থিয়েটার অলিম্পিক এ অংশ নিচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থিয়েটার এন্ড পারফর্মেন্স স্টাডিজ বিভাগের এম.এ প্রযোজনা ‘পাঁজরে চন্দ্রবান’। তার আগে পরপর পাঁচ মঞ্চায়নের মধ্য দিয়ে যাত্রা শুরু হচ্ছে নাটকটির। ঢাকার মঞ্চে। থিয়েটার অলিম্পিকে বাংলাদেশের কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের এটি প্রথম অংশগ্রহণ।
উপমহাদেশের মঞ্চনাটকের তীর্থস্থান বলে খ্যাত নয়াদিল্লির ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামার (এনএসডি) আয়োজনে প্রথমবারের মতো ভারতে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ‘অষ্টম থিয়েটার অলিম্পিক ২০১৮’। আগামী ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ৮ এপ্রিল পর্যন্ত টানা পঞ্চাশ দিন ধরে ভারতের ১৬টি শহরে চলবে বিশ্ব নাটকের এ মহোৎসব। এতে মঞ্চস্থ হবে পৃথিবীর সেরা পাঁচশটি নাটক। এছাড়াও থাকছে সাতশটি এ্যাম্বিয়েন্স পারফরম্যান্স। ‘পাঁজরে চন্দ্রবান’ থিয়েটার অলিম্পিকে ১৩ তারিখে পাটনা ও ১৫ তারিখে দিল্লিতে মঞ্চস্থ হবে।প্রত্যেকটি থিয়েটার অলিম্পিকে একটি মূল ভাবনা নির্বাচিত করা হয়, যা এই সুবিশাল থিয়েটার উৎসবের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যকে পৃথকভাবে চিহ্নিত করে। ১৯৯৩ সালে প্রথম থিয়েটার অলিম্পিকের মূল ভাবনা ছিল ‘ট্রাজেডি’। আর ২০১৮-তে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ‘অষ্টম থিয়েটার অলিম্পিক’র এবারকার থিম ‘ফ্ল্যাগ অব ফ্রেন্ডশিপ’।
৫ মার্চ ঢাক বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটমন্ডলে অনুষ্ঠিত হবে নাটকটির প্রথম মঞ্চায়ন। এরপর শিল্পকলা একাডেমী পরীক্ষণ থিয়েটার হলে ৬-৯ মার্চ অনুষ্ঠিত হবে টানা প্রদর্শনী।
গেল বছরের অক্টোবর, নভেম্বর, ডিসেম্বর এবং জানুয়ারিতে রোহিঙ্গা শরণার্থী জীবনের দুঃখ-কষ্ট, লড়াই, ইতিহাস, ক্ষোভ, হতাশাগুলো নিয়ে মাঠ পর্যায়ে গবেষণা, প্রশিক্ষণ, সংলাপ ও পরিবেশনায় রোহিঙ্গা জনসাধারণকে সাথে নিয়ে অংশ নিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েরে থিয়েটার এন্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের এমএ বর্ষের শিক্ষার্থীরা। ফেব্রুয়ারিতে টেকনাফের বিভিন্ন রোহিঙ্গা শিবিরে বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরে এর মঞ্চায়নও করেছে তারা। টানা পাঁচ প্রদর্শনী অলিম্পিকে অংশ নেওয়ার আগে নিজের যাচাই এবং জমাট করে নেওয়া জানিয়ে নাটকটির নির্দেশক ড. ইস্রাফিল শাহীন চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, ‘মায়ানমারের সামরিক জান্তাদের জাতিগত নিপীড়নে রোহিঙ্গাদের এক মহাপ্রস্থান হয়েছে। এই আশাহীন-ঘরহীন-রাষ্ট্রহীন মানুষের মাঝে ভীতি, শূন্যতা, একাকীত্ব যেভাবে গ্রাস করছে সেটাকে থিয়েটারের ভাষায় অনূদিত করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার এন্ড পারফরমেন্স স্টাডিজ। তিনি আরও বলেন, যে অপার সম্ভাবনা, শক্তি, নান্দনিকতা, সামাজিক ডাইম্যানশন এবং রাজনৈতিক অর্থ তৈরি করার উদ্দেশ্যে আমাদের এই প্রযোজনা।
নাটকটি রচনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুন শিক্ষক শাহমান মৈশান। মায়ানমারে রোহিঙ্গাদের প্রতি যে বৈষম্য, রাষ্ট্রের ক্ষমতার অপব্যবহার, রাজনৈতিক শক্তির অবাঞ্ছিত বলপ্রয়োগ ও খবরদারি দেখানোর মাধ্যমে যে নিষ্পাপ, নিরপরাধ রোহিঙ্গাদের হত্যা করা হয়েছে, তাদের ন্যায্যতাকে নাকচ করে শুধুমাত্র শক্তি প্রয়োগের কারণে অসংখ্য মানুষের কান্না যেন জমাট বেঁধে বরফ হয়ে গেছে। সেই অশ্রু ভেজা দুঃখকে বাংলাদেশের মানুষ তথা বিশ্বের কাছে পরিচয় করিয়ে দিতেই এই নাট্য প্রয়াস।’
নাটকটির সংগীত পরিকল্পনায় বিভাগীয় শিক্ষক সাইদুর রহমান লিপন ও কাজী তামান্না হক সিগমা, আলোক পরিকল্পনায় আশিক রহমান লিয়ন ও কোরিওগ্রাফিতে অমিত চৌধুরী।