ইন্টারপোলের খোঁজাখুঁজির কারণে কথিত ইসলামিক স্টেটের (আইএস) আত্মঘাতি বোমারু হিসেবে আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় আলোচনায় আসা বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডিয়ান নাগরিক তাবিরুল হাসিবের সঙ্গে আরো তিনজন কানাডা থেকে পালিয়ে গিয়েছিল।
কানাডাভিত্তিক অনলাইন পোর্টাল নতুনদেশ ডটকম বলছে, আইএস-এর হয়ে যুদ্ধ করতে সিরিয়ায় পাড়ি জমানো সমবয়সী চার বন্ধুই বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত। টরন্টোর বাঙালি অধ্যূষিত এলাকায় বাবা মার সাথে বাস করতো তারা।
কানাডার পুলিশের কাছে থাকা তথ্য থেকে জানা যায়, তাবিরুল হাসিবের সাথে সিরিয়ায় পাড়ি জমানো অন্য তিন তরুণ আবদুল মালেক, নুরু ও আদিব। ২০১২ সালে মধ্যপ্রাচ্যগামী একটি ফ্লাইট ধরে তারা কানাডা ছেড়ে যায়। সিরিয়ায় পৌঁছেই তারা নিরাপদে ‘গন্তব্যে’ পৌঁছার সংবাদটিও টেলিফোনে তাদের বাবা মাকে জানিয়েছিল।
জানা যায়, চার তরুণ এক সঙ্গে নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার পর উদ্বিগ্ন বাবা-মা পুলিশের কাছে ‘সন্তান নিখোঁজ’ হয়ে যাওয়ার রিপোর্ট করে। আরসিএমপি এবং বর্ডার এজেন্সির সদস্যদের তুমুল জিজ্ঞাসাবদের মুখে পড়ে তারা। পরে সরকারের সহযোগিতা নিয়ে চারজনের অভিভাবকই সিরিয়া থেকে তাদের ফিরিয়ে আনে। কিন্তু ২০১৪ সালের জুলাই মাসে তারা আবার কানাডা ছেড়ে যায়।
আইএস-এর হয়ে সিরিয়ায় যুদ্ধ করতে যাওয়া চার বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত তরুণেরই জন্ম কানাডায়। তবে তাদের বাবা মা বাংলাদেশ থেকে অভিবাসন নিয়ে কানাডায় এসেছিলেন। টরন্টোর বাঙালি পাড়ায় ছিলো তাদের বসবাস। তাবিরুল হাসিব মনার্ক পার্ক কলেজিয়েট স্কুল থেকে পাশ করে সেন্টিনিয়েল কলেজে পড়াশোনা করে।
তবে তার সঙ্গী আবদুল মালেককে তার বাবা মা কখনোই কোনো পাবলিক স্কুলে পাঠান নি। কোরান মুখস্ত করতে তাকে পাঠিয়েছিলেন একটি মাদ্রাসায়। স্কারবোরো এলাকার একটি মসজিদের ইয়ুথ প্রোগ্রামের সঙ্গেও সে জড়িত ছিলো। তাদের সঙ্গী নুরু ও আদিব সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায়নি।
ইন্টারেপোলে আইএস এর আত্মঘাতি বোমারু হিসেবে তাবিরুল হাসিবের নাম আসায় কানাডার গোয়েন্দা সংস্থা এবং চরমপন্থীদের নিয়ে যারা গবেষণা করেন তাদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। তাবিরুল হাসিব আদৌ বেঁচে আছে কি না সেটা নিয়েও তাদের মধ্যে সংশয় তৈরি হয়েছে। কেউ কেউ মনে করছেন, অন্য কেউ হয়তো বা তাবিরুলের নাম ব্যবহার করছে।
কানাডার গোয়েন্দাদের কাছে থাকা তথ্য অনুসারে তাবিরুল হাসিবের সাথে আইএস এ যোগ দিতে যাওয়া বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত চার জনের অন্তত দুই জনই আইএস এর হয়ে অভিযান চালাতে গিয়ে মারা গেছে।
মালেকের বাবা ২০১৫ সালে সিবিসিকে জানিয়েছিলেন, তাবিরুল হাসিব তাকে ফোন করে জানিয়েছে সিরিয়ার সীমান্তবর্তী কোবানী শহরে আইএস এর বড় ধরনের একটি অভিযানে অংশ নিতে গিয়ে মালেক মারা গেছে। এর পর হাসিবের মৃত্যু সংবাদও তাদের কাছে এসেছিল।
তাবিরুল হাসিবকে ইন্টারপোলের খোঁজাখুজি করা নিয়ে কানাডা সরকার কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রালফ গোডেল এর প্রেস সেক্রেটারি স্কট বার্ডসলে এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, জাতীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত কোনো অভিযানের ব্যাপারে সরকার কোনো মন্তব্য করে না।