চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের আশঙ্কায় বিশ্ব

পৃথিবী জুড়ে এবার তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ বেঁধে যেতে পারে – সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে এমনটাই আশঙ্কা করছেন অনেকে। তবে আগে ফিউচারোলজিস্ট বা ভবিষ্যৎবিদরা যেভাবে ভেবেছিলেন সেভাবে নয়।

এ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ইন্ডিপেন্ডেন্ট। সেখানে বলা হয়েছে, অতীতে মনে করা হয়েছিল, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হবে সুপার পাওয়ারদের পারস্পরিক সংঘাতের মধ্য দিয়ে। তাদের ট্যাংক আর ভারী সাঁজোয়া যান উত্তর জার্মান সমতলে একে অপরের মুখোমুখি হবে। অন্যান্য দেশগুলোও ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় যোগ দেবে সেই যুদ্ধে।

তবে আমাদের বর্তমান বিশ্ব এক ভিন্ন পরিস্থিতির সম্মুখীন। নানা দিক দিয়ে নানারকম দ্বন্দ্ব-সংঘাতে আটকে আছে আছে পৃথিবীর একেকটি এলাকা। তাই এখন প্রশ্ন উঠেছে, বর্তমানে চলমান তুলনামূলক ছোট ছোট সংঘর্ষ মিলে বড় যুদ্ধে পরিণত হবে? নাকি যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া আর চীনের মতো সুপার পাওয়ার দেশগুলোর মধ্যে ক্ষমতার লড়াই রূপ নেবে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের?

১৯৪৫ এরপর থেকে এখন পর্যন্ত বিশ্বযুদ্ধ বাঁধার মতো চূড়ান্ত ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি না হলেও মনে করা হচ্ছে, এখন আমরা যে অবস্থায় আছি সেটিও খুব একটা সুবিধাজনক নয়। বরং এখনকার সময়টা অনেকটাই অনিশ্চিত, অস্থিতিশীল এবং ঝুঁকিপূর্ণ।

পৃথিবীর ১৯৫টি দেশের মধ্যে মাত্র ডজনখানেক দেশকে শান্তিপূর্ণ হিসেবে উল্লেখ করা যায়। বিশ্ব শান্তি সূচক অনুসারে এক্ষেত্রে প্রথম স্থানে আছে আইসল্যান্ড। এরপরই রয়েছে ডেনমার্ক, অস্ট্রিয়া, নিউজিল্যান্ড, পর্তুগাল, চেক রিপাবলিক, সুইজারল্যান্ড, কানাডা, জাপান, স্লোভেনিয়া এবং ফিনল্যান্ড। বিশ্বের মোট জনগণের ছোট্ট একটা অংশ থাকে এই দেশগুলোতে।

অন্যখানে কিন্তু শান্তি খুব একটা নেই। সিরিয়া, আফগানিস্তান, ইরাক, ইউক্রেন, পশ্চিম আফ্রিকা ও ইয়েমেনের মতো দেশগুলোতে জঙ্গিবাদ ও চরমপন্থার ভয়াবহ দৌরাত্ম্য আর সুপার পাওয়ারগুলোর লড়াই, মেক্সিকোসহ বেশকিছু দেশে মাদকের সাম্রাজ্য, অন্যদিকে মিয়ানমার থেকে আর্মেনিয়া আর আজারবাইজান থেকে কলম্বিয়া পর্যন্ত সংঘাত-বিশৃঙ্খলা লেগেই আছে। শুধু ১৯৬৮ সাল ছাড়া ১৯১৪ থেকে এখন পর্যন্ত প্রত্যেকটা বছর এই এলাকাগুলোর কোথাও না কোথাও ভয়ানক কিছু ঘটেছে এবং ঘটছে।

বিভিন্ন উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে খণ্ড খণ্ড যুদ্ধ-সংঘাত ঘটছে বিশ্বজুড়ে। কোথাও দলীয়ভাবে, কোথাও আবার দু’য়েকজন ব্যক্তিই ভয়াবহ হামলা চালাচ্ছে। আবার হুতু-তুতসির মতো নৃতাত্ত্বিক পরিচয় বা ধর্মীয় বিভেদ নিয়েও গণহত্যা চলেছে।

তবে আপাতত তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের চেয়ে তাৎক্ষণিকতার দিক থেকে দ্বিতীয় স্নায়ুযুদ্ধ শুরু হওয়ার ভয় বেশি বলে মনে করছে ইন্ডিপেন্ডেন্ট। অবশ্য একটি থেকেও আরেকটির সূত্রপাত হতে পারে। মূলত বার্লিন ওয়ালের পতনের পর থেকে রুশ-মার্কিন সম্পর্ক সাফল্য আর ব্যর্থতার টানাপোড়েনের মধ্যে রয়েছে। একই সঙ্গে চীনের সাথে দু’টি দেশের নিজ নিজ সম্পর্কও বেশ অস্থিতিশীল।

জঙ্গি সংগঠন আইএসের বিরুদ্ধে সন্ধিতে পৌঁছেও এক থাকতে পারেনি আমেরিকা ও রাশিয়া। ভয়াবহ এই শত্রুও মানবতার পক্ষে এক করে রাখতে পারেনি এই দুই সুপার পাওয়ারকে। ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় এলে হয় তো রাশিয়ার ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে কিছুটা ভালো সম্পর্ক থাকার সম্ভাবনা রয়েছে হিলাারি ক্লিনটনের চেয়ে। কিন্তু ট্রাম্প অন্যদিকে ন্যাটো ভাঙ্গা আর অভিবাসী তাড়ানোর মাধ্যমে নিজের দেশকেই বাকি সবকিছু থেকে আলাদা করার নীতি সম্পর্কে সবাইকে জানিয়ে দিয়েছেন।

আবার এস্তোনিয়া, লাটভিয়া আর লিথুনিয়াও ইইউ ছেড়ে রাশিয়ার ছায়াতলে চলে যেতে পারে। এশিয়ার মধ্যাঞ্চলেও চলছে অস্থিরতা। তবে এবার স্নায়ুযুদ্ধ শুরু হলে বিশ্ব দেখবে এক ঠাণ্ডা মাথার সুস্থির আরও বেশি শক্তিশালী রাশিয়াকে – এমনটাই ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা। সেই ঠাণ্ডা যুদ্ধের সঙ্গে আমেরিকা, রাশিয়া, কোরিয়াসহ বিভিন্ন দেশের নিউক্লিয় শক্তি মিলে লেগে যেতে পারে ‘গরম যুদ্ধ’ বা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ।