বাংলাদেশ দলে পঞ্চপাণ্ডব খ্যাত পাঁচ সিনিয়র- মাশরাফী, সাকিব, মুশফিক, তামিম ও মাহমুদউল্লাহ। ম্যাশ ক্যারিয়ারের অস্তমিত ধাপে, সাকিব নিষিদ্ধ, মুশফিক অধিনায়কত্বের লম্বা একটা সময় কাটিয়ে ফেলেছেন। বাকি দুজনের মধ্যে তামিম অল্পকয় ম্যাচে দায়িত্ব সামলেছেন। আর মাহমুদউল্লাহ দায়িত্ব পেয়েছেন নিয়মিত দলনেতাদের কেউ স্কোয়াডে না থাকলে।
সময় কিছুটা বদলেছে। মাহমুদউল্লাহ এখন নিয়মিত দায়িত্ব পাচ্ছেন। সাকিবের অনুপস্থিতিতে সেটি বেড়েছে। ভারত সফরের পর পাকিস্তান সিরিজেও দায়িত্ব তার কাঁধে। সাকিব আইসিসির নিষেধাজ্ঞায়। এক বছরের স্থগিত নিষেধাজ্ঞা যদি কাটাতে নাও হয়, তার ফিরতে ফিরতে বছরের শেষদিকের টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপ অনেকটা গড়িয়ে যাবে।
টাইগার কোচ রাসেল ডমিঙ্গো তাই দীর্ঘ মেয়াদী ভাবনায়। একদিন আগেই সংবাদমাধ্যমের কাছে বলেছেন, মাহমুদউল্লাহই তার অধিনায়ক। ইঙ্গিত, বিশ্বকাপের জন্য মিডলঅর্ডারের এ ব্যাটসম্যানকে লাইনের সামনে রেখেই ছক এগিয়ে নিতে চান তিনি।
কিন্তু বিসিবি হাঁটছে ভাঙা পথে। তারা মাহমুদউল্লাহর হাতে দীর্ঘ মেয়াদে দায়িত্ব তুলে দিচ্ছেন না। দিচ্ছেন সিরিজ বাই সিরিজ। পরের সিরিজে কে অধিনায়ক? এই বিষয়ে অনিশ্চয়তা থাকলে অধিনায়কত্ব পাওয়া ক্রিকেটারটির পরিকল্পনা সাজাতে কিছুটা ধাক্কা খেতে হয়। বোর্ড, ক্রিকেট, টিম ম্যানেজমেন্ট, কারোরই সেটা অজানা নয়। আবার বিষয়টি যেহেতু বোর্ডের ব্যাপার, দীর্ঘ মেয়াদে দায়িত্ব পেতে ইচ্ছে থাকলেও মাহমুদউল্লাহর বিশেষ কোনো করণীয়ও নেই ক্রিকেট কর্তাদের দিকে তাকিয়ে থাকা ছাড়া।
বুধবার তিন টি-টুয়েন্টির সিরিজ খেলতে পাকিস্তান রওনা দেবে বাংলাদেশ দল। মঙ্গলবার হয়ে গেল সিরিজপূর্ব সংবাদ সম্মেলন। সেখানে দল, পরিকল্পনা, নিরাপত্তা ইস্যুর পাশাপাশি মাহমুদউল্লাহকে বলতে হল অধিনায়কত্ব নিয়েও। টাইগার দলপতি ইচ্ছের কথা গোপন করেননি, তবে বিষয়টি ছেড়ে দিচ্ছেন বিসিবির হাতেই।
‘আমি এখনও জানি না। যেহেতু আমাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে এই সিরিজের জন্য, চেষ্টা করবো দায়িত্বটা পুরোপুরিভাবে কাজে লাগাতে। যেহেতু সিরিজ বাই সিরিজ অধিনায়কত্বের দায়িত্বটি আসছে। যদি আমার প্রতি আস্থা থাকে তাহলে ধন্যবাদ। রাসেল অনেক অভিজ্ঞ একজন কোচ এবং জানে দলের প্রত্যেক ক্রিকেটারকে কীভাবে সামলাতে হয়। আমার মনে হয় সবাই এই জিনিসটি বোঝে এবং তার পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করার চেষ্টা করছেন।’
‘পূর্ণ মেয়াদে অধিনায়কত্ব দিলে তো আমার কাছে অবশ্যই মনে হয় পরিকল্পনার জন্য সাহায্য হবে। এটা সম্পূর্ণ বোর্ডের সিদ্ধান্ত।’
বিপিএলে অনেক রান করলেও তামিম ইকবালের কম স্ট্রাইকরেট নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে। জাতীয় দলে কী ভূমিকা হবে তার সেটি নিয়ে ভাবছেন বলে মন্তব্য করেছেন কোচ রাসেল ডমিঙ্গো। অন্যদিকে, বঙ্গবন্ধু বিপিএলে কেবল ৭ ম্যাচ খেলতে পেরেছেন মাহমুদউল্লাহ। চোট সমস্যায় বাইরে থাকতে হয়েছে। এই কয় ম্যাচেই আবার যা রান তুলেছেন, স্ট্রাইকরেট আসরের সর্বোচ্চ।
পাকিস্তানে এ দুই সিনিয়র ক্রিকেটারের দিকে তাকিয়ে থাকবে দল। মাহমুদউল্লাহ জানালেন, তামিম এবং তিনি নিজে ভালোভাবেই বুঝছেন কী ভূমিকা রাখতে হবে।
‘আমি এবং তামিম- দুজনই ব্যক্তিগতভাবে ফিল করি যে দায়িত্ব বেশি থাকবে। টপঅর্ডারে তামিমের অভিজ্ঞতা অনেকবেশি কাজে আসবে। ও খুব ভালো ছন্দে আছে, রান করেছে এই বিপিএলে। ব্যক্তিগতভাবে চেষ্টা করব আমার দায়িত্ব যেন ভালোভাবে পালন করতে পারি। আমার যে ভূমিকা থাকবে, শেষ পর্যন্ত ব্যাটিং করা- ওই জিনিসটা করার চেষ্টা করব। সবারই দায়িত্ব থাকবে। অনেকের হয়তো ব্যাটিং অর্ডারে পরিবর্তন আসতে পারে, এই জিনিসটা ওরা অলরেডি মেন্টালি অ্যাডাপ্ট করছে বা চিন্তা করছে। আশা করব তারা এটার সাথে মানিয়ে নেবে।’
‘অবশ্যই। যেটা বললাম, আমি খেলাটাকে যত সামনে নিয়ে যেতে পারব ততো দলকে রান এনে দিতে পারব।’ যোগ করেন অধিনায়ক।
টাইগার দল পাকিস্তান সফর করবে তিন দফায়। শুরুতে তিন টি-টুয়েন্টি। ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে একটি টেস্ট ও এপ্রিলে আরেকটি টেস্ট আর একটি ওয়ানডে খেলতে দেশটিতে যাবে তারা। টি-টুয়েন্টি সিরিজের তিন ম্যাচই হবে লাহোরে- ২৪, ২৫ ও ২৭ জানুয়ারি।