নেপালে ৮১ বছরের মধ্যে অন্যতম শক্তিশালী ভূমিকম্পের পর জীবীত ও উদ্ধারকৃতদের অস্থায়ী অবস্থানে কাঠমান্ডু তাঁবুর শহরে পরিণত হয়েছে। প্রায় ১ হাজারের বেশি অধিবাসী দুই রাত ধরে কাঠমান্ডুর রত্ন পার্কে ঘুমাচ্ছেন। এদের মধ্যে অনেকেরই বাড়ি ধসে গেছে। অন্যরা বিল্ডিং ধসের ভয়ে তাদের বাসায় থাকার সাহস পাচ্ছেন না।
পর পর দুইদিনের ভূমিকম্পের পর সোমবার পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩ হাজার ৭’শতে। নেপালের দূর্যোগ ব্যবস্থাপনার প্রধান রামেশ্বর দাঙ্গাল আরো ৬ হাজার ৫’শ মানুষ হতাহত হয়েছে বলে জানান। কর্তৃপক্ষ আশঙ্কা করছে এই সংখ্যা আরো বাড়তে পারে যা নির্ভর করছে পর্বত বেষ্টিত গ্রামগুলোতে উদ্ধার অভিযান শেষ হওয়ার ওপর। উদ্ধারকর্মীরা ২দিন ধরে এসব গ্রামে উদ্ধার অভিযান চালানোর চেষ্টা করছে।
কাঠমান্ডু থেকে ৮০ কিলোমিটার পশ্চিমে দাধদিং গ্রামবাসীরা খোলা আকাশের নিচে রাত কাটাচ্ছেন। প্রচুর বৃষ্টিপাতে সবার অনেক কষ্ট হচ্ছে। হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত সেবা সামগ্রী ও ওষুধ নেই। আহতদের ভিড়ে উপচে পড়ছে হাসপাতালগুলো। কোনে গ্রামে বিদ্যুৎ নেই। মর্গগুলো ভরে গেছে লাশে। সব দোকানপাট বন্ধ হয়ে আছে। সাড়া শহরে মোবাইল নেটওয়ার্ক বন্ধ হয়ে আছে। স্থানীয়দের মধ্যে কেউ কেউ বলেন, সরকারের কাছ থেকে কোন সাহায্য তারা পাচ্ছে না। এখানে বিশুদ্ধ খাবার পানি ও খাবার নেই।
শহরের সবথেকে বড় ‘বীর হাসপাতালে’ প্রায় ১২ জনের বেশি হতাহতরা রুমে জায়গা না পেয়ে মাটিতে আছেন। তাদের পাশ থেকে তাদের আত্মীয়রা মাছি তাড়াচ্ছেন।
ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত দোকানদার রবি শ্রীস্থা তার পরিবার নিয়ে রাস্তার পাশে শুয়ে ছিলেন। তিনি বলেন, আমাদের কাছে কোন বিকল্প পথ নেই। ভূমিকম্পে আমাদের বাড়িঘর নড়বরে হয়ে গেছে। এই গুড়ি গুড়ি বৃষ্টিতে খোলা আকাশের নিচে আমাদের অনেক কষ্ট হলেও আমরা কী করতে পারি।
রাজধানী কাঠমান্ডুর বেশির ভাগ অ্যাপার্টমেন্ট খুব দূর্বল কাঠামোতে তৈরি। ইতিহাসের সবথেকে ভয়াবহ এই ভূমিকম্পে শুধুমাত্র কাঠমান্ডুতেই প্রায় ১ হাজার মানুষ মারা গেছে। ধ্বংস হয়ে গেছে প্রাচীনতম ও ঐতিহাসিক এলাকাগুলোর নিদর্শন। কিন্তু আধুনিক অবকাঠামোতে তৈরি ভবনগুলো ধসে পড়ায় অবাক হয়ে গেছে নেপালবাসী।
ওয়ার্ল্ড ভিশনের মুখপাত্র মাত দারভাস বলেন, এখানকার গ্রামগুলো প্রায়ই ভবন ধসে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই ভয়াবহ ভূমিকম্পে ২’শ, ৩’শ এমনকি ১ হাজার গ্রামবাসী ভবন ধসে চাপা পড়ে থাকতে পারে।