চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

সফলতার গল্প শোনালেন দিলীপ কুমার আগারওয়াল

সমাজের কাজে বাকী জীবন উৎসর্গ করতে চান এই ব্যবসায়ী

চুয়াডাঙ্গা থেকে উঠে এসে বাংলাদেশের শিল্প ব্যবসা বাণিজ্যের নেতৃত্বে নিজেকে অধিষ্ঠিত করেছেন স্বনামধন্য উদ্যোক্তা ব্যক্তিত্ব দিলীপ কুমার আগারওয়াল। তিনি বর্তমানে দেশে গোল্ড বাংক চালু এবং অর্গানিক পণ্য উৎপাদন করে বিদেশে রপ্তানি করার লক্ষ্যে নিরলস কাজ করে চলেছেন।

২০১৫-২০১৭ মেয়াদে এফবিসিসিআই এর নির্বাচিত পরিচালক হিসেবে সফলভাবে দায়িত্ব পালন করে ফেডারেশনের উন্নতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। কাজের স্বীকৃতি হিসেবে দিলীপ কুমার আগারওয়ালকে আবারো ২০১৭-২০১৯ মেয়াদে পরিচালক হিসেবে নির্বাচিত করেছেন এফবিসিসিআই এর ভোটাররা। এছাড়া বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ জুয়েলারি সমিতির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন এবং স্বর্ণ আমদানি নীতিমালা প্রণয়নের জন্যে বিশেষ ভূমিকা রেখে চলেছেন।

বাংলাদেশে ডায়মন্ড জুয়েলারি জনপ্রিয় এবং সহজলভ্য করে তোলার পেছনে দিলীপ কুমার আগারওয়ালের ভূমিকা অগ্রগণ্য। ডায়মন্ডওয়ার্ল্ড এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে এর শাখা বাংলাদেশের জেলা শহরগুলোতে ছড়িয়ে দেয়ার স্বপ্ন নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে চলেছেন তিনি। সম্প্রতি তিনি একান্ত আলাপচারিচায় খোলামেলা সাক্ষাতকারে অংশ নেন।

প্রশ্ন: আপনার ব্যবসা সাফল্যের এই গল্পের শুরু হয় কীভাবে?
দিলীপ কুমার আগারওয়াল: আমি ২০০০ সালে বড় স্বপ্ন নিয়ে ঢাকায় এসেছিলাম।

প্রশ্ন: কোথা থেকে এসেছিলেন?
দিলীপ কুমার আগারওয়াল: আমার হোম টাউন চুয়াডাঙ্গা। সেখানে আমার বাবার ব্যবসা ছিল এবং আমি নিজে কনস্ট্রাকশনের ব্যবসা করতাম।

প্রশ্ন: কনস্ট্রাকশন থেকে ডায়মন্ডের বিজনেসে সরাসরি এলেন?
দিলীপ কুমার আগারওয়াল: জ্বি, সরাসরি।

প্রশ্ন: কেন, এই ব্যবসা আপনাকে আকর্ষণ করলো?
দিলীপ কুমার আগারওয়াল: এর অনুপ্রেরণা আমার একজন বন্ধু বলেছিল যে, বাংলাদেশে ২০২০/২১ সালে ডায়মন্ডের বিরাট মার্কেট গ্রো হবে। সে বলছিল আমার একজন মানুষ দরকার, যে বড় হওয়ার জন্যে স্বপ্ন দেখবে? সে বলেছিল- দিলীপ আমার মনে হয়েছে, তোর মধ্যে এই প্রতিভা আছে। তুই ২০ বছর রান করে দেখ?

