প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশের উন্নয়ন-অগ্রযাত্রা যাতে কোনোভাবে ব্যাহত না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে এবং আন্তর্জাতিক মানদণ্ড বজায় রেখে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।
বাসস জানায়, আজ রোববার সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে স্বাধীনতা যুদ্ধে খেতাবপ্রাপ্ত নির্বাচিত মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের উত্তরাধিকারগণকে দেয়া সংবর্ধনা এবং ২০২০-২০২১ সালের সশস্ত্র বাহিনীর সর্বোচ্চ শান্তিকালিন পদক প্রাপ্ত সদস্যদের পদকে ভূষিতকরণ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন।
তিনি গণভবন থেকে ঢাকা সেনানিবাসের সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের আর্মি মাল্টিপারপাস কমপ্লেক্সে অনুষ্ঠিত মূল অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সের সাহায্যে ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সশস্ত্রবাহিনী দিবসে আমি এটুকুই চাই, দেশের এই অগ্রযাত্রা যাতে কোনরকম ব্যহত না হয়। বাংলাদেশ যেন সারাবিশ্বে মর্যাদা নিয়ে চলতে পারে। প্রতিটি বাঙালি পৃথিবীর যেখানেই যাক না কেন যেন মাথা উঁচু করে বলতে পারে আমরা বিজয়ী জাতি, উন্নত জাতি। আমরা নিজেদের দেশকে গড়ে তুলেছি একটা সম্মানজনক অবস্থানে।
‘‘জাতির পিতা বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশের পর্যায়ে নিযে এসেছিলেন এবং তার সরকার সকলের সহযোগিতা এবং আন্তরিক প্রচেষ্টায় বাংলাদেশকে আজ তারই পদাংক অনুসরণ করে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত করেছে। এমনকি করোনাভাইরাস মোকবেলাতেও বাংলাদেশ যথেষ্ট দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে। সেক্ষেত্রে তাঁর প্রশাসন, সশস্ত্র বাহিনী, পুলিশ, আনসার ও ভিডিপি, বিজিবিসহ সাধারণ মানুষ ও দলীয় নেতা-কর্মীরা আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করেছে এবং মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। এ কারণে শুধু করোনাভাইরাস নয়, আমরা যে কোন দুর্যোগ-দুর্বিপাক মোকাবেলার সক্ষমতা অর্জন করেছি।’’
সরকার সশস্ত্র বাহিনীসহ প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে প্রশিক্ষণের নানাবিধ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আজকে আমরা এটুকু দাবি করতে পারি আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সকলের সঙ্গে সমান পা মিলিয়ে চলতে পারে। সে সক্ষমতা বাংলাদেশ অর্জন করেছে।
লাখো শহিদের রক্তের বিনিময়ে আমাদের অর্জন ধরে রেখেই এগিয়ে যেতে হবে, এমন অভিমত ব্যক্ত করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকের দিনে আমাদের মনে রাখতে হবে এই দেশ আমরা স্বাধীন করেছি লাখো শহিদের রক্তের বিনিময়ে। জাতির পিতা বারবার কারাবরণ করেছেন, এই দেশের মেহেনতি মানুষের জন্যই তিনি নিজের জীবন উৎসর্গ করে গেছেন। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টাই আমাদের স্বাধীনতা, কাজেই যা কখনো ব্যর্থ হতে পারেনা’।
‘‘বাংলাদেশ উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে উঠবে, বাংলাদেশকে বিশ্ব মর্যাদায় আমরা আজকে নিয়ে এসেছি। এই মর্যাদা ধরে রেখে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে এবং উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ ইনশাল্লাহ আমরা গড়ে তুলবো। এই লক্ষ নিয়েই আমরা কাজ করছি।’’
তিনি বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং তাদের পরিবারের সদস্য এবং সশস্ত্র বাহিনীর প্রতিটি সদস্যকেও এ সময় অভিনন্দন জানান।
সেনাপ্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ, বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল শেখ আবদুল হান্নান, সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) আজিজ আহমেদ এবং সশস্ত্র বাহিনীর প্রাক্তন আরও পাঁচ কর্মকর্তাকে ২০২০-২০২১ সালের শান্তিকালীন পদকে ভূষিত করা হয়।
সে সময় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আকম মোজাম্মেল হক অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে তাদের হাতে সম্মানী চেক এবং উপহার তুলে দেন।
দিবসটি উপলক্ষে শেখ হাসিনা বীরশ্রেষ্ঠদের উত্তরাধিকারী এবং সশস্ত্র বাহিনীর খেতাব প্রাপ্ত এবং খেতাব প্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং তাদের পরিবারের মাঝে উপহার প্রদান করেন।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারেক আহমেদ সিদ্দিক, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ, নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল এম শাহীন ইকবাল, বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল শেখ আবদুল হান্নান উপস্থিত ছিলেন।
সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও) লেফটেন্যান্ট জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান স্বাগত বক্তৃতা করেন। সাত জন বীরশ্রেষ্ঠের নিকট আত্মীয়সহ প্রায় ৭৫ জন খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের উত্তরাধিকারীগণ সংবর্ধনায় যোগ দেন।