তেজগাঁও এফডিসির পাশে, বিজিএমই ভবনের বিপরীতে। কারওয়ান বাজার মুক্তিযোদ্ধা মৎস্য মার্কেটের ফুটপাথ। দুপুর দুইটায় মধ্যবয়স্ক এক লোক তিন তাসের জাদু দেখাচ্ছেন। তাকে ঘিরে ধরে আছে আরও কিছু যুবক ও মধ্যবয়সী মানুষজন।
কাছে গেলে বোঝা যায়, জাদু নয়। তারা মূলত জুয়ার আসর বসিয়েছে। তার হাতে তিনটা তাস। দুইটা তাসের সম্মুখভাগ সাদা। একটা তাসে তাসে সালমান শাহ, শাবনুরের ছবি কেটে লাগানো। তিনটা তাসের পিঠে একই ছবি। জুয়াড়ি জাদু দেখানোর ভঙ্গি করে দুই হাতে কয়েটা প্যাঁচ দিয়ে পাশাপাশি তিনটি তাস বিছিয়ে দেয়। অন্য জুয়াড়িরা তাসের উপরে টাকা ধরে। যে সালমান শাহ-শাবনুরের ছবি আঁকা তাসের উপর টাকা রাখতে পারে সে পায় তিনগুণ টাকা। একশ টাকায় তিনশ টাকা। বাকি দুই সাদা কার্ডের উপর রাখা টাকা খেলা পরিচালনাকারী মানে মাস্টার জুয়াড়ির।
তিনতাস হাতে নিয়ে এত সহজ প্যাঁচ দেওয়া হয় যে দেখাই যায় কোনটায় কাঙ্ক্ষিত সেই তাস। অনেকেই টাকা ধরে তিনগুণ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। পাশে দাঁড়ালে মনে হয়, ছবিওয়ালা তাস ধরা কত সহজ। আসলে এতক্ষণ তাসের উপর বাজি ধরে জিতে যাচ্ছিল তারা জুয়াড়ির লোক। তারা ধরলে জিতে যায়। কিন্তু মাস্টার জুয়াড়ির দলের বাইরের কেউ টাকা ধরে, সাথে সাথে রঙিন তাস সাদা হয়ে যায়। টাকা লস যায় বাইরের লোকের। সবাই মাস্টার জুয়াড়ির হাতের খেল।
কয়েক মিনিট দাঁড়িয়ে থেকে সজীব শেখ নামের এক ছেলে নিশ্চিত দেখে একটা তাসের উপর টাকা রাখলেন। তাস উল্টালে দেখা গেল সেটা সাদা। এক হাজার টাকা শেষ। পাশ থেকে একজন বলল, এবার এইটায় ধরেন। নিশ্চিত পাবেন। নিশ্চিত জেনে সে দুই হাজার টাকা ধরল। তাস উল্টানোর পর দেখা গেল সেটা সাদা। ছবিওয়ালা তাস আরেকটা। পাশ থেকে যে ধরতে বলেছিল সে নেই। সজীব শেখ দাঁড়িয়ে থেকে কয়েকটা চাল দেখলেন। তারপর ধরলেন এক হাজার টাকা। তিনি ধরতেই তাস পাল্টে যায়। তার আগ পর্যন্ত ঠিক থাকে। সাধারণ মানুষ সেজে থাকা এক জুয়াড়ি ছবিওয়ালা তাসের কোণা ভেঙ্গে রাখলেন। যাতে সহজে বোঝা যায় কোনটা ছবিওয়ালা তাস। সজীব শেখ নামের যুবক এটিএম কার্ডের চিপা থেকে এক হাজার টাকা বের করলেন। ভেঙ্গে রাখা তাসের উপর রাখলেন। তাস উল্টাতেই দেখা গেল অন্য একটা তাসের কোনা ভাঙ্গা। যথারীতি এই এক হাজার টাকাও ধরা। পাঁচ হাজার টাকা লুটে নেওয়া হলো মাত্র এক থেকে দেড় মিনিট সময়ে। সব হারিয়ে নিঃস্ব সজীব শেখ কিছুক্ষণ জুয়ার বোর্ডের দিকে তাকিয়ে থেকে এফডিসির দিকে হাঁটতে শুরু করলেন।
এই প্রতিবেদক পিছু নিয়ে রেল ক্রসিংয়ের কাছে তাকে থামালেন। তিনি জানালেন তার নাম সজীব শেখ। ঢাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। জুয়া খেলা প্রসঙ্গে চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, ‘আমার কাছে পাঁচ হাজার টাকাই ছিল। কিভাবে কী হয়ে গেল বুঝতে পারছি না। কোনোদিন জুয়া খেলিনি। আজ কেন খেললাম আল্লাহ জানে। এখন আমার কাছে কিছুই নাই। প্রতিটা দানে আমি নিশ্চিত ছিলাম। তারপরও কিভাবে যেন কার্ড বদলে ফেলে।’
জুয়ার আসর যখন জমজমাট, লুকিয়ে ছবি তোলায় খেলা বন্ধ করে দিয়ে পাঁচ/সাতজন জুয়াড়ি এই প্রতিবেদককে ঘিরে ফেলে। একজন কলার ধরে মারতে উদ্যত হয়। অন্যরা মোবাইল কেরে নিতে চায়। সাংবাদিক পরিচয় দিলে কলার ধরা জুয়াড়ি নিমিষেই মৎস্য বাজারে পালিয়ে যায়। অন্য জুয়াড়ি অনুরোধ করে ছবিটা ডিলেট করে দিতে। মাস্টার জুয়াড়ি এসে প্রতিবেদকের হাতে কয়েকটা একহাজার টাকার নোট গুঁজে দেওয়ার চেষ্টা করে। প্রতিবেদক তাদের ফাঁদে পা না দিয়ে নিরাপদে সরে আসতে সক্ষম হন।
তেজগাঁও থানার এসি রুবাইয়াত জামান জুয়াড়িদের তৎপরতার সত্যতা স্বীকার করে চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, ‘রেললাইন এলাকায় এধরণের ঘটনা ঘটে। আমার টিম বেশ কয়েকটা অভিযান চালিয়ে জুয়াড়িদের ধরেছে। কিছুটা কমেছিল। এখন আবার শুরু হয়েছে। আমরা অচিরেই অভিযান পরিচালনা করবো।’
এধরণের জুয়ার আসর দেখলে সাথে সাথে পুলিশকে তথ্য দেওয়ার আহ্বান জানান। তাহলে তৎক্ষণাৎ অভিযান চালিয়ে জুয়াড়িদের ধরা হবে বলে জানান তিনি।