বছর ঘুরে জাতির জীবনে আবার এসেছে শোকাবহ আগস্ট মাস। আজ সেই শোকের মাসের প্রথম দিন। ৪৫ বছর আগে এমনই এক মাসে বাঙালি হারিয়েছে তার হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ সন্তান জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীদের প্ররোচনায় একদন সেনাকর্মকর্তা সেদিন নৃশংসভাবে হত্যা করে তাঁকে।
শুধু জাতির পিতাকেই নয়, পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের সেই কালরাতে ঘাতকরা হত্যা করে বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিনী বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, বঙ্গবন্ধুর সন্তান শেখ কামাল, শেখ জামাল, শিশু শেখ রাসেলসহ দুই পুত্রবধু সুলতানা কামাল ও রোজি জামাল এবং পরিবারের আরও অনেক সদস্যকে।
পৃথিবীর সবচেয়ে জঘন্য আর ঘৃণ্যতম ওই হত্যাকাণ্ডের কলঙ্ক কয়েক যুগ ধরে বয়ে চলছে জাতি। যে কলঙ্করেখা কোনো দিনও জাতির ললাট থেকে মুছে ফেলা সম্ভব না। কেননা সেদিন ঘাতক চক্র শুধু বঙ্গবন্ধুকেই হত্যা করেনি, হত্যার চেষ্টা করেছে বাঙালির চেতনাকে।
এ জন্যই আমরা দেখেছি, পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে সাম্প্রদায়িক, প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী স্বাধীনতা সংগ্রামের মূল চার নীতিকে (গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, জাতীয়তাবাদ ও সমাজতন্ত্র) গলা টিপে হত্যা করেছে। সেই গোষ্ঠী দীর্ঘ সময় ধরে বাংলাদেশকে পাকিস্তানি ভাবধারায় পরিচালিত করেছে। যে কারণে আজও স্বাধীনতার মূল চেতনা বাস্তবায়িত হয়নি। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার আসল উদ্দেশ্যই ছিল এটাই। কিন্তু সেই চেষ্টা সফল হয়নি।
বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর সেই ঘটনার বিচার যাতে না হয়, সেজন্য সাংবিধানিক বাধা তৈরি করেছিল বিএনপি ও তাদের রাজনৈতিক দোসররা। তাই ২১ বছরের বেশি সময় নৃশংস সেই হত্যাকাণ্ডের বিচার পায়নি জাতি। তবে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী ক্ষমতায় আসার পর সরকার সেই বাধা দূর করে খুনীদের বিচার করে। কয়েকজন খুনির ফাঁসি রায় কার্যকর করে কিছুটা হলেও জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করেছে। কিন্তু এখনও পাঁচ জন আত্মস্বীকৃত বিভিন্ন দেশে পালিয়ে আছে।
আমরা মনে করি, ব্যক্তি বঙ্গবন্ধুকে হত্যায় সফল হলেও কুচক্রীরা তাঁর স্বপ্ন, চেতনাকে শেষ করতে পারেনি। তাঁকে কোনোভাবেই মুছে ফেলা যাবে না। তবে এটাও ঠিক বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের পুরোপুরি বাস্তবায়নও সম্ভব হয়নি। তা করতে হলে অবশ্যই মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনাকে ফিরিয়ে আনতে হবে। শোকের মাসে সেটাই হোক জাতির শপথ।