দলটার বিশ্বকাপ জেতার কথা ছিল না। সেমিফাইনালেও যাওয়ার কথা ছিল না। কিন্তু বিশ্বকাপে একটা বা দুটো অঘটন যে ঘটাবে, আফগানিস্তানকে নিয়ে এটাই ছিল প্রত্যাশা। কিন্তু কোথায় কী, বিশ্বকাপ যখন মাঝপথে, তখনই বিধ্বস্ত আর জর্জরিত দেখাচ্ছে আফগানদের।
কী হওয়ার কথা ছিল, আর কী হচ্ছে! ইংল্যান্ড ম্যাচের আগে ম্যানচেস্টারের একটি রেস্টুরেন্টে কয়েকজন আফগান ক্রিকেটারের সঙ্গে ফ্যানদের ছবি তোলাকে কেন্দ্র করে ঝামেলা হয় বলে খবর দেয় বিবিসি। সেই ঝামেলা থামাতে পুলিশ যেতে হলেও কেউ গ্রেপ্তার হয়নি। সেখানে কী হয়েছিল? সংবাদ সম্মেলনে এই প্রশ্ন করতেই রেগেমেগ আগুন আফগান অধিনায়ক গুলবাদিন নায়েব তো প্রেস রুম থেকেই বেরিয়ে যেতে চেয়েছিলেন।
এ পর্যন্ত ঠিকই ছিল। কিন্তু দলের মধ্যকার প্রবল অন্তদ্বন্দ্ব প্রকাশ পায় কোচ ফিল সিমন্সের এক টুইটে। আফগানিস্তানের ক্যারিবীয় কোচ দুদিন আগে এক টুইটে লেখেন, ‘আমরা বিশ্বকাপের মাঝপথে আছি। দল যাতে প্রত্যাশা মতো পারফর্ম করতে পারে সেজন্য চেষ্টা করছি। কিন্তু বিশ্বকাপ শেষে আমি আফগানিস্তানের মানুষকে বলব, আমাদের প্রস্তুতিতে এবং অধিনায়ক আসগর আফগানকে সরাতে কী ভূমিকা নিয়েছিলেন দৌলত আহমদজাই।’
সাবেক প্রধান নির্বাচক আহমদজাই বিশ্বকাপে দলের খারাপ পারফরম্যান্সের জন্য কোচ ও তার স্টাফদের দিতে আঙুল তোলার পরই এই বিস্ফোরণ। বিশ্বকাপের ঠিক আগে আসগর আফগানকে সরিয়ে দলের অনিয়মিত খেলোয়াড় গুলবাদিন নায়েককে অধিনায়ক করা হয়। যা নিয়ে তীব্র সমালোচনা হয়। সেই সমালোচনায় প্রকাশ্যে যোগ দিয়েছিলেন দলের অন্যতম দুই সেরা তারকা ক্রিকেটার মোহাম্মদ নবি ও রশিদ খান।
বিশ্বকাপের প্রথম দুই ম্যাচ পর উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ শাহজাদকে হাঁটুর চোট দেখিয়ে বাদ দেয়া নিয়েও কম বিতর্ক হয়নি। শাহজাদ তো জাতীয় দল থেকে অবসর নেয়ার কথাও বলেছেন। আপাতত সেটা সামাল দেয়া গেলেও নতুন করে দানা বেঁধেছে বিতর্ক।
টানা পাঁচ ম্যাচে হেরেছে আফগানিস্তান। নিজেদের সবশেষ ম্যাচে ইংল্যান্ডের সামনে অসহায় লেগেছে পুরো আফগান দলকে। ৯ ওভারে ১১০ দিয়ে বিধ্বস্ত দলের বড় তারকা রশিদ খান। ইয়ন মরগানের রেকর্ড ১৭ ছক্কার সামনে ভেঙে পড়ে আফগান বোলিং।
