প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দক্ষ ও ত্যাগী নেতাদের নিয়ে নতুন কমিটি গঠন করা হবে আশা করছেন বিভিন্ন জেলা থেকে আসা কাউন্সিলর- ডেলিগেট ও নেতাকর্মীরা। ২০তম জাতীয় কাউন্সিলে অংশ নিতে আশা আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা বলছেন, বঙ্গবন্ধু কন্য যে নেতৃত্ব উপহার দেবেন, সেই নেতৃত্বকে আগামী নির্বাচনে জয় এনে দেবে তৃণমূল।
এদিকে উদ্বোধন শেষে সভানেত্রীর বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘বাংলাদেশকে এখন পুরোপুরি দারিদ্রমুক্ত করতে চাই। আগে দেশে দারিদ্রের হার ছিলো ৯৭ ভাগ, আজ আমরা সেটাকে ২২ ভাগে নামিয়ে এনেছি।
এমন পর্যায়ে দেশকে নিয়ে যেতে চাই যে সেখানে দরিদ্র বলে কেউ থাকবে না। বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় এখন ১৪৬৬ ডলার। এই আয় এত বাড়াবো যেন এদেশে আর কেউ কখনো দরিদ্র না হয়।’
এর আগে সকাল থেকেই সকাল থেকেই খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে সম্মেলন স্থলে আসতে থাকেন নেতাকর্মীরা।
সাধারণ সম্পাদকের প্রতিবেদন উপস্থাপন করে সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন, ‘আমি দুইবার দলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে আছি। দলে কোনো ভাঙন ধরেনি। আজ আমাদের দল যেকোনো সময়ের চেয়ে শক্তিশালী। আওয়ামী লীগকে কেউ নিঃশেষ করতে পারনি এবং ভবিষ্যতেও পারবে না।’
শেখ হাসিনা নেতাকর্মীদের প্রতি আহবান জানিয়ে বলেন, `আপনারা স্ব স্ব এলাকায় কতজন নি:স্ব-রিক্ত মানুষ আছে তাদের তালিকা দিন। আমরা তাদের জন্য বিনা পয়সায় ঘর করে দিবো। তাদের বেঁচে থাকা নিশ্চিত করার দায়িত্ব আমাদের। বাংলাদেশ থেকে আমরা পুষ্টিহীনতা দূর করবো। সমগ্র দেশের মানুষ সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হয় সেই চেষ্টা করবো। সুপেয় পানির ব্যবস্থা নিশ্চিত করবো।’
অতীতের স্মৃতিচারণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রাচীনতম সংগঠনগুলোর একটি আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের জন্যই আজ আমরা বাঙালি হিসেবে পরিচয় পেয়েছি। বাংলা ভাষায় কথা বলার সুযোগ পেয়েছি। আওয়ামী লীগই বাংলার মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে এই অর্জন এনে দিয়েছে। ৫২ এর ভাষা আন্দোলন, ৬৬ এর ছয় দফা, ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ। সব সমস্যার মোকাবেলা করে বাংলাদেশকে মুক্তি এনে দিয়েছে আওয়ামী লীগ।’
“এই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেই বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। বাংলার মানুষ তার কথা মেনে নিয়েছিলো। এই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেরই মিত্র শক্তির কাছে পাকিস্তানী বাহিনী আত্মসমর্পন করে। সবাই সহযোগিতা করেছিলো বলেই বিজয় অর্জন সহজ হয়েছিলো। ৮১ সালে আমাকে সভানেত্রী নির্বাচিত করে আওয়ামী লীগ। জনসমর্থনে আমি দেশে ফিরে আসি। আমি আওয়ামী লীগের কাছে কৃতজ্ঞ। দেশে ফিরে সেই সময় দেশের আনাচে কানাচে আমি ঘুরে বেড়াই। আমি দেখেছি মানুষ না খেয়ে থাকে। কুড়েঘরে থাকে। বাবার কাছে যে শিক্ষা আমি পেয়েছিলাম, সেই শিক্ষা নিয়েই আমি কাজ শুরু করি। গ্রামের মানুষের ভালোবাসাই আমাকে ফিরিয়ে দিয়েছে মায়ের স্নেহ, বাবার স্নেহ, ভাইয়ের স্নেহ।”
ভবিষ্যতের স্বপ্নের কথা তুলে তিনি বলেন, ‘দ্রুত পদক্ষেপের কারণে দেশে ৭ ভাগ থেকে বনায়ন ১৩ ভাগে উন্নয়ন করা হয়েছে। সেটাকে বিশ ভাগে নিয়ে যেতে চাই। বাংলাদেশ ২০২১ সালে মধ্যম আয়ের দেশ হবে। বাংলাদেশ হবে দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তিপূর্ণ দেশ হবে। সেজন্য বলেছি সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স। এই ভূখণ্ড কেউ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে ব্যবহার করতে পারবে না। দক্ষিণ এশিয়া হবে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের সেতুবন্ধন। সেটাই হবে বাংলাদেশও। তাই উন্নয়ন ব্যবস্থায় নজর দিয়েছি।’
সৈয়দ আশরাফ তার বক্তব্যে আওয়ামী লীগের আত্মত্যাগের ইতিহাস তুলে ধরে বলেন, ‘জন্ম থেকেই আওয়ামী লীগের সঙ্গে আত্মত্যাগের মহান ইতিহাস জড়িয়ে আছে। এ দল ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধ সব ক্ষেত্রেই আত্মত্যাগের মহান ইতিহাস রচনা করেছে।’
তিনি আরো বলেন, “আওয়ামী লীগ তাই শুধু যেকোন একটি দল নয়, আওয়ামী লীগ কোন সনাতনী দলও নয়, আওয়ামী লীগ একটি ত্যাগের নাম, আওয়ামী লীগ একটি অনুভূতির নাম যে অনুভূতি ত্যাগের এবং আত্মত্যাগের।”
দলের সঙ্গে আত্মিক ঘনিষ্ঠতার আবেগ প্রকাশ করে সৈয়দ আশরাফ আরও বলেন, ‘আমাদের রক্ত খাঁটি, আমাদের রক্ত পরীক্ষিত। নেতা ও কর্মীদের আত্মত্যাগে একটি অনুভূতির জন্ম হয়েছে। দলের সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকলে পৃথিবীর কোনো শক্তি নেই আমাদের স্তব্ধ করে দিতে পারে।’
সকালে সম্মেলন শুরুর অনেক আগে থেকেই বিভিন্ন জেলা থেকে আসা কাউন্সিলর-ডেলিগেট ও নেতাকর্মীদের পদাচারনায় মুখর হয়ে ওঠে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও এর আশপাশের এলাকা। শিশুপার্কের গেট ছাড়াও অন্য ৪টি গেট উন্মুক্ত ছিল তাদের জন্য। দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও ব্যপক উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে সম্মেলনে প্রবেশ করেন নেতাকর্মীরা। এবারের কাউন্সিল নিয়ে তৃণমূলের প্রত্যাশার কথা জানান তারা।
সুষ্ঠ, সুশৃঙ্খল সম্মেলন আয়োজন ও অতিথিদের সহায়তা করতে ভেতর ও বাইরে তৎপর ছিল ২ হাজার সেচ্ছাসেবক।