প্রশ্ন: আপনি তখন জানতেন বাংলাদেশের মানুষের পকেটে যথেষ্ট টাকা নেই?
দিলীপ কুমার আগারওয়াল: আসলেই ছিল না।

প্রশ্ন: তারা ডায়মন্ডের স্বপ্ন দেখে না? তারা একটু সোনা-রুপার গহনাতেই খুশি? তখন আপনার মনে হয়নি এটি বেশি চিন্তা?
দিলীপ কুমার আগারওয়াল: না। আমি ব্যক্তিজীবনে সবসময় চ্যালেঞ্জ নিতে ভালবাসি। কোন কাজ করি তার ভেতরে যদি কোন চ্যালেঞ্জ না থাকে তবে তার ভেতরে মজা থাকে না।

প্রশ্ন: শুরু করলেন কত সালে?
দিলীপ কুমার আগারওয়াল: ২০০০ সালে। সেই সময় একটা ডায়মন্ডের এলসি করার জন্যে আমার দুই বছর লেগেছে। যেটা আমরা এখন দুই দিনে করি।

প্রশ্ন: শুরুতে সব কাজই কষ্টের? আর কী কী প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখী হয়েছিলেন?
দিলীপ কুমার আগারওয়াল: অনেক। ব্যাংকের এলসি। লুজ ডায়মন্ড যখন প্রথম আসলো এয়ারপোর্টে। এই দেশে অফিসিয়ালি ডায়মন্ড আসছে তা দেখার জন্যে কাস্টমস এর বড় ইউনিট এয়ারপোর্টে নিয়ে গেল। প্রতিটি ডায়মন্ড তারা দেখলো। কাস্টমস থেকে বলেছে- এই ডায়মন্ড যেন না পড়ে। একটা বক্সের মধ্যে টিনের বক্সে প্রথম চালান বাংলাদেশে আসলো। এটি দেখার জন্যে ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া, প্রিন্ট মিডিয়া এবং কাস্টমসের লোকেরা ভিড় করেছিল।

প্রশ্ন: ডায়মন্ডের গ্রেড আছে। ভালো, মন্দ, আর্টিফিসিয়াল- এই সম্পর্কে বলুন?
দিলীপ কুমার আগারওয়াল: ডায়মমন্ডের একটা সংজ্ঞা হলো ফোর সি। কাট, ক্লিয়ারিটি, ক্যারেট, কালার। এর মেইন বিষয় হলো এর কালার স্টার্ট হয় হলো ডি থেকে এইচ বা আই পর্যন্ত। এর ক্লিয়ারিটি চালু হয় আইএফ থেকে এসআই টু পর্যন্ত। আমি একটা জিনিস বলতে চাই- আমার একটা ওয়েবসাইট আছে। ডব্লিউ ডব্লিউ ডব্লিউ ডট ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড এলটিডি ডট কম। এখানে নলেজ বলে একটা পেইজ আছে- একটা মানুষ ডায়মন্ড সম্পর্কে যা কিছু জানতে চায় তা ওই পেইজ এ সবাই পাবেন।

প্রশ্ন: ডায়মন্ডের যে প্রথম চালান লিগ্যালি বাংলাদেশে এসেছিল ব্যবসার জন্যে তার গুণগত মান কেমন ছিল?
দিলীপ কুমার আগারওয়াল: এটি ছিল এসআই টু ক্লিয়ারিটি। কালার ছিল জিএইচ। ডায়মন্ডের কথা বলতে গেলে প্রথমে দুটো প্রতিবন্ধকতা ফেস করেছি। নাম্বার ওয়ান হলো কে মেকিং করবে? এটি মেক করার জন্যে যেসব কারিগর দরকার তা আমরা পাই ঢাকার তাঁতী বাজার, শাখারি বাজার, আরেকটি হলো বিডিআর গেট। সবাই এই জায়গার নাম মনে হয় শুনেছেন? এই জায়গাগুলো মোটামুটি কারিগররা বসেন। ডায়মন্ড নিয়ে আসার সময়ে আমরা যেমন বিরাট প্রতিবন্ধকতায় পড়েছিলাম, তেমনি এটি কাকে দিয়ে বানাবো এই বিষয়েও অনেক কষ্ট পোহাতে হয়েছে। তারপর দলগত উদ্যোগে আমি ২০০২-২০০৫ পর্যন্ত হোল সেল করেছি। বিভিন্ন দোকানে গিয়ে ডায়মন্ডের মার্কেট সম্পর্কে স্টাডি করেছি যে, হোয়াট ইজ নীড? এই দেশের মানুষ কী চায়? যারা আমার ক্রেতা হবেন তারা কী চায়?

