টানা তিন ম্যাচ জয়ে আগেই সেমিফাইনাল নিশ্চিত হয়েছে নিউজিল্যান্ডের। আর টানা
হারে শেষ চারের স্বপ্নভঙ্গের পর বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিশ্চিত হয়েছে
বাংলাদেশের। কিউই ম্যাচ দিয়ে আজ বিশ্বকাপ মিশন শেষ করছে টাইগাররা।
গুরুত্বে
বিচারে এই ম্যাচটি পরিণত হয়েছে শুধুই আনুষ্ঠানিকতায়। কিন্তু বাংলাদেশের
জন্য এই ম্যাচ কি? সান্ত্বনার? মুখ রক্ষার? নাকি হৃদয়ের আগুন নেভানোর? এ
ম্যাচে হারলে বিশ্বকাপ থেকে একেবারে খালি হাতে ফিরতে হবে টাইগারদের।
ভারতের বিপক্ষে সেই দুঃস্বপ্নের রাতের পর একটি জয় তাই কিছুটা হলেও
আত্মবিশ্বাস ফেরাতে পারে মাশরাফিদের।
কলকাতার ইডেন গার্ডেনে বেলা সাড়ে ৩টায় শুরু হবে ম্যাচটি। টুর্নামেন্টে নিজেদের প্রথম ম্যাচে ২৬ বছর পর ইডেন গার্ডেনে খেলতে নেমেছিল বাংলাদেশ। সুপার টেনের প্রথম ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে ক্রিকেটের নন্দনকাননে ৫৫ রানে হেরেছিল তারা।
প্রথম ম্যাচ বড় ব্যবধানে হারলেও অস্ট্রেলিয়া ও ভারতের বিপক্ষে দারুণভাবে ফিরে এসেছিল বাংলাদেশ। অস্ট্রেলিয়াকে ভয় ধরিয়ে দিতে পেরেছিলেন মাশরাফিরা। আর ভারতের বিপক্ষে জয়টা তো জেগে ঘুমানো স্বপ্নের মতো বেরিয়ে গেল।
তবে ভারতের বিপক্ষে ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে এই ম্যাচে ঘুরে দাঁড়ানোর কথা বলেছেন বাংলাদেশী অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। ম্যাচ-পূর্ব সংবাদ সম্মেলনে এ প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি।
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে ভারত ম্যাচের শোক কাটিয়ে ওঠার প্রতিজ্ঞা জানিয়ে মাশরাফি বলেছেন, ‘পেশাদার ক্রিকেটার হিসেবে ওখানে পড়ে থাকলে চলবে না। ওটা নিয়ে চিন্তা করে কোনো লাভ নেই। সেদিন ম্যাচ শেষেই বলেছিলাম, বাংলাদেশের ক্রিকেট এখানেই থেমে থাকবে না। দলের প্রতি আমার পরিষ্কার বার্তা, আগের হার নিয়ে চিন্তা করে লাভ নেই। ওটা আর ফিরে আসবে না। সামনের ম্যাচে মন দিতে হবে।’
তিনি আরো বলেছেন, ‘আমার বিশ্বাস, এ অবস্থা থেকেই ঘুরে দাঁড়াতে পারবে দল। আমরা যে ভুল করেছি, তা অস্বীকার করার উপায় নেই। কিন্তু ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে কতটা শোধরাতে পেরেছি, সেটা গুরুত্বপূর্ণ।’
টুর্নামেন্টে তামিম ইকবাল, সাকিব আল হাসান ও সাব্বির রহমান ছিলেন দারুণ ছন্দে। এশিয়া কাপ থেকে নিজের অসাধারণ ফর্ম ধরে রেখেছেন মাহমুদউল্লাহ। তাসকিন আহমেদ ও আরাফাত সানির নিষেধাজ্ঞার পরও প্রতিপক্ষকে চাপে রাখতে পেরেছে বাংলাদেশ।
তবে টি২০ ইতিহাস মোটেই টাইগারদের পক্ষে নেই। আগের তিনবারের দেখায় প্রতিবারই সাফল্য পেয়েছে কিউইরা। সাম্প্রতিক ফর্মের বিচারেও এগিয়ে তারা। সর্বশেষ পাচঁ ম্যাচের পাঁচটিতেই জিতেছে নিউজিল্যান্ড। সেখানে বাংলাদেশের জয় মাত্র দুটিতে। তবে মনে রাখতে হবে এই নিউজিল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করার মতো অভিজ্ঞতা রয়েছে বাংলাদেশ দলের।
বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের বড় শক্তি ওপেনার তামিম ইকবাল। ম্যাচ ঘুরিয়ে দিতে পারেন মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহিম, সাকিব আল হাসান ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। আর ব্যাটে ঝড় উঠলে প্রতিপক্ষ বিধ্বস্ত করতে পারেন সাব্বির রহমানও। আর ফর্মে ফিরেছেন দলের বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। তবে এই ম্যাচে দলে ফিরতে পারেন অবিশ্বাস্যভাবে বাদ পড়া নাসির হোসেন।
নিউজিল্যান্ডের হয়ে লাইমলাইটে থাকবেন ওপেনার মার্টিন গাপটিল। সেই সাথে অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন, কোরি অ্যান্ডারসন, রস টেলর ও স্পিনার ইশ সোদি। তবে আগেই সেমি নিশ্চিত হওয়ায় এই ম্যাচে পরীক্ষা-নীরিক্ষা করতে পারে কিউইরা। সেক্ষেত্রে প্রথম তিন ম্যাচ না খেলা টিম সাউদি ও ট্রেন্ট বোল্ট দলে ফিরতে পারেন।
ইডেনে এর আগে দুইবার খেলেছে বাংলাদেশ। সেই ১৯৯০ সালের ৩১ ডিসেম্বর। আর চলতি মাসের ১৯ মার্চ। প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কার কাছে এবং পরের ম্যাচে পাকিস্তানের কাছে হেরেছিল বাংলাদেশ।
ইডেনে এর আগে দুটি আন্তর্জাতিক টি২০ ম্যাচ হয়েছে। সেখানে প্রথম ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল ভারত ও ইংল্যান্ড। ওই ভারতের করা ১২০ রানের স্কোর সহজেই টপকে ছিল ইংলিশরা। সুতরাং ইডেনের পিচে আন্তর্জাতিক টি২০তে সর্বোচ্চ এবং সর্বনিম্ন রান ১২১ ও ১২০। তবে শেষ ম্যাচে বাংলাদেশের বিপক্ষে ২শ ছাড়া স্কোর গড়েছিল পাকিস্তান।
ইডেনের পিচ ঐতিহ্যগতভাবেই স্পিনারদের অনুকূলে থাকে। চলতি বিশ্বকাপের আগের ম্যাচগুলোতেও তেমনটাই দেখা গেছে। তবে পেসারদের জন্যও কিছুটা বাউন্স থাকে।
আর মৌসুম অনুযায়ী কলকাতায় এই সময়টা ঝড়-বৃষ্টির। তবে বাংলাদেশ-পাকিস্তান ম্যাচকে সামনে রেখে প্রকৃতি বাধা হওয়ার কোনো আভাস এখনো নেই। ওয়েদার ডটকমের পূর্বাভাস অনুযায়ী আজ কলকাতার আকাশ ঝকঝকেই থাকবে। তাপমাত্রা থাকবে ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি।
সম্ভাব্য বাংলাদেশ দল: মাশরাফি বিন মর্তুজা (অধিনায়ক), সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, মুশফিকুর রহিম (উইকেটরক্ষক), সৌম্য সরকার, সাব্বির রহমান, আবু হায়দার রনি/মুস্তাফিজুর রহমান, আল-আমিন হোসেন, মোহাম্মদ মিথুন/নাসির হোসেন, এবং নুরুল হাসান সোহান।
সম্ভাব্য নিউজিল্যান্ড দল: মার্টিন গাপটিল, কেন উইলিয়ামসন (অধিনায়ক), কলিন মুনরো, কোরি অ্যান্ডারসন, রস টেলর, লুক রনচি, গ্রান্ট ইলিয়ট, মিচেল স্যান্টনার, অ্যাডাম মিলনে, মিচেল ম্যাকলেগান/টিম সাউদি, ইশ সোদি/ট্রেন্ট বোল্ট।