনো দেশের সরকারকে সামাজিক, অর্থনৈতিক ও পরিচালনার ক্ষেত্রে সহায়তা দেয়া আন্তর্জাতিক ওইসিডি’ভূক্ত দেশগুলোতে প্রবাসীর সংখ্যা ৩৮ শতাংশ বেড়েছে পেয়েছে।
পৃথিবীর বহুদেশেই দেখা মিলবে আইরিশ প্রবাসীদের। আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়াসহ অন্যান্য দেশে কোটি কোটি আইরিশ প্রবাসীদের সাহায্য সহযোগিতা জন্য আয়ারল্যান্ড সরকার গত বছর প্রথমবারের মতো প্রবাসী বিষয়ক মন্ত্রী নিয়োগ দিয়েছে।
প্রবাসীরা দেশকে ধনী করে তুলবে এই বিশ্বাসে সাম্প্রতিক সময়ে দেশগুলো এ বিষয়ে আরো বেশি নজর দিচ্ছে। বিশ্বব্যাংক ২০০৩ সালে রেমিটেন্সের প্রবাহের মূল্যায়ন প্রতিবেদন প্রকাশ করার পর এই খাতে দেশগুলোর রেমিটেন্স লাভের প্রত্যাশা বেড়ে যায়। এমন কথা জানিয়েছেন থিংক ট্যাংক মাইগ্রেশন পলিসি ইন্সটিটিউটের ক্যাথলিন নিউল্যান্ড।
গত বছর ভারতে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিজেপির নরেন্দ্র মোদি জয়লাভের কয়েকমাস পর নিউইয়র্কের মেডিসন স্কয়ার গার্ডেনে প্রায় ২০ হাজার ইন্ডিয়ান-আমেরিকানের বিশাল জনসভায় বক্তব্য রাখেন। মোদি তার বক্তব্যে বলেন, ভারতকে এখন আর সাপুড়েদের দেশ হিসেবে দেখা হয় না; বরং প্রযুক্তিগত শক্তির কেন্দ্র হিসেবে দেশটি পরিচিত হয়ে উঠেছে।
তার ওই বক্তব্য কথা অতিরঞ্জিত মনে হলেও এর একটি অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্য রয়েছে। ভারত সরকারের তথ্যমতে প্রায় ২৫ মিলিয়ন ভারতীয় দেশের ভাবমূর্তিকে উজ্জ্বল করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। ইসরাইলের উদাহরণের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে অনেক দেশই বিশ্বাস করে প্রবাসীরা তাদের ভূরাজনৈতিক স্বার্থ সমুন্নত রাখতে ভূমিকা রাখতে পারে।
দরিদ্র এবং মধ্য আয়ের দেশগুলো তাদের প্রবাসীদের নগদ অর্থ লাভের ক্ষেত্র হিসেবে দেখে। প্রবাসীরা বিপুল পরিমাণে রেমিটেন্স পাঠায়। ভারত প্রতিবছর ৭০ বিলিয়ন ইউএস ডলার রেমিট্যান্স পায়। তাজিকিস্তানের প্রাপ্ত রেমিট্যান্স, দেশটির জিডিপির অর্ধেক।
সাম্প্রতিক সময়ে প্রবাসীদের মেধার আধার হিসেবে দেখা হয়। ২০০৯ সালে অর্থনীতিতে ধ্বস নামলে আয়ারল্যান্ড তাদের সবচেয়ে সফল অভিবাসীদের নিজ দেশে এক অর্থনৈতিক ফোরামের আওতায় জড়ো করে। প্রতি দুই বছর অন্তর এই ফোরামে সদস্যরা মিলিত হয়।
অন্য চিত্রও আছে। মেক্সিকো তাদের আমেরিকা প্রবাসীদের শ্রমিক শ্রেণির রেমিট্যান্স প্রেরণকারী হিসেবে দেখার পূর্বতন ধারণা থেকে সরে এসেছে। মেক্সিকান তরুণদের আমেরিকার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন শেষে দেশে ফিরে আসতে উৎসাহিত করছে দেশটির সরকার।
বিশ্ব ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি অর্গানাইজেশন ২০১২ সালের সেপ্টেম্বরের আগ পর্যন্ত বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তির নতুন পণ্যের উদ্ভাবনের প্যাটেন্ট দেয়ার ক্ষেত্রে কর্মক্ষেত্রের পাশাপাশি উদ্ভাবকের জন্মস্থানের নামও অন্তর্ভূক্ত করতো। এর ফলে প্রবাসীদের মেধার শক্তির একটি মূল্যায়ন পাওয়া যায়।
এই হিসেব মতে ব্রিটেন, কানাডা, চীন, জার্মানি এবং ভারতের প্রবাসীরা সবচেয়ে মেধাবী। একটি দেশের অর্থনীতি ও প্রযুক্তিগত সমৃদ্ধির ক্ষেত্রে প্রবাসীরা বিশাল ভুমিকা রাখে। বাংলাদেশেও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সবচেয়ে বড় অংশটি আসে প্রবাসীদের মাধ্যমেই।