চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

দলের পদ পদবিতে অনাগ্রহী জনগণ চায় স্বস্তির জীবন

‘আদার ব্যাপারী জাহাজের খবরে কাম কি’ – বাংলাদেশের জনগণের কাছে রাজনৈতিক দলের কমিটি বা নেতাদের পদ পদবির টানাপোড়নের খবরাখবর এ প্রবাদের মতো।

দেশের জনগণ যে যার মত বাঁচার লড়াইতে ব্যস্ত। তাই বাজারে দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়লে ও প্রতিবাদ করে না। বরং অভ্যস্ত হতে চেষ্টা করে তা খাওয়া থেকে বিরত থাকতে। আবার দুর্নীতি, ব্যাংক, শেয়ার বাজার লুটপাট সবই যেন গা সওয়া হয়ে গেছে। উন্নয়নের ধারায় এক শ্রেণি বিত্তশালী হচ্ছে। আরেক শ্রেণি এসব দেখেও নির্বাক। কারণ দৈনন্দিন জীবন চালাতে হিমসিম খাচ্ছে মানুষ। খাতা কলমের প্রবৃদ্ধির হার বাস্তবের সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ।

আর কে কার জন্য প্রতিবাদ করবে। রাজনৈতিকভাবে দেশে আওয়ামী লীগ ছাড়া কোন দল নেই। সংসদে বিরোধীদল বলতে কিছু আছে তা মানুষ ভুলে গেছে। এরশাদ আমলে আ স ম আবদুর রবকে বলা হতো গৃহপালিত পশু। আর সেই এরশাদের দল জাতীয় পার্টি বর্তমান সংসদে কাদেরকে নেতৃত্ব দিচ্ছে তা প্রশ্ন করাই বোকামি।

অন্য দিকে আওয়ামী লীগে হাইব্রিডের জয় জয়কার। প্রকৃত আওয়ামী নেতা, সমর্থকরা মৌনতার ভূমিকায় অবতীর্ণ। আগামী তিন বছরের জন্য কাউন্সিলের মাধ্যমে যার দলের কমিটিতে নির্বাচিত হলেন, তা নিয়ে অনেক কথাই হচ্ছে আড়ালে আবডালে।

রাজনৈতিকভাবে নতুনের প্রত্যাশা ছিল দলের ভিতরে বাইরে। তবে সারাদেশের রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে তার প্রতিফলন দেখতে পায়নি। আর সাধারণ জনগণ এখন মনে করে, এদেশে সব কিছুই নির্বাচিত থাকে। জন মতামতের কোন মূল্যায়ন নেই।

নতুন আর ক্লিন ইমেজের ব্যক্তিদের খুব প্রয়োজন আগামীর বাংলাদেশের জন্য। এদেশেকে যার কিছু দিতে চায় তাদের নাম দলের মূল পদে না থাকাটা হতাশ করে মানুষকে। রাজনৈতিক বা ব্যক্তিগতভাবে ক্লিন ইমেজের সাবের হোসেন চৌধুরী, সোহেল তাজ, খালিদ মাহমুদ প্রমুখের চিন্তা চেতনা ও কর্মকাণ্ডে রয়েছে জনমুখী ভাবনা। সে কারণে দেশের মানুষ চায় তাদের দলের মূলধারায় সম্পৃক্ত হোক।

এবারের আওয়ামী লীগের কাউন্সিলকে ‘নতুন বোতলে পুরানো মদ’ বা চমকবিহীন কাউন্সিল বলা হচ্ছে। তবে যাই বলা হোক দলের যোগ বিয়োগের সমীকরণে নতুনের স্থান হয়নি তেমনিভাবে। শুদ্ধি অভিযানের যে প্রক্রিয়ার কথা বলা হয় তা কতটা আশার আলো দেখবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী আমলে; তা কেবল সময় বলে দিবে।

দেশ পরিচালনার জন্য বিজ্ঞ, প্রজ্ঞা আর দক্ষতার প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু এ বিষয়গুলোর অপ্রতুলতার বিরূপ প্রতিক্রিয়ার প্রমাণ ১৬ ডিসেম্বরে রাজাকারের তালিকা প্রণয়ন। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে রাজাকারের তালিকা নিয়ে নয়-ছয় করার দায়কে এড়িয়ে যাওয়া যায় না। এখন যদিও বলা হচ্ছে এ তালিকা স্থগিত করা হয়েছে। বাতিল এবং স্থগিত এ দুয়ের মাঝে আর একটি বিতর্ক সৃষ্টির সম্ভাবনাকে ভাবতে হবে সরকারকে৷ তার চেয়েও বড় বিষয় মুক্তিযুদ্ধের ৪৮ বছর পর আমলাদের দিয়ে এ তালিকা প্রণয়ন করা ফলপ্রসূ হবে না। দেশে বছর বছর মুক্তিযোদ্ধার তালিকা পরিবর্তন হয়। একই ভাবে রাজাকারের তালিকা ব্যক্তি ও দলীয় স্বার্থে ব্যবহার হবে না তার নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারবে না।

ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় শেখ হাসিনার সরকার দীর্ঘ মেয়াদি সরকার। আর তার আমলে তিনি ব্যক্তিগতভাবে দেশের কঠিন সময়ের বৈতরণী পার করেছে নানা সময়ে। দল ও সরকার পরিচালনায় দুর্নীতি, অন্যায়ের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সে নীতিতে বিশ্বাসী তিনি। তথাপি দেশের প্রতিটি সেক্টরে দুর্নীতি অন্যায় বন্ধ করা দুরূহ ব্যাপার। আর এ পরিস্থিতিতে এসব অপকর্মে বারবার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী বা প্রশাসনে দলের প্রছন্ন সমর্থনকারীদের নাম উঠে আসে।

অন্যদিকে দেশে আওয়ামীবিরোধীরা নিজেদের স্বার্থে নানাভাবে ভিড়েছে এ দলে। বিশেষ করে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক মামলা হামলা থেকে বাঁচতে এ পথ ছাড়া গত্যন্তর নেই। এতে করে দেখা যায় মতাদর্শকে আড়াল করে সারাদেশে আওয়ামী লীগের বাড়ছে দিনে দিনে। এ অবস্থায় জনগণ হারাচ্ছে দলের প্রতি আস্থা।

এগিয়ে চলার বাংলাদেশে একমাত্র নির্ভরতার স্থল জননেত্রী শেখ হাসিনা। তিনি জনগণের জন্য অধিকমাত্রায় ভাবেন বলে ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর বিষয়ে তার হস্তক্ষেপ কাম্য। ঠিক একই ভাবে আওয়ামী লীগের ২১তম কাউন্সিল নিয়ে তার সিদ্ধান্ত দলের জন্য ফলপ্রসূ হবে এটাই প্রত্যাশা এখন সকলের।

ব্যক্তি ও দলের ঊর্ধ্বে দেশের জনগণ। তবে তাদের জীবন যাত্রাতে রাজনীতির প্রতি অনীহা রয়েছে। তারা চায় জীবনের মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ করে নিশ্চিতভাবে জীবনযাপন করতে। জনগণের এ প্রত্যাশাকে কার্যকর করতে হলে আওয়ামী সরকারের দলকেও জিরো টলারেন্স নীতিতে চলতে হবে। ব্যক্তি ও দলের স্বার্থে অন্যায় দুর্নীতি, মাস্তানিকে প্রশয় দেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে শতভাগ।

(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)