তামাকপণ্যে কার্যকর কর আরোপ করে অকালমৃত্যু রোধের পাশাপাশি বাড়তি রাজস্ব আদায় সম্ভব জানিয়ে তামাকবিরোধী সংগঠনগুলো আগামী বাজেটে সিগারেটের করারোপে মূল্যস্তর প্রথা তুলে দেওয়ার প্রস্তাব করেছে। সংগঠনগুলো বলেছে, মূল্যস্তর প্রথা কর ফাঁকির অন্যতম হাতিয়ার।
সংবাদ সম্মেলনে তারা দাবি করেন, মূল্যস্তর প্রথা থাকার কারণে বহুজাতিক তামাক কোম্পানি বিএটিবি মধ্যম স্তরের সিগারেটকে নিম্নস্তর হিসেবে দেখিয়ে প্রায় ৭০০ কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে। স্তরভিত্তিক কর প্রথা চালু থাকায় এধরনের ঘটনা ঘটছে বলেও তাদের দাবি।
প্রজ্ঞা এবং এন্টি টোব্যাকো মিডিয়া এলায়েন্স-আত্মা’র উদ্যোগে তামাকবিরোধী সংগঠন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন, এইড ফাউন্ডেশন, অধীর ফাউন্ডেশন, ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন, এসিডি, ইপসা, সীমান্তিক, উবিনীগ, ইসি বাংলাদেশ, ডব্লিউবিবি ট্রাস্ট, নাটাব, বিসিসিপি ও প্রত্যাশা সম্মিলিতভাবে ‘কেমন তামাক-কর চাই’ বিষয়ে প্রাক-বাজেট সংবাদ সম্মেলনে ৯ দফা সুপারিশ তুলে ধরে।
তাদের অন্য দাবিগুলোর মধ্যে আছে: সব ধরনের সিগারেটে একই হারে অর্থাৎ খুচরা মূল্যের ৭০ শতাংশ সুনির্দিষ্ট এক্সাইজ ট্যাক্স আরোপ, বিড়ির খুচরা মূল্যের ৪০ শতাংশ সমপরিমাণ সুনির্দিষ্ট এক্সাইজ ট্যাক্স এবং জর্দা এবং গুলের উপর খুচরা মূল্যের ৭০ শতাংশ সুনির্দিষ্ট এক্সাইজ ট্যাক্স আরোপ করা।
এছাড়াও তাদের প্রস্তাবের মধ্যে আছে: আয় এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে প্রকৃত মূল্য বৃদ্ধির জন্য তামাকপণ্যের মূল্য বাৎসরিক সমন্বয় করা, খাদ্য নিরাপত্তার স্বার্থে তামাকের ওপর বিদ্যমান রপ্তানি শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে ২৫ শতাংশে বৃদ্ধি, তামাকের চুল্লির ওপর বছরে ৫ হাজার টাকা লাইসেন্সিং ফি আরোপ, তামাকের কর প্রশাসনকে শক্তিশালী করে কর সংগ্রহ ব্যবস্থা উন্নত করা, কর ফাঁকি বন্ধে তামাকপণ্যের শুল্কমুক্ত বিক্রয় প্রথা তুলে দিয়ে করারোপ এবং তামাকপণ্যের উপর ২% স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ আরোপ করে এখান থেকে আদায় করা অতিরিক্ত রাজস্ব আয় তামাক নিয়ন্ত্রণ এবং অসংক্রামক রোগ মোকাবেলায় খরচ করা।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য উদ্ধৃত করে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, তামাকখাত থেকে সরকার যে পরিমাণ রাজস্ব পায় তামাক ব্যবহারের কারণে অসুস্থ রোগীর চিকিৎসায় সরকারকে স্বাস্থ্যখাতে তার দ্বিগুণ অর্থ খরচ করতে হয়। তামাকজনিত মোট ক্ষয়ক্ষতি হিসাব করলে তা মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রায় ৩ শতাংশ।
সংগঠনগুলোর সংগঠকরা বলেন, বাংলাদেশে তামাকের উপর শুল্ক-কাঠামো অত্যন্ত জটিল যেমন: সিগারেটের ক্ষেত্রে মূল্যস্তর প্রথা, বিড়ির ক্ষেত্রে অতি স্বল্পমাত্রার ট্যারিফ ভ্যালু, গুল-জর্দার ক্ষেত্রে এক্স-ফ্যাক্টরি প্রাইস ইত্যাদি প্রথা চালু থাকায় দেশে তামাকের ব্যবহার ও ক্রয়-ক্ষমতা হ্রাসে কার্যকর ভূমিকা রাখা সম্ভব হচ্ছে না। তারা জানান, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০১৪ সালের তথ্য বলছে, পৃথিবীর যেসব দেশে তামাকপণ্যের দাম অত্যন্ত সস্তা বাংলাদেশ তার মধ্যে অন্যতম। ফলে সামগ্রিকভাবে রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে সরকার।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন এন্টি টোব্যাকো মিডিয়া এলায়েন্স- আত্মা’র কো-কনভেনর নাদিরা কিরন। উপস্থিত ছিলেন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা এবং সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক ব্রিগেডিয়ার (অব:) আব্দুল মালিক, আত্মা’র কনভেনর মর্তুজা হায়দার লিটন, এডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম, ডা. মাহফুজুল হক ভুঁইঞা এবং হেলাল আহমেদ।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বাংলাদেশে ৪৩ শতাংশ অর্থাৎ প্রায় ৪ কোটি ১৩ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ তামাক সেবন করেন, যার মধ্যে ২৩% (২ কোটি ১৯ লাখ) ধূমপানের মাধ্যমে তামাক ব্যবহার করেন এবং ২৭.২% (২ কোটি ৫৯ লাখ) ধোঁয়াবিহীন তামাক ব্যবহার করেন। ধোঁয়াবিহীন তামাক ব্যবহারের হার নারীদের মধ্যে অনেক বেশি। এছাড়া, বাংলাদেশে ১৩ থেকে ১৫ বছর বয়সের প্রায় ৭% কিশোর-কিশোরী তামাক ব্যবহার করে যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। তামাক ব্যবহারজনিত রোগে দেশে প্রতিবছর প্রায় ১ লাখ মানুষ অকালমৃত্যু বরণ করেন।