চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

ত্রিশ হাজার একর জমিতে বঙ্গবন্ধু শিল্প নগর প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে: পবন চৌধুরী

পবন চৌধুরী বাঙালি বৌদ্ধদের মধ্যে ভারপ্রাপ্ত প্রথম সচিব।  ২০১৪ সালের ১৬ অক্টোবর সরকারের এক আদেশে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের নির্বাহীপবন চৌধুরী চেয়ারম্যান ফখরুল ইসলামকে প্রাইভেটাইজেশন কমিশনের সদস্য পদে নিয়োগ দিয়ে তার জায়গায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক পবন চৌধুরীকে ভারপ্রাপ্ত সচিব পদমর্যাদায় বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান করা হয়।

সে হিসেবে বেজা’র নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরীই বাঙালি বৌদ্ধদের মধ্যে প্রথম সচিব ভারপ্রাপ্ত। বাঙালি বৌদ্ধদের মধ্যে পবন চৌধুরী ও সম্পদ বড়ুয়াই বাংলাদেশ সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা।

পবন চৌধুরী চট্টগ্রামের রাউজান পাঁচখাইন গ্রামের একজন গর্বিত সন্তান।  তিনি চট্টগ্রাম কলেজ হতে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ হতে কৃতিত্বের সাথে এমবিএ ডিগ্রি অর্জন করেন।  বিসিএস পরীক্ষায় সফলতার সাথে উত্তীর্ণ হয়ে তিনি সরকারী কর্মকর্তা হিসেবে দেশ ও জনগণের সেবায় কাজ করে যাচ্ছেন।

তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হয়ে থাইল্যান্ডের বাংলাদেশ মিশনের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক ছিলেন।
২০০৯ সালে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ ক্ষতমাসীন হলে সরকার দেশে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ পিপিপি এর মাধ্যমে শিল্প ও ব্যবস্যা বানিজ্যের উন্নয়ন সাধনের লক্ষ্যে একটি অর্থনৈতিক জোন তৈরি করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।  এ উপলক্ষে ২০১০ সালের একটি সরকারী প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী বাংলাদেশ ইকনোমিক জোনস অথোরিটি বেজা গঠন করে।

বেজার উদ্দেশ্য হল দেশের দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যে অনুন্নত ও পশ্চাৎপদ এলাকাসহ সকল সম্ভাবনাময় স্থানে শিল্প কারখানা স্থাপন করে কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে পণ্যের উৎপাদন ও রফতানি বৃদ্ধি করা।  বেজার সদর দপ্তর প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে অবস্থিত যেখান হতে এর মূল কার্যক্রম পরিচালিত হয়।  বেজার কার্যক্রম তাৎপর্যপুর্ন বলে সরকার এটির প্রতি গুরুত্ব দিয়েছে।  তাই এটি পরিচালনা করতে তিন স্তরের একটি ব্যবস্থাপনা কাঠামো প্রতিষ্ঠা করেছেন যেখানে- গভর্নিং বোর্ড, এক্সিকিউটিভ বোর্ড ও বেজা সচিবালয় একসাথে কাজ করছে।

গভর্নিং বোর্ডে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই চেয়ারম্যান ও সদস্য সচিব হচ্ছে নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী। যেখানে অর্থ, স্বরাষ্ট্র, পররাষ্ট্র, শিল্প, বাণিজ্য, কৃষি, ডাক তার, বিজ্ঞান প্রযুক্তি, তথ্য, পানি, বিদ্যুৎ, খনিজ, বন পরিবেশ, যোগাযোগ, নৌ মন্ত্রনালয়সহ বাংলাদেশ সরকারের সকল গুরুত্বপুর্ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও সচিবগণ এই বোর্ডের মেম্বার।  এরপর নির্বাহী চেয়ারম্যান অধীনে তিন জন অতিরিক্ত সচিবকে নিয়ে গঠন করা হয়েছে এক্সিকিউটিভ বোর্ড যা উপসচিব ও সিনিয়র সহকারী সচিবদের নিয়ে গড়া বাহাত্তর জনের বেজা সচিবালয় পরিচালনা করে থাকে।

