ধানের এবার বাম্পার ফলন হয়েছে। এক কোটি ৮০ লাখ টন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও উৎপাদন হয়েছে তারও বেশি। ফলে গত ২/৩ বছরের তুলনায় দাম কমেছে অনেক। কেউ কেউ দাবি করছেন ৩ বছরের মধ্যে এখনই চালের দাম সর্বনিম্ন।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, জুন নাগাদ মাঠের সব ধান উঠে গেলে চালের বাজারদর আরো কমবে।
তবে ব্যবসায়ীদের বক্তব্যের উল্টো স্রোতে থেকে মিল মালিকরা বলছেন, যেহেতু চাল আমদানিতে দ্বিগুণের বেশি শুল্ক আরোপ করা হয়েছে, তাই কৃষকের ধানেই সবার ভরসা। এতে দাম বাড়তে পারে।
খাদ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এই মৌসুমে দুই কোটি টনের মত ধান উৎপাদন হতে পারে।
প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক আরিফুর রহমান অপু বলছেন, কৃষককে বাঁচাতে চালের বহুমুখী ব্যবহার বাড়াতে হবে। যেমন- চাল দিয়ে চিপস, রুটি, বিস্কুট, কেক ইত্যাদি তৈরি করতে হবে।
পাইকারি বাজারে চালের দাম কত
চালের দামের বিষয়ে বাংলাদেশ রাইস মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি এবং বাবু বাজার চাল ব্যবসায়ী সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাওসার আলম খান চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, উৎপাদন বেড়ে যাওয়ার কারণে চালের দাম কমেছে, আরো কমতে পারে।
তিনি বলেন, রমজানে চাল কম চলে। তাই দাম একটু কম। রমজানের পরে বিক্রয় বেশি হবে। বর্তমানে নতুন মিনিকেট প্রতি কেজি চাল ৪০ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ৪১ বা ৪২ টাকা দরে পাইকারি বাজারে বিক্রি হচ্ছে। আর পুরনো মিনিকেট ৪৩ থেকে ৪৪ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
‘খুচরা বাজারে চালের দাম যদি বেশি নিয়ে থাকে তাহলে আমি মনে করি তারা অন্যায় কাজ করছে, এতে সরকারের মনিটরিং করা উচিত।’
কাওসার আলমের দাবি, চালের এখন যে দাম তা গত ২/৩ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন বলে তিনি মনে করেন।
চালের দামের বিষয়ে প্রায় একই কথা বলেছেন বাংলাদেশ রাইস মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি ও বাবু বাজার সায়েম রাইস এজেন্সির কর্ণধার জাকির হোসাইন রনি।
তিনি চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, পাইকারি বাজারে চালের দাম কমেছে। কিন্তু খুচরা বাজারে তেমন কমেনি। কর্তৃপক্ষ বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না বলেই খুচরা বাজারে দাম নিয়ন্ত্রণে আসছে না।
রনি বলেন, ‘সুপার শপে চালের কোনো দর নাই। তারা ভোক্তদের কাছ থেকে ইচ্ছামত দাম নিচ্ছে। আর মুদি দোকানে হচ্ছে চুরির ব্যবসা। তারা ওজনে কম দেয়। দামও বেশি রাখে। ৫৫ থেকে ৫৮ টাকা পর্যন্ত দাম নিয়ে ভোক্তাদের ঠকাচ্ছে।’
এই ব্যবসায়ী বলেন, চালের দাম আরো কমার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ এক মৌসুমেই এক কোটি আশি লাখ টনেরও বেশি ধান উৎপাদন হয়েছে। তিন মৌসুমে আনুমানিক মোট তিন কোটি ৫৩ লাখ টন পুরোপুরি উৎপাদন হয়, তবে দাম বাড়ানো-কমানো পুরোপুরি মিল মালিকদের হাতে থাকে। কারণ তারা সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ধান কিনে জমা করে রাখে তারা তাদের সময় মত চাল বাজারে ছাড়ে আবার সময় মত বন্ধ করে দেয়।
‘জুন মাসে সম্পূর্ণ ধান উঠে গেলে চালের দাম আরও কমবে। কিন্তু কৃষক দাম কম পাবে। এতে একদিকে ভোক্তা উপকৃত হবে অন্যদিকে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কারণ কৃষকের প্রতি কেজি ধানের উৎপাদন খরচ ২৪ টাকা, কিন্তু তিনি বিক্রি করছেন ১২ থেকে ১৩ টাকায়।’
এই চাল ব্যবসায়ী বলেন, কৃষকদের বাঁচানোর একটা ভালো অপশন আছে। তা হচ্ছে, সরকারের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় প্রতি বছর যে ১২ লাখ টন খাদ্য ভর্তুকি দেয় এই ১২ লাখ টন গম না কিনে কৃষকের কাছ থেকে ধান কিনলে কৃষক বাঁচবে। নতুবা তারা চাল উৎপাদনে আগ্রহ হারাবে। এতে আগামী বছর আবার আমদানি নির্ভর হতে হবে।
আমদানির আড়ালে অর্থ পাচার হচ্ছে
রনি বলেন, আমদানি পুরোপুরি বন্ধ করা উচিত। শুল্ক ৫৫ নয়, ১শ টাকা করলেও আমদানি করবে। কারণ এর মাধ্যমে অর্থ পাচার হয়।
যুক্তি তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘২০১৩ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত এই সময়ে ভারতের বাজারে চালের টন ছিল ৫শ’ ডলার। কিন্তু বাংলাদেশ থেকে দর দেয়া হয়েছিল ৮শ’ ডলার। তাহলে বাড়তি এই ৩শ’ ডলার কোথায় গেল?’
মিল মালিকরা যা বলছেন
তবে মিল মালিকরা বলছেন, শুল্ক বাড়ানোর কারণে আমদানি কমে যাবে। মানুষ দেশীয় চাল খাবে। কিন্তু দাম বাড়বে। অবশ্য, বাড়লে কৃষকের জন্যই ভাল।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ রাইস মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি ও সালমা ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের মালিক মো. হানিফ শোয়েব অনলাইনকে বলেন, ‘যেহেতু সরকার আমদানি শুল্ক বাড়িয়েছে এতে পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে আমদানি পরিমাণ কমে যাবে। তখন কৃষকের ধানের উপরে সবাই নির্ভরশীল হবে। এর ফলে দাম বাড়ার সম্ভাবনা আছে। তবে তখন কৃষকরা তাদের ন্যায্য মূল্য পাবে।’
তিনি বলেন, ‘আমদানি শুল্ক বাড়ানোর কারণে মিলাররা এখন তৃণমূল কৃষকদের কাছ থেকে ধান কিনবে। এতে কৃষকরা লাভবান হবে। আমরাও এটাই চাই। তবে যেহেতু তখন শুধু কৃষকের ধানের উপর নির্ভরশীল হবে সেহেতু দাম কিছুটা বেড়ে যেতে পারে।’