দুর্গম এলাকাগুলোতে বড় বড় অ্যাম্বুলেন্স পৌঁছানো কিছু কিছু ক্ষেত্রে বেশ কষ্টকর হলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অসম্ভব। যেখানে যেতে পারে গাড়িগুলো সেখানেও ভাড়া নেয়া হয় তুলনামূলক বেশি। সঠিক সময়ে অ্যাম্বুলেন্সের অভাবে ওই প্রত্যন্ত এলাকাগুলোতে প্রাণ হারাতে হয় অনেককেই।
তাই সৌরশক্তি চালিত তিন চাকার ‘রিকশা অ্যাম্বুলেন্স’ আসছে এবার জনগণের সেবায়। এর দামও তুলনামূলক কম, মাত্র দেড় থেকে দু’লাখ টাকার মধ্যে। যেখানে একটি অ্যাম্বুলেন্স গাড়ির দাম পড়ে কমপক্ষে ২৪ লাখ টাকা।
মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার কৃষক জাহিদুল ইসলাম। প্রত্যন্ত অঞ্চলের অধিবাসী এই কৃষকের স্ত্রী প্রথম সন্তান জন্ম দেয়ার পর মারা যান। সন্তান জন্মদানের পর খুব বেশি অসুস্থ হয়ে যাওয়ায় তাকে রিকশায় করে অনেক দূরের হাসপাতালে নেয়ার সময় পথেই মারা যান তিনি।
জাহিদুল ইসলাম জানান, তার বাসা পর্যন্ত অ্যাম্বুলেন্স যাওয়ার রাস্তা নেই। তাই রিকশা পেয়ে ধীরগতিতে নিতে নিতে তার স্ত্রী মারা যান। ‘আমি যদি আরেকটু আগে ওকে হাসপাতালে নিতে পারতাম, ও হয়তো এত অসুস্থ হতো না,’ বলেন তিনি।
এই সব মানুষের সাহায্য করার জন্যই বাংলাদেশ সরকার, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় এবং স্থানীয় একটি রিকশা-ভ্যান নির্মাতা কোম্পানির যৌথ উদ্যোগে প্রথমবারের মতো রিকশা-ভ্যানের কাঠামোতে স্থানীয় কাজে নিয়োজিত একটি অ্যাম্বুলেন্সে দরকারি যা সরঞ্জাম থাকে সেসব যুক্ত করে তৈরি হচ্ছে রিকশা অ্যাম্বুলেন্স।
অ্যাম্বুলেন্সের পাওয়ার সোর্স হিসেবে থাকছে ছোট চারটি ১২ ভোল্টের লেড-অ্যাসিড ব্যাটারি এবং বৈদ্যুতিক মোটর। দেশের অনেক প্রত্যন্ত অঞ্চলে এখনো বিদ্যুতের আলো পৌঁছায়নি। সেসব এলাকায়ও যেন অ্যাম্বুলেন্সটি চলতে পারে, তাই ব্যাটারি চার্জের জন্য এতে থাকবে চারটি ১০০ ওয়াট ক্ষমতার সোলার ক্যানোপি। সৌরশক্তি কাজে লাগিয়ে ব্যাটারিগুলো ৩ থেকে ৪ ঘণ্টার মধ্যেই চার্জ করা যাবে।
প্রকল্প প্রধান ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবদুল মালেক আজাদ বলেন, বেশিরভাগ গ্রামীণ কমিউনিটি হেলথ ক্লিনিক প্রয়োজন অনুসারে যথেষ্ট অ্যাম্বুলেন্স কিনতে পারে না দামের কারণে। তাই কমদামি রিকশা অ্যাম্বুলেন্সগুলো বেশি পরিমাণে কিনতে তাদের সুবিধা হবে।
এছাড়াও একদিকে যেমন এগুলো দুর্গম এলাকায় যেতে পারবে, তেমনি সৌরশক্তিতে চালিত বলে পরিবেশ রক্ষায়ও ভূমিকা রাখবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
অস্ট্রেলিয়ায় সৌরশক্তি চালিত রেস কার দেখে এমন অ্যাম্বুলেন্স তৈরির চিন্তা মাথায় আসে বলে জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষক, ‘আমি ভাবলাম, গবেষকরা যদি প্রতিযোগিতার জন্য সোলার কার বানাতে পারেন, তাহলে সৌরশক্তি চালিত অ্যাম্বুলেন্সও বানানো সম্ভব।’
একবারের চার্জে ৩০ মাইল পর্যন্ত যেতে পারবে সোলার অ্যাম্বুলেন্স। প্রতি ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৯-১২ মাইল বেগে এটি চলতে পারবে। চলতি বছরের শেষদিকেই অ্যাম্বুলেন্সটি বাজারে ছাড়া যাবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।