বিশ্বজয়ী যুবাদের বাড়ি ফেরার দিন বৃহস্পতিবার। সবার মতো অনূর্ধ্ব-১৯ দলের বাঁহাতি ওপেনার পারভেজ হোসেন ইমনও ফিরছেন ঘরে। ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের পথে তার এবারের যাত্রাটা একেবারেই অন্যরকম। ইমনের দেশে ফেরা উপলক্ষ্যে বাবা-মা ও ভাই-বোন এসেছিলেন ঢাকায়। ১৭ বছর বয়সী সম্ভাবনাময় এ ক্রিকেটার জন্মস্থানে ফিরছেন পুরো পরিবারকে সঙ্গী করেই।
ইমনের মুঠোফোনটি যখন বেজে উঠল, কেবলই ঢাকা ছেড়েছে তাদের বাস। বিশ্বকাপ ফাইনালে চোট নিয়েও ৪৭ রানের স্নায়ুক্ষয়ী ইনিংস খেলা বাঁহাতি ক্রিকেটার পথ চলতে চলতে কথা বললেন চ্যানেল আই অনলাইনের সঙ্গে।
এই ফেরার অনুভূতি নিশ্চয়ই আলাদা?
অবশ্যই। পরিবারের সবার সঙ্গে যাচ্ছি চট্টগ্রাম শহরে। সেখানে আমাদের জন্য বন্ধু, আত্মীয়, শুভাকাঙ্ক্ষী সবাই অপেক্ষা করছে। এলাকার মানুষেরা প্রতিনিয়ত বড় ভাইকে ফোন করে খবর নিচ্ছে আমরা কতটা আগালাম। শুনেছি সেখানে সংবর্ধনার আয়োজন করেছে এলাকাবাসী।
আপনাদের বরণ করে নিতে বিসিবির আয়োজন কেমন লেগেছে?
অসাধারণ। অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। স্টেডিয়ামের গ্যালারি ভরা মানুষ। এখানে আন্তর্জাতিক ম্যাচ হলে যেমন হয়, পরিবেশটা তেমনই ছিল। মানুষের উচ্ছ্বাস হৃদয় ছুঁয়ে গেছে।
ফাইনালে ২৫ রান করার পর চোট নিয়ে ড্রেসিংরুমে ফিরে গেলেন, আবার ব্যাটিংয়ে নামতে পারবেন ভেবেছিলেন?
সত্যি বলতে খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম, নামতে পারবো তো! কারণ পায়ের দুই পেশীতে প্রচণ্ড ব্যথা করছিল। শরীর কাঁপছিল। মাঠ ছাড়ার পর ড্রেসিংরুমে গিয়ে অনেককিছুই করতে হয়েছে। আইস বাথ নিয়েছি, প্রচুর পানি খেতে হয়েছে। সবচেয়ে বেশি কাজে লেগেছে ফিজিওর ম্যাসাজ। পায়ের পেশীতে ম্যাসাজের পর কিছুটা ভালো অনুভব করছিলাম।
দ্বিতীয়বার যখন ক্রিজে ফিরলেন, দল কঠিন মুহূর্তে। হাতে মাত্র ৪ উইকেট। জয়ের জন্য দরকার আরও ৭৬ রান। গোটা বাংলাদেশ তাকিয়ে ছিল ইমন-আকবর জুটির দিকে। সেখান থেকে ম্যাচটা ঘুরিয়ে দিলেন আরও ২২ রান যোগ করে।
শুরুতে সাবলীলভাবে খেলতে পারায় একটা আত্মবিশ্বাস জন্মেছিল। আমার চাওয়া ছিল যেখানে থেমেছি সেখান থেকেই শুরু করতে। রান করে যেতে। খুব বেশি রক্ষণাত্মক হলে ভারতের বোলাররা পেয়ে বসবে। এই ভাবনা থেকেই মাঝে মাঝে একটু আগ্রাসী ব্যাটিং করেছি। অধিনায়ক আকবর ক্রিজে থাকায় সুবিধা হয়েছে। আকবর বলছিল টিকে থাকতে। শেষ করে আসতে পারিনি। বিশ্বাস ছিল আকবর পারবে। রাকিবুল তাকে দারুণভাবে সমর্থন দিয়ে গেছে।
অনূর্ধ্ব-১৯ পর্যায়ে ভারত অপ্রতিরোধ্য দল। তাদেরকে হারানোর রহস্য আসলে কী?
যুব এশিয়া কাপের ফাইনালে আমরা খুব কাছে গিয়ে ভারতের কাছে হেরে যাই। ইংল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালেও এমন হয়েছে। অল্পসময়ের মধ্যে টানা দুইটি ফাইনাল আমরা হেরেছি। তাই সবার মধ্যে একটা জেদ কাজ করেছে ওদেরকে হারাতেই হবে। ওই দুইটা ফাইনাল না হারলে হয়ত বিশ্বকাপ জেতাই হতো না!
আপনার সাহসী ব্যাটিং দেখে মুগ্ধ সবাই। ভবিষ্যতের মনচ্ছবিটা নিশ্চয়ই এখন অনেক বড়?
এখন পরের ধাপ নিয়ে ভাবছি। সামনে প্রিমিয়ার লিগ আছে। যদিও এখনও দল পাইনি (হাসি)। ক্রিকেট ক্যারিয়ার নিয়ে একটাই চিন্তা, ধীরে ধীরে আগানোর। একেকটা ধাপ অতিক্রম করব। এক লাফে উপরে উঠতে চাই না। এটা তো কেবল শুরু…।