প্রশ্ন: হোলসেলের পরের অংশটুকু কী ছিল?
দিলীপ কুমার আগারওয়াল: আমি দলগত উদ্যোগে ২০০৫ সালের ১৪ আগস্ট ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড এর জন্ম। তারপরে হাঁটি হাঁটি পা পা করে বর্তমানে আমাদের ১৯ টা আউটলেট আছে। আর একটা অনলাইন আউটলেট আছে। আমরা সব সময় চেষ্টা করেছি কাস্টমারের ডিমান্ড আর তাদের বেটার সার্ভিস দেওয়ার।

প্রশ্ন: আমাদের তখন কোন স্বর্ণ নীতিমালা ছিল না?
দিলীপ কুমার আগারওয়াল: নীতিমালা ছিল না। স্বর্ণ নীতিমালায় আমি আরেকটা স্বপ্ন দেখেছিলাম যে, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে বাণিজ্যমন্ত্রী এবং এফবিসিসিআই এর সহযোগিতা নিয়ে স্বর্ণ নীতিমালা জাস্ট ডিক্লিয়ার হবে। আই হোপ নতুন যে বৈশাখ আসছে তার পরে এটি সরকার অফিসিয়ালি ডিক্লিয়ার দেবে। নীতিমালার জন্যে নীতিগত সিদ্ধান্ত সরকার নিয়েছে। এটি আমরা দিতে পারি না। তাই সরকারকেই এই নীতিমালা দিতে হবে। আমরা এটি চূড়ান্ত করেছি। এটিও আমার একটি স্বপ্ন ছিল।

প্রশ্ন: গহনা কেনার ক্ষেত্রে আমাদের কি ক্রয় ক্ষমতা কেড়েছে?
দিলীপ কুমার আগারওয়াল: একশত ভাগ বেড়েছে। আমরা উন্নয়নশীল দেশ থেকে উন্নত দেশে পদার্পণ করতে যাচ্ছি। তাই আমাদের পার্চেজ পাওয়ার অনেক বেড়েছে। আর এই নীতিমালা হওয়ার কারণে স্বর্ণের বর্তমান যে বাজারমূল্য তা থেকে ভরিতে তিন থেকে চার হাজার টাকা কমবে। তখন কেনার পরিমাণ আরও বাড়বে। আমাদের ফরেন কারেন্সি যেটি বাইরে চলে যাচ্ছে তা আর বাইরে যাবে না।

প্রশ্ন: ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড এফবিসিসিআই আর কী কী করছেন?
দিলীপ কুমার আগারওয়াল: আমি আমার প্রতিটি জিনিস নিয়েই স্বপ্ন দেখছি। যখন আমি ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড শুরু করি তখন আমি স্বপ্ন দেখেছিলাম ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডকে পাবলিক লিমিটেড করবো। ডায়মন্ডকে আমি মধ্যবিত্ত মানুষের নাগালে নিয়ে আসবো। পরে আমি যখন এফবিসিসিআইতে পরিচালক হলাম, ৪৫ দিনে ১৯ হাজার কিলোমিটার জার্নি করেছিলাম। বাংলাদেশের প্রতিটি ভোটারের কাছে গিয়ে বলেছি যে, তোমরা আমাকে নির্বাচিত করো। তখনও স্বপ্ন দেখেছি যে, একজন পরিচালক হিসেবে আমার উপরে যে দায়িত্ব আসবে সেই দায়িত্ব সফলতার সাথে পালন করবো। পরে আমি যেহেতু জুয়েলারি ব্যবসা করি সব জুয়েলার মিলে আমাকে সাধারণ সম্পাদক করে দিল জুয়েলারি সমিতির। আমার উপরে একটা বিরাট গুরু দায়িত্ব আসলো যে, আমাদের স্বর্ণ নীতিমালা করে দিতে হবে।