কানাঘুষা চলছে, অধিনায়ক নায়েবের সঙ্গে রশিদ-নবির সম্পর্ক একেবারে তলানিতে। একে অপরের সঙ্গে কথাও একেবারে বন্ধ। দলে ছোট ছোট গ্রুপ হয়ে গেছে। গত চার বছর ধরে যে দলটাকে হাতে করে তৈরি করেছিলেন কোচ সিমন্স, তা আজ ভেঙে চুরমার।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের মতো দলকে পরপর চারবার হারিয়েছিল আফগানিস্তান। বিশ্বকাপের আগে প্রস্তুতি ম্যাচে হারায় পাকিস্তানকেও। কিন্তু বিশ্বকাপের শুরু থেকেই সেই দলটা এখন কঙ্কাল। যে ক্রিকেট খেলে বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জন করেছিল, সেই স্পিরিটাই হারিয়ে ফেলেছে তারা।
এর পেছনের কারণ হিসেবে সিনিয়র খেলোয়াড়রা দায়ী করছেন সাবেক প্রধান নির্বাচক আহমেদজাইকে। তিনি বাইরে থেকে নানা অহেতুক বিতর্ক তুলে দলের স্পিরিটের বারেটা বাজিয়েছেন বলে অভিযোগ। যা নিয়ে দলের সিনিয়ররা চরম ক্ষুব্ধ।
বিশ্বকাপের পরেও আফগানিস্তানের কোচ পদে থেকে যাওয়ার আবেদন করেছেন সিমন্স। এমন খবর বের হতেই টুইট করে তার প্রতিবাদ করেন ক্যারিবীয় সাবেক এই তারকা।
বিশ্বকাপ নিয়ে তিনি লিখেছেন, ‘দলের বিশ্বকাপ স্বপ্ন একেবারে শেষ। নিয়মরক্ষার চারটি ম্যাচ খেলতে হবে।’
এদিকে, দলের চরম বাজের পারফরম্যান্সের মধ্যেই আফগানিস্তান দলকে পাকিস্তানের চেয়ে ভালো বলে দাবি করেছেন আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের প্রধান নির্বাহী আসাদুল্লাহ খান। নিজেদের ক্রিকেটের উন্নয়নের পাকিস্তানের আফগানিস্তানের সাহায্য নেয়া উচিত বলেও মত তার।
পাকিস্তান ও আফগানিস্তান বিশ্বকাপে দুই দলের অবস্থানই এখন পয়েন্ট টেবিলের তলানিতে। তবে ১৯৯২ বিশ্বকাপজয়ী পাকিস্তান বেশ খারাপ খেললেও এখন পর্যন্ত আফগানিস্তানের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে। একটি জয় পেয়েছে তারা, আফগানরা যেখানে জয়ের মুখই দেখেনি। এই অবস্থায় খান বলেছেন, ‘বর্তমানে ক্রিকেটে পাকিস্তান থেকে অনেক ভালো দল আমরা। তাদের ক্রিকেটে টেকনিক্যাল, কোচিং এবং অন্যান্য জিনিসের উন্নতির জন্য আমাদের কাছ থেকে সহায়তা নেয়া উচিত।’
আফগান বোর্ডের প্রধান নির্বাহী আরও বলেন, ‘পাকিস্তান থেকেই আমি প্রাথমিকভাবে ক্রিকেট খেলা শুরু করি এবং প্রতিবেশী দেশ হিসেবে তাদের কাছ থেকে অনেক সমর্থন পেয়েছি। দুই দেশের মধ্যে সিরিজ হওয়ার ব্যাপারটা আমাদের বোর্ড প্রধানের উপর নির্ভর করছে। আমি আশা করছি ক্রিকেট সিরিজ আয়োজন করতে দুই দেশের বোর্ডই কোনো না কোনো উপায় খুঁজে বের করবে।’
ওয়ানডে ইতিহাসে মাত্র তিনবারই একে অপরের মুখোমুখি হয়ে পাকিস্তান ও আফগানিস্তান। এর সবকটিতেই জয়ের দেখা পেয়েছে পাকিস্তান। ২৯ জুন হেডিংলিতে বিশ্বকাপের ম্যাচে মুখোমুখি হবে পাকিস্তান ও আফগানিস্তান। সেই ম্যাচে আসাদুল্লাহ খানের কথা ফলে কিনা সেটাই দেখার।