এ লক্ষে সরকার ইতোমধ্যে চট্টগ্রামের মিরেরসরাই, আনোয়ারার গহীরা, সিরাজগঞ্জ, মৌলবীবাজারের শেরপুর ও বাগেরহাটের মংলাপোর্ট এ পাঁচটি বিশেষ অর্থনৈতিক জোন স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।  উল্লেখ্য, এসব বিশেষ অর্থনৈতিক জোনের কার্যক্রম শিল্প মন্ত্রণালয়ের বিসিক বা রফতানি প্রক্রিয়াজাতকরণ জোন বেপজা হতে আরও বড় আঙ্গিকের।  মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনে এই বিশেষ অর্থনৈতিক জোন কর্তৃপক্ষের কাজ পরিচালিত হয় রাজধানীর কাওরান বাজারে স্থাপিত অফিস হতে।

এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব পালন করা পবন চৌধুরী সম্প্রতি উন্নয়নের নানা প্রসঙ্গে কথা বলেন রাজু আলীমের প্রযোজনায় চ্যানেল আই এর আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বিষয়ক সাপ্তাহিক অনুষ্ঠান ব্যাংক এশিয়া অন্তর্ভুক্তির অর্থনীতি অনুষ্ঠানে। ‘বেজা মুজিববর্ষে নতুন কি পদক্ষেপ নিচ্ছে- এমন প্রশ্নের উত্তরে পবন চৌধুরী বলেন- ‘বেজা অত্যন্ত গতিশীল প্রতিষ্ঠান হিসাবে অল্প সময়ের মধ্যে মানুষের কাছে পরিচিতি লাভ করেছে।  তাই স্বাভাবিকভাবে মুজিববর্ষেও বেজার কাছ থেকে অনেক প্রত্যাশা থাকবে।  আমরা আমাদের চলমান যে কাজ বিভিন্ন পটেনশিয়াল এরিয়াগুলোতে সফলভাবে অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনা ট্যুরিজম পার্ক স্থাপন ছাড়াও কাজের ক্ষেত্র তৈরীর জন্যে বড় বড় উদ্যোগ নেওয়া ছাড়াও মুজিববর্ষে আমরা তিনটি বিশেষ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাজ করছি।

এর মধ্যে একটা হলো- বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শিল্প উদ্যোগ যেটা প্রায় ত্রিশ হাজার একর জমিতে ভবিষ্যতে এর আকার আরও বৃদ্ধি পাবে।  ত্রিশ হাজার একর জমিতে বঙ্গবন্ধু শিল্প নগর প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে চট্টগ্রামের মীরেরসরাই, সীতাকুন্ডু ও ফেনীর সোনাগাজী উপজেলাতে।  ভবিষ্যতে এর সাথে যুক্ত হবে চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ এবং নোয়াখালির কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা।  এই রিজিয়নের ভেতরে এটি সবচেয়ে বড়।  এই পর্যন্ত শিল্পায়নের যতোগুলো পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি সাহসি পদেক্ষেপ এটি।  সমুদ্রের তীরে প্রায় বাইশ দশমিক পাঁচ কিলোমিটার সুপার ড্রাইভ এবং ল্যান্ড রিক্রিয়েট করে এটি তৈরী করা হচ্ছে।  এই রূপান্তর আগামীর শিল্পায়নে বাংলাদেশকে কোথায় নিয়ে যাবে? সেটা অবহিত করা এবং অ্যাওয়ারনেস বিল্ড আপ করার জন্যে কি কি সুযোগ সেখানে তৈরী হচ্ছে তাকে কমিউনিকেট করার জন্যে বাংলাদেশের পাঁচশত জন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকে আমরা পনের এপ্রিল সোনারগাঁ হোটেলে তাদেরকে সমবেত করছি। দেশের আইকনিক পার্সনদেরকে নিয়ে তাদেরকে দেখাতে চাইবো যে আগামীর বাংলাদেশ তাদের জন্যে কি নিয়ে আসছে? দ্বিতীয়ত হলো- আমরা ইকনোমিক জোনগুলো স্থাপন করতে গিয়ে রাস্তাঘাটে জমি অধিগ্রহণের ফলে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তাদেরকে পুনর্বাসনের জন্যে কমিউনিটি ডেভলপ ঘরবাড়ি তৈরী করা, তাদের জন্যে জমি দেওয়া- এই উদ্যোগ নিয়েছি এবং এই বছরেই বাস্তবায়ন করছি কক্সবাজার ও চট্টগ্রামে ।