আমি বোধহয় বিগত ৬ মাস আমার ব্যক্তিগত অফিস করিনি। কোন সময় অর্থ মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড- এই সব জায়গায় ঘুরে ঘুরে এই স্বর্ণ নীতিমালা নিয়ে এসেছি। আগামীতে আমার একটা স্বপ্ন আছে যে, গোল্ড ফর ক্যাশ। গোল্ড হলো মেয়েদের কাছে ওয়ান কাইন্ড অব অ্যাসেট। আমার পরবর্তী স্বপ্ন হলো, মানুষের গোল্ড রেখে তাদেরকে লোন সরবরাহ করবো। এই স্বপ্নও যাতে বাস্তবায়ন করতে পারি সেই দোয়া চাই সকলের কাছে।

প্রশ্ন: একসময় গ্রামে ছিল এই ধরণের ব্যবসা?
দিলীপ কুমার আগারওয়াল: তখন মানুষ ডিপ্রাইড হতো। অফিসিয়ালি সিস্টেম ছিল না। রেট অব ইন্টারেস্টে ইজ ভেরি হাই। আমি তিনটে জিনিসই করেছি যেখানে ডিপ্রাইড হওয়ার কোন সুযোগ নাই। যে ব্যক্তি জুয়েলারি নিয়ে আসবে সে তার লকারে এটি রাখবে। তার বিনিময়ে সে কী নিয়ে যাবে। অ্যাজ এ ব্যাংক সিস্টেম। ব্যাংকে যেভাবে হয়।

প্রশ্ন: আপনাকে দেখে তরুণরা উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন নতুন জানালা খুলে দেওয়ার?
দিলীপ কুমার আগারওয়াল: অবশ্যই। আমার প্রতিষ্ঠানের নাম শুধু ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড। আমাদের জুয়েলারি সমিতির হিসাবে ১ হাজার ডায়মন্ড এর দোকান আছে। এই স্বপ্ন তারাও দেখছে। স্বপ্ন না দেখলে তো বড় হওয়া যায় না? আগে স্বপ্ন দেখতে শিখতে হবে। তারপরে মানুষ সেই স্বপ্ন পূরণ করবে।

প্রশ্ন: পৌঁছাতে চান কোথায়?
দিলীপ কুমার আগারওয়াল: আমি আমার প্রতিষ্ঠানকে পাবলিক লিমিটেড করতে পারলে দেশের সবাই এই প্রতিষ্ঠানের অংশীদার হবে। এটি একটি বড় স্বপ্ন আমার জীবনের। আরেকটি স্বপ্ন হলো। আমি ইতোমধ্যে কলেজ করেছি, আর কয়েকটি ওল্ডকেয়ার হোম করতে চাই। আমি আমার মায়ের নামে ‘তারা দেবী ফাউন্ডেশন’ করেছি।

প্রশ্ন: আপনি আপনার জেলায় অনেক কিছু করছেন- জনপ্রতিনিধি হওয়ার ইচ্ছে আছে?
দিলীপ কুমার আগারওয়াল: ব্যবসায়ীদেরকে টেষ্ট করেছেন প্রধানমন্ত্রী যে, তারা রাজনীতিতে সফল হতে পারেন কিনা? যেমন আনিসুল হক ভাইয়ের কথা এখানে না বললেই নয়। আনিস ভাই আমাদের উদাহরণ। একজন ব্যবসায়ী রাজনীতিতেও সফল হতে পারেন সুযোগ পেলে।

প্রশ্ন: এবং তিনি যদি স্বপ্নবান হন?
দিলীপ কুমার আগারওয়াল: পরে আমরা আতিক ভাইয়ের কথা বলতে পারি। প্রধানমন্ত্রী আবার তাকে সিলেকশন করেছেন। যদি একজন ব্যবসায়ী রাজনীতিতে আসে তাহলে তিনি করাপশন করবেন না। বর্তমানে মানুষ ভয় পায় করাপশনকে। ব্যবসা আমি অনেক করেছি। মানুষ যদি চায় তবে মানুষের কাছে সমাজের কাজে বাকী জীবন উৎসর্গ করতে চাই।

