তাবলিগ জামাতের বিশ্ব মারকায বা কেন্দ্রস্থল হলো দিল্লির নিজামুদ্দিন মারকায। এখানের যিনি আমির বা প্রধান হন তাকেই বিশ্ব-তাবলিগের আমির বলা হয়। সে হিসেবে বর্তমানে এই গুরু দায়িত্ব পালন করছেন মওলানা সা’দ কান্ধলভী। অন্যদিকে উপমহাদেশে ইসলামি শিক্ষার সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ হচ্ছে দারুল উলুম দেওবন্দ।
মওলানা সা’দের সাম্প্রতিক বক্তব্যগুলো নিয়ে ঘোর আপত্তি জানায় দেওবন্দ। বিশেষ করে ইসলাম শিখিয়ে অর্থ নেয়া এবং নিজামুদ্দিন মারকাযকে মক্কা-মদিনার পর ইসলামের সবচেয়ে বড় কর্তৃপক্ষ দাবি করে দেয়া মন্তব্যে বেজায় নাখোশ হয় দেওবন্দ।
এমনকি ভারতীয় দৈনিকগুলোতেও মওলানা সা’দের বক্তব্যগুলো নিয়ে নানা শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়।
দারুল উলুম দেওবন্দের মুহতামিম বা প্রধান মওলানা আবুল কাসেম নোমানি, নদওয়াতুল উলামা’র প্রিন্সিপাল মাওলানা সাইয়্যিদ সালমান আহমদ নদভী ও দিল্লির আইম্মা পরিষদের চেয়ারম্যান, মুফতি ওয়াজাহাত কাসেমি এক যৌথ বিবৃত দেন করেন। এই বিবৃতি ভারতের জাতীয় দৈনিকগুলো ‘তাবলিগ জামাতের আমির মৌলবি সা’দের ‘কুফরি কালিমা’ নিয়ে মুসলমানদের মঝে তোলপাড়’ শিরোনামে হাইলাইট করে প্রকাশ করা হয়।
ওই বিবৃতিতে মারকায আমির মওলানা সা’দ কান্ধলভীকে লিখিত আকারে তার বক্তব্য থেকে সরে আসার আহ্বান জানানো হয় এবং এও উল্লেখ করা হয়, যদি এতে তিনি নিজের অবস্থান থেকে ফিরে না আসেন তাহলে আকাবিরে উলামা যে কোনো কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হবে।
নিজামুদ্দিনে একটি চিঠিও পাঠায় দেওবন্দ। এই পরিস্থিতিতে মওলানা সা’দ দেওবন্দ মাদ্রাসার প্রধান বা মুহতামিম মওলানা আবুল কাসেম নোমানিকে একটি জবাবি চিঠি পাঠান।
সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে প্রকাশিত এই চিঠির লেখা অনুযায়ী সা’দ বলেন:“ আপনাদের লিখিত পত্র হস্তগত হয়েছে, যাতে অধমের বিভিন্ন বয়ানে উল্লেখিত কিছু আফকার ও দৃষ্টিভঙ্গির বিষয়ে আপনাদের দারুল ইফতায় অভিযোগ এসেছে বলে উল্লেখ করা হয়। যেমন: কুরআন- হাদিসের ভুল বা মারজুহ ব্যাখ্যা, মনগড়া তাফসির, আম্বিয়ায়ে কেরামের শানে বেয়াদবি, সর্বসম্মত ফতোয়ার বিপরীতে ব্যক্তিগত রায় বা জুমহুরে উম্মতের মতের বিপরীতে বিশেষ মত গ্রহণ ইত্যাদি।
এবিষয়ে প্রথমত আমি অধম কোন প্রকার চিন্তা- ভাবনা ছাড়াই স্পষ্ট ভাষায় নিজের অবস্থান পরিষ্কার করা জরুরি মনে করি যে, আমি আলহামদুলিল্লাহ আমাদের সমস্ত আকাবির উলামায়ে দেওবন্দ ও সাহারানপুর এবং তাবলিগ জামায়াতের আকাবির মাওলানা মুহাম্মাদ ইউসুফ ও মাওলানা মুহাম্মাদ ইনআমুল হাসান রহঃ এর মাসলাক ও আদর্শের উপর কায়েম আছি এবং এর থেকে সামান্য পরিমাণ বিচ্যুতিও পছন্দ করি না।
লিখিত পত্রে যেসব পুরাতন বয়ানের হাওয়ালা উল্লেখ করা হয়েছে আমি অধম দ্বীনী দায়িত্ব মনে করে সেগুলো থেকে পরিষ্কার শব্দে ‘রুজ’’ করছি এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাচ্ছি।”
মওলানা সা’দ ২০১৫, ১৬ ও গত বছর বিশ্ব ইজতেমার আখেরি মুনাজাত করেন। তবে এবার দেওবন্দ এবং নিজামুদ্দিনের মধ্যে ভারতে বিরাজমান উত্তেজনা দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশে। এর মূল কারণ মওলানা সা’দের দেয়া বক্তব্য।
বাংলাদেশের বেশিরভাগ মাদ্রাসাই দেওবন্দ আদর্শের। সেদিক বিবেচনায় মওলানা সাদ বিদ্বেষের চূড়ান্ত রূপ দেখা যাচ্ছে ঢাকার এয়ারপোর্ট সড়কে, চলছে তাকে ঠেকানোর বিক্ষোভ। মওলানা সা’দ এবারও বিশ্ব ইজতেমায় যোগ দিতে বাংলাদেশে এসেছেন। বর্তমানে কাকরাইল মসজিদে অবস্থান করছেন মওলানা সা’দ। তার ইস্তেমায় যোগ দেয়া ঠেকানোর জন্য কাকরাইলের দিকে পাঁচহাজার মাদ্রাসা শিক্ষার্থীকে নির্দেশ দিয়েছে তাদের নেতৃবৃন্দ।