মানবতাবিরোধী অপরাধে আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর আপিলের পূর্ণাঙ্গ রায়ের কপি প্রকাশ করেছেন আপিল বিভাগ। এরফলে আজ (বুধবার) থেকে ১৫ দিনের মধ্যে রিভিউ আপিল করার দিন গণনা শুরু হলো।
রিভিউ আপিলে রায় বহাল বা পরিবর্তনের বিষয়টি নিস্পত্তি হলেই মানবতাবিরোধী অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত ওই দু’জনের দণ্ড কার্যকর হবে।
গত ১৬ জুন বুদ্ধিজীবীদের ঘাতক জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে রায় ঘোষণা করেন। এরপর ২৯ জুলাই ট্রাইব্যুনালের দেয়া ফাঁসির আদেশের বিরুদ্ধে বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর আপিল বাতিল করে ফাঁসির রায় বহাল রাখেন আদালত। সেসময় সংক্ষিপ্তাকারে রায় প্রকাশ হলেও এখন পূর্নাঙ্গাকারে তাদের বিচারিক চূড়ান্ত রায় প্রকাশ হলো। রায়ের কপি সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটেও প্রকাশ করা হবে বলে আদালত সূত্রে জানা গেছে।
প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে আপিল বিভাগের ৪সদস্যর বেঞ্চ এক অপরাধে মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন, একটিতে মৃত্যুদণ্ডের বদলে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেন এবং অন্য একটিতে আপিল গ্রহণ করে মৃত্যুদণ্ড থেকে অব্যাহতি দেয়ার কথা জানান।
যে তিন অপরাধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল মুজাহিদকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিলেন তার মধ্যে বুদ্ধিজীবী হত্যায় সহযোগিতা ও পরিকল্পনার অপরাধে তার মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন আপিলবিভাগ।
তবে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডে ফাঁসির আদেশ হওয়ায় আলাদাভাবে সাংবাদিক সিরাজুদ্দিন হোসেনকে অপহরণের পর হত্যার অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড থেকে মুজাহিদকে অব্যাহতি দেন সর্বোচ্চ আদালত।
আর ফরিদপুরের বকচর গ্রামে হিন্দুধর্মাবলম্বীদের ওপর হামলা চালিয়ে হত্যা ও নির্যাতনের অপরাধে মৃত্যুদণ্ডের পরিবর্তে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছেন আপিল বেঞ্চ।
এছাড়া অন্য দুটি অপরাধে মুজাহিদকে দেয়া ট্রাইব্যুনালের সাজাবহাল রাখেন আপিল বিভাগ।
তবে রিভিউ আবেদন করতে হয় পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের ১৫ দিনের মধ্যে।
২০১৩ সালের ১৭ জুলাই বুদ্ধিজীবী হত্যায় সহযোগিতা ওপরিকল্পনা, সাংবাদিক সিরাজুদ্দিন হোসেনকে অপহরণ ও হত্যা এবং ফরিদপুরের বকচর গ্রামে হিন্দুধর্মাবলম্বীদের ওপর হামলা চালিয়ে হত্যা ও নির্যাতনের মতো অপরাধে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২।
২০১০ সালের ২ আগস্ট মানবতাবিরোধী অপরাধে মুজাহিদকে গ্রেফতার দেখানো হয়। ওই বছরের২৯ জুন তাকে গ্রেফতার করা হয় ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার অভিযোগে। এ আলবদর নেতার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধে বিচার শুরু হয় ২০১২ সালে ২১ জুন।
গত ২৯ জুলাই ট্রাইব্যুনালের দেয়া ফাঁসির আদেশের বিরুদ্ধে বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর আপিল বাতিল করে ফাঁসির রায় বহাল রাখেন আদালত। প্রধানবিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বেআপিল বিভাগের চার সদস্যের বেঞ্চএ রায় ঘোষণা করেন।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১চারটি অভিযোগে ২০১৩ সালের ১অক্টোবর সালাউদ্দিন কাদেরকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিলেন।
গণহত্যা, হত্যার ৪ অভিযোগে ২০১৩ সালের ১ অক্টোবর সালাউদ্দিন কাদেরকে মৃত্যুদণ্ড, একইসঙ্গে গণহত্যা ও হত্যার আরও ৩ অভিযোগে ২০ বছর করে এবং নির্যাতনের ২ অভিযোগে ৫ বছর করে কারাদণ্ড দেয়াহয়। আপিলের রায়ে শুধুমাত্র একটি অপহরণের অভিযোগে দেওয়া ২০ বছরের কারাদণ্ড থেকে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে খালাস দেয়া হয়েছে।
এর আগে আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, মোহাম্মদ কামারুজ্জামান ও আবদুল কাদের মোল্লার আপিলের রায় ঘোষণাকরেছেন আদালত। তাদের মধ্যে কামারুজ্জামান ও কাদের মোল্লারফাঁসি কার্যকর হয়েছে। আর আজীবন কারাদণ্ডাদেশ ভোগ করছেন সাঈদী।
২০১২ সালের ডিসেম্বরে অন্যএকটি মামলায় গ্রেফতার হলেও একই বছরের ৩০ ডিসেম্বরতাকে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আটকাদেশ দিয়ে কারাগারে পাঠান ট্রাইব্যুনাল।