প্রশ্ন: ২০১৭-২০১৯ মেয়াদে এফবিসিসিআই নির্বাচনে আপনি পুনরায় নির্বাচিত হয়েছেন, মূল্যায়ন কীভাবে করবেন ?
দিলীপ কুমার আগারওয়ালা: ধন্যবাদ! আমি বিভিন্ন ব্যবসার সাথে জড়িত থাকলেও আমার মনে হয় আমার ব্যবসায়ীক জীবনের পূর্ণতা এসেছে ফেডারেশন এর ডিরেক্টরশীপের মাধ্যমে। পরিচালক হিসেবে গত দুই বছর আমি আমার উপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনের জন্য সময়, মেধা, শ্রম ও ক্ষমতার সর্বোচ্চ ব্যবহার করেছি। আর মূল্যায়নের কথা আমার মনে হয় বলা উচিত হবে না। মূল্যায়নের দায়িত্ব আপনাদের, ফেডারেশনের সকল মেম্বারদের।

গত ২১ মে আমরা ২০১৭-২০১৯ মেয়াদের জন্য দায়িত্বভার গ্রহণ করি। আমি আপনাদের মাধ্যমে এফবিসিসিআই এর সাথে সংশ্লিষ্ট সবাইকে জানাই আন্তরিক ধন্যবাদ। আমি সকলের কাছে কৃতজ্ঞ পুনরায় আমাকে এফবিসিসিআই এর পরিচালকের দায়িত্ব পালনের সুযোগ দেওয়ার জন্য।

প্রশ্ন: আপনি তো গত মেয়াদে ডিরেক্টর ইনচার্জ অব স্যান্ডিং কমিটি অন ক্যাপিটাল মার্কেট হিসেবেও ছিলেন বা এখনো আছেন। আপনার মেয়াদকালে আপনি এই সেক্টরের জন্য কী ভূমিকা রেখেছেন?
দিলীপ কুমার আগারওয়াল: আমি পুজিঁ বাজারের স্থিতি অবস্থা আনয়নের লক্ষ্যে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে অবহিতকরণ ও সচেতনতামূলক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করেছি। এছাড়াও আমি দেশী ব্যবসায়ীদের স্বার্থে জাতীয়ভাবে চোরাচালানবিরোধী বিভিন্ন উদ্যোগ হাতে নিয়েছি।

প্রশ্ন: এফবিসিসিআই নির্বাচনের আগে আপনি আপনার কিছু স্বপ্নের কথা শেয়ার করেছিলেন, সেটা যদি আবারো শেয়ার করতেন?
দিলীপ কুমার আগারওয়ালা: এটা আমার একটা পারসোনাল অপিনিয়ন। আমার মনে হয় যেদিন থেকে আমরা স্বপ্ন দেখা বাদ দেব বা ভুলে যাব, সেদিন থেকে আমাদের অগ্রগতিও থেমে যাবে। আমার স্বপ্ন ছিল উন্নত দেশের মতো এদেশেও গোল্ড ব্যাংকিং এর কার্যক্রম চালু করা। জরুরী প্রয়োজনে অসহায় মানুষের হাতে নগদ অর্থ পৌঁছে দেওয়া। আমি আমার স্বপ্ন বাস্তবায়নের দ্বারপ্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছি, চালু করতে যাচ্ছি গোল্ড ফর ক্যাশ পলিসি। আপনারা আমার জন্য দোয়া করবেন। আমি আপনাদের সাথে নিয়ে বাংলাদেশের প্রতিটি জেলায় গোল্ড ব্যাংকিং এর কার্যক্রম শুরু করতে চাই।