এছাড়া এই এক বছরে আমরা বিশ লক্ষ গাছ লাগাবো। এর মধ্যে আমরা সতের লক্ষ চারা তুলেছি। ’ সারা বাংলাদেশে কতগুলো ইকনোমিক জোন নিয়ে আপনার কাজ করছেন; এই প্রশ্নের জবাবে পবন চৌধুরী জানান- ‘ সারাদেশে চুরানব্বইটি ইকনোমিক জোনের স্থান চিহ্নিত করেছি। এর মধ্যে আঠাশটি জোনে পুরোদমে কাজ চলছে। তেরোটি জোনে এর মধ্যে ইন্ডাস্ট্রি হচ্ছে।  এর মধ্যে আটটা জোন কমপ্লিটলি অকুপাইড। ’ শিল্পাঞ্চলে যাতায়াতের ক্ষেত্রে নদীপথ দরকারি। কিন্তু নদীপথ তো পলিজমে নাব্যতা হারাচ্ছে।  এর জন্যে প্রয়োজন নদী শাসন এবং ড্রেজিং করা- এই বিষয়ে কি করছেন? এই প্রশ্নের উত্তরে বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান বলেন- ‘যুগ যুগ ধরে ব্যবসা বাণিজ্য প্রসারিত হয়েছে নৌপথে।  অনেকগুলো ইকনোমিক জোন নদীর পাড়ে হচ্ছে।  সিরাজগঞ্জ, নারায়নগঞ্জ, কক্সবাজারে হচ্ছে। নদীকে কেন্দ্র করে স্বাভাবিকভাবে ডাবল অ্যাডভান্টেজ থাকে।  বিমান ও সড়কের সুবিধা তো আছেই।  নৌপথে পণ্য পরিবহনের কস্ট অনেক কম।  তাই নদীর নাব্যতা হারালে শুধু ইকনোমিক জোন কেন সব ব্যবসা বাণিজ্যই ঝামেলায় পড়ে। নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনার জন্যে সরকারের মহাপরিকল্পনায় ড্রেজিংয়ের উপরে জোর দেওয়া হয়েছে। এই বিষয়ে অনেক কাজ হচ্ছে। বড় বড় নদী ইনক্লুডিং যমুনা পদ্মায়ও ক্যাপিটাল ড্রেজিং হচ্ছে।

আমরা আশা করি আগামীতে নদীর নাব্যতা বৃদ্ধির মাধ্যমে ব্যবসা বাণিজ্য অনেক সহজতর হবে। ’ নদীর পাশাপাশি সড়ক ও জনপথ উন্নয়নের ব্যাপারে পবন চৌধুরী বলেন- ‘অর্থনৈতিক লক্ষ্যমাত্রায় বাংলাদেশকে আমরা যে জায়গায় নিয়ে যেতে চাই। দেশের মানুষ যেখানে দেখতে চায় বিশেষ করে স্বপ্নবিলাসী তরুণ সমাজ যেভাবে বাংলাদেশকে দেখতে চায় সেখানে যেতে হলে আমাদের অনেক কিছু করার আছে। অবকাঠামো উন্নয়নের ক্ষেত্রে ব্যাপক পদক্ষেপ নিতে হবে। ফোর লেন সিক্স লেন এখনকার বাংলাদেশের চাহিদার সাথে যায় না। আমাদের যোগাযোগ সিমলেস হতে হবে। যাতে করে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম আসতে এক দেড় ঘন্টায় আসতে পারে।

বড় বড় গাড়ীগুলো যাতে পোর্টের সাথে সরাসরি যোগাযোগ রাখতে পারে। ’ আর দেশী বিদেশী বিনিয়োগের ব্যাপারে তিনি বলেন- ‘প্রথম পরিকল্পিতভাবে শিল্পায়নের পদক্ষেপ শুরু হয় তদানিন্তন পূর্ব পাকিস্তান আমলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যখন যুক্তফ্রন্টের আমলে শিল্প মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন। তিনি কিন্তু স্মল এন্ড কটেজ ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাক্ট করেন।  এর ফলেই কিন্তু বিসিক প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপরে উনিশো আশি সালে ইপিজেড অ্যাক্ট হয়।  ১৯৯৬ সালে প্রাইভেট ইপিজেড অ্যাক্ট হয়।  আর সবশেষ দুই হাজার দশ সালে এসে স্পেশাল ইকনোমিক জোন অ্যাক্ট হয়।  এই ধারাবাহিকতা সামনে নিয়ে যেতে হলে আমাদের অনেক কাজ করার আছে।  কন্টিনিউয়াস রিফর্ম, কন্টিনিউয়াস ডেভলপমেন্ট এবং কানেকটিভিটির ব্যাপার আছে।