লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে যে জাতীয় পতাকা, সেই পতাকা উড়েছিলো ঘাতক মুজাহিদের বাড়িতে, গাড়িতে। জাতীয় পতাকাবাহী গাড়ি থেকে নেমে তিনি বলেছিলেন, বাংলাদেশে কোনো যুদ্ধাপরাধী নেই, একাত্তরে গৃহযুদ্ধ হয়েছিলো।
শুধু মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা নয়, অনেক বুদ্ধিজীবীসহ অসংখ্য মানুষের খুনি আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ ২০০১ এর নির্বাচনের পর মন্ত্রীও হয়েছিলন। কিন্তু শেষ রক্ষা হচ্ছে না। চূড়ান্ত দিন গণনা শুরু হয়ে গেছে তার।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর সহযোগী রাজাকার বাহিনীর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও আল বদর বাহিনীর প্রধান জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুজাহিদের জন্ম ফরিদপুরে, ১৯৪৮ সালের ২ জানুয়ারি।
১৯৬৪ সালে মাধ্যমিক পাসের পর ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজে ভর্তি হন তিনি। উচ্চমাধ্যমিকের ছাত্র অবস্থাতেই জামায়াতের তখনকার ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘে যোগ দেন। ১৯৬৮ সালে তাকে সংগঠনের জেলা শাখার সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়।
ট্রাইব্যুনালে মুজাহিদের বিরুদ্ধে দেওয়া তদন্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ১৯৭১ সালে বাংলার মানুষের স্বাধীনতার সংগ্রাম যখন চূড়ান্ত পর্যায়ে; সেই বছর জানুয়ারিতে ইসলামী ছাত্রসংঘের ঢাকা জেলা শাখার সভাপতি হন তিনি।
মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পর জুলাই মাসে ‘পূর্ব-পাকিস্তান’ ইসলামী ছাত্র সংঘের সেক্রেটারি এবং পরবর্তিতে ‘প্রাদেশিক’ সভাপতির দায়িত্ব পান।
মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী ইসলামী ছাত্রসংঘের সদস্যদের নিয়ে আল বদর বাহিনী গঠিত হওয়ার পর ৭১ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এর নেতৃত্ব দেন ইসলামী ছাত্রসংঘের তখনকার সভাপতি ও পরে জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী।
অক্টোবরে ওই বাহিনীর প্রধান হন মুজাহিদ। তার নেতৃত্বে আলবদর বাহিনী মুক্তিযুদ্ধের সময় ফরিদপুর, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে হত্যা, অপহরণ, লুটপাটের মতো ব্যাপক মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ড চালায়।
এমনকি ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানী বাহিনীর আত্মসমর্পণের প্রস্তুতির সময়ও বাহিনী নিয়ে আত্মসমর্পণ না করার সিদ্ধান্ত নেন মুজাহিদ।
একাত্তরের পর তিনি আত্মগোপনে চলে যান। ৭৫’র পর বাংলাদেশে জামায়াত আবার সক্রিয় হলে জামায়াতের রাজনীতিতে যুক্ত হন মুজাহিদ। ১৯৮২ সালে কেন্দ্রীয় পরিষদের সদস্য হন।
১৯৮৯ থেকে পরবর্তি দুই মেয়াদে জামায়াতের সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল ছিলেন। এরপর ২০০০ সালে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল হন।
কোনো নির্বাচনে জয়ী হতে না পারলেও বিএনপির নেতৃত্বে চারদলীয় জোট সরকারের সময়ে সমাজকল্যাণমন্ত্রীর দায়িত্ব পান আল বদর প্রধান। এছাড়াও বিভিন্ন সময় দায়িত্ব পালন করেন জামায়াতের মুখপত্র ‘দৈনিক সংগ্রাম’ এর পরিচালনা পর্ষদের প্রধান হিসেবে।
২০১৩ সালের ১৭ জুলাই বুদ্ধিজীবী হত্যায় সহযোগিতা ও পরিকল্পনা, সাংবাদিক সিরাজুদ্দিন হোসেনকে অপহরণ ও হত্যা এবং ফরিদপুরের বকচর গ্রামে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ওপর হামলা চালিয়ে হত্যা ও নির্যাতনের মতো অপরাধে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
২০১০ সালের ২ আগস্ট মানবতাবিরোধী অপরাধে মুজাহিদকে গ্রেফতার দেখানো হয়। ওই বছরের ২৯ জুন তাকে গ্রেফতার করা হয় ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগে।
এ আলবদর নেতার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধে বিচার শুরু হয় ২০১২ সালে ২১ জুন।