আমার দ্বিতীয় স্বপ্ন হলো একটি অর্গানিক ফার্ম স্থাপন করা। আমি প্রতিটি চেম্বারকে সম্পৃক্ত করে স্থানীয় জনসম্পদ ও রিসোর্স ব্যবহার করে এবং উন্নত প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে দেশীয় চাহিদা পূরণ করে বিদেশে অগার্নিক পণ্য রপ্তানি করতে চাই। আমার ইচ্ছা আছে বাংলাদেশের প্রতিটি জেলায় অন্তত একটি করে ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের শোরুম ওপেন করা। যেসকল জেলা শহরে আমাদের শোরুম নেই পর্যায়ক্রমে আপনাদের সাথে নিয়ে সেই সকল জেলায় একটি করে শোরুম স্থাপন করবো।

প্রশ্ন: আপনি তো ডিরেক্টর ইনচার্জ অব স্ট্যান্ডিং কমিটি অন থার্স্ট সেক্টর- ডায়মন্ড অ্যান্ড জুয়েলারি হিসেবে আছেন। আপনার মেয়াদকালে অপনি এই সেক্টরের জন্য কী ভূমিকা রেখেছেন?
দিলীপ কুমার আগারওয়ালা: আপনাকে পুনরায় ধন্যবাদ একটি সুন্দর প্রশ্ন করার জন্য। আপনারা জানেন যে, আমি বাংলাদেশ জুয়েলারি সমিতির সাধারণ সম্পাদকের পদেও আছি। আমি স্বর্ণ আমদানি নীতিমালা, স্বর্ণনীতি, স্বর্ণ শুল্ক, স্বর্ণ শিল্পের বিকাশের জন্য স্পেশাল ইকোনমিক জোন বা ইপিজেড স্বর্ণ শিল্পীদের মান-উন্নয়নের জন্যে নিমার্ণের জন্য বিভিন্ন মন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাথে একাধিকবার আলোচনা করেছি, সাধারণ জুয়েলার্সদের কল্যাণে করেছি দরকষাকষি। আমি আপনাদের মাধ্যমে এজন্য মন্ত্রীদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি যে, তাদের শত ব্যস্ততার মধ্যেও আমাকে সময় দিয়েছেন, মনোযোগ দিয়ে ব্যবসায়ীদের স্বার্থে আমার কথা শুনেছেন এ কারণে।

প্রশ্ন: বর্তমানে তো বাংলাদেশের জুয়েলারি সেক্টরে আনরেস্ট চলছে, কারণ কী এবং এটা প্রশমনে আপনারা সমিতির পক্ষ থেকে কী কী পদক্ষেপ নিয়েছেন?
দিলীপ কুমার আগারওয়ালা: জ্বি ঠিকই বলেছেন, বাংলাদেশের জুয়েলারি সেক্টরে সম্প্রতি যা ঘটেছে তা অনাকাঙ্খিত ও দুঃখজনক। গত ২৫ তারিখ জাতীয় প্রেস ক্লাবে আমরা বাংলাদেশ জুয়েলারি সমিতির পক্ষ থেকে আমাদের সুস্পষ্ট দাবী জাতির সামনে তুলে ধরেছি।

আমরা আশা করি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা তার মাতৃকোমল হাতে বিষয়টি বিবেচনা করবেন। তিনি আমাদের সকলের অভিভাবক। আমি আপনাদের মাধ্যমে বাংলাদেশ জুয়েলারি সমিতির পক্ষ থেকে ২৮ লাখ মানুষের প্রতিনিধি হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের যৌক্তিক দাবী পূরণের জন্য বিনয়ের সাথে অনুরোধ জানাচ্ছি।

