মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত কাদের মোল্লাকে ‘শহীদ’ উল্লেখ করে সংবাদ প্রকাশের জেরে দায়ের করা মামলায় ‘দৈনিক সংগ্রাম’ এর সম্পাদক আবুল আসাদকে তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আদেশ দিয়েছেন আদালত।
শনিবার বিকেলে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় সংগ্রাম সম্পাদক আবুল আসাদকে তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আদেশ দেন মহানগর হাকিম মো. মইনুল ইসলাম।
এর আগে দুপুরে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় সংগ্রাম সম্পাদক আবুল আসাদকে আদালতে হাজির করে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। পরে দুই পক্ষের শুনানি শেষে তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আদেশ দেন মহানগর হাকিম মো.মইনুল ইসলাম।
শনিবার সকালে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় আবুল আসাদকে আদালতে পাঠানো হয়।
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া কাদের মোল্লাকে নিজেদের প্রতিবেদনে ‘শহীদ’ বলায় শুক্রবার বিকেল থেকে দৈনিক সংগ্রামের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেয় ‘মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের’ ব্যানারে অসংখ্য মানুষ।
এর পরিপ্রেক্ষিতে সন্ধ্যার দিকে কার্যালয়ের ফটকে তালা ঝুলিয়ে সামনে অবস্থান নেয় বিক্ষুব্ধরা। এসময় তারা পত্রিকা পুড়িয়ে প্রতিবাদ জানায় এবং সম্পাদককে গ্রেপ্তারসহ পত্রিকাটির প্রকাশনা বন্ধের দাবি জানায়।
এ অবস্থায় সন্ধ্যা সাতটার দিকে সংগ্রামের কার্যালয় থেকে সম্পাদক আবুল আসাদকে হেফাজতে নেয় হাতিরঝিল থানা পুলিশ। তখন কার্যালয়ের ভেতরে ঢুকে বিক্ষুব্ধরা ভাঙচুর চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন পত্রিকাটির সাংবাদিকরা।
এরপর সম্পাদক আবুল আসাদকে তার রুমের বাইরে এনে টিভি সাংবাদিকদের ক্যামেরার সামনে দাঁড় করিয়ে জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে বলা হয়। তখন তিনি ‘শহীদ’ শব্দটি ব্যবহারের জন্য দুঃখ প্রকাশ ও ক্ষমা চান। সেসময় পুলিশ জানায়: আবুল আসাদকে হেফাজতে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
নির্বাচন কমিশন থেকে নিবন্ধন হারানো রাজনৈতিক সংগঠন জামায়াতের মুখপত্র হিসেবে পরিচিত এ জাতীয় দৈনিকে শুক্রবার প্রকাশিত পত্রিকার প্রথম পৃষ্ঠায় ‘শহীদ কাদের মোল্লার ৬ষ্ঠ শাহাদাত বার্ষিকী আজ’ শিরোনামে এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়: আজ ১২ ডিসেম্বর শহীদ কাদের মোল্লার ৬ষ্ঠ শাহাদাত বার্ষিকী। ২০১৩ সালের এই দিনে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর করে সরকার। জাতিসংঘের মহাসচিব থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব, মানবাধিকার সংগঠনের অনুরোধ উপেক্ষা করেই ফাঁসি কার্যকর করা হয়।
দৈনিক সংগ্রামে প্রকাশিত প্রতিবেদন জনমনে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও এ নিয়ে চলে বিস্তর সমালোচনা। এই প্রতিবেদনকে ধৃষ্টতা বলেও আখ্যায়িত করেছেন অনেকে।