প্রশ্ন: জুয়েলারি শিল্পের জন্য সরকারের তরফ থেকে দেওয়া সুযোগ সুবিধা সম্পর্কে বলুন? আরো কী ধরনের সুবিধা দিলে দেশে এ ধরনের ব্যবসার বিকাশ ঘটবে?
দিলীপ কুমার আগারওয়ালা: প্রথমেই বলি আমাদের বর্তমান সরকার খুবই ব্যবসা বান্ধব সরকার। আপনারা জানেন যে বিদেশী বিনিয়োগ উৎসাহী করার জন্য বর্তমান সরকার সারাদেশে বিশেষ ইকোনোমিক জোন তৈরির কাজ ইতোমধ্যে শুরু করে দিয়েছে। ব্যাংক ঋণের হার সিঙ্গেল ডিজিটে চলে এসেছে। সেক্ষেত্রে জুয়েলারি শিল্পের জন্য একটি স্পেশাল জোন তৈরি করে জমি বরাদ্দ ও অবকাঠামো নির্মাণে সাহায্য করতে হবে এবং পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা ও সহজে ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থা করতে হবে। একই সাথে আমি আপনাদের মাধ্যমে সরকারের কাছে আবেদন জানাবে যে, জুয়েলারি শিল্পের জন্য একটি ব্যবসা বান্ধব ও টেকসই স্বর্ণ নীতিমালা প্রণয়ন করার জন্য যাতে আমরা নিরাপদে ও সহজে এ ব্যবসার প্রসার ঘটাতে পারি।

প্রশ্ন: দেশের ব্যবসায়ী সমাজের একজন নেতা হিসেবে বর্তমান ব্যবসায়ীক পরিস্থিতি সম্পর্কে মূল্যায়ন করুন।
দিলীপ কুমার আগারওয়ালা: আমার ব্যবসায়িক অভিজ্ঞতা বলে- বাংলাদেশ এখন একটা ভালো ও সম্ভাবনাময় বাজার, এখানে আছে সহজলভ্য শ্রম, আছে ব্যাংকের হাতে যথেষ্ট পরিমাণ টাকা আর অনেক সফল ব্যবসায়ী। বাজার মূলধন, শ্রমিক আর উদ্যোক্তা এই তিনের সমন্বয়ে গড়ে ওঠে একটি সফল ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের সঠিক দিক নির্দেশনা। আমার মতে, বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে সম্ভাবনাময় ব্যবসায়িক ক্ষেত্র হিসেবে বাংলাদেশ একটি সঠিক জায়গা।

প্রশ্ন: একটু ভিন্ন প্রসঙ্গে আসি, সম্প্রতি আপনি প্রেম’স কালেকশনস্ নামে একটি নতুন ফ্যাশন হাউজ এর কাজে হাত দিয়েছেন, কারণ কী?
দিলীপ কুমার আগারওয়ালা: আসলে এদেশের ফ্যাশন সচেতন মানুষের কথা মাথায় এনে ঐতিহ্য ও আধুনিকতা বিবেচনা করে প্রাচ্য ও পাশ্চত্যের এক অপূর্ব সমন্বয়ে প্রেম’স কালেকশনের সৃষ্টি। মূলত এদেশের অবকাঠামো, ম্যানপাওয়ার, ডিজাইন ও বিশ্বমানের প্রযুক্তি ব্যবহার করে কর্মসংস্থানে সুযোগ তৈরির লক্ষ্যেই প্রেম’স কালেকশনে হাত দেয়া।

প্রশ্ন: একজন সফল ব্যবসায়ী হিসেবে নতুন ও উদীয়মান ব্যবসায়ীদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?
দিলীপ কুমার আগারওয়ালা: পরামর্শ বলতে শুধু একটা কথাই বলব- দেখুন ২০০৫ সালেও আমি একজন সাধারণ ব্যবসায়ী ছিলাম, আজ আমি এখানে শুধু চারটা কারণে- প্রথমত স্বপ্ন, আমি স্বপ্ন দেখতাম বড় ব্যবসায়ী হবার, দ্বিতীয়ত- কমিটমেন্ট, আমি যদি কোন কমিটমেন্ট করি তবে তা আজও পর্যন্ত রক্ষা করি, তৃতীয়ত- কঠোর পরিশ্রম, চতুর্থত- টাইম ম্যানেজমেন্ট। সফল আপনি হবেনই। হয় আজ, নাহয় কাল, তা না হলে পরশু।