‘তরুণদের হাতেই আগামি দিনের বাংলাদেশের সংস্কৃতি, শিল্প, সাহিত্য। তরুণরাই বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। এরাই এই দেশটাকে বাঁচিয়ে তুলবে। তাদের হাতেই আগামি দিনের বাংলাদেশের ভবিষ্যত। আমি নিশ্চিত, তরুণরাই আমাদের স্বপ্নের ঠিকানায় পৌঁছে দেবে।’
তরুণদের নিয়ে এমন উচ্ছ্বাসমাখা ও আশা জাগানিয়া কথাগুলো বলছিলেন চলচ্চিত্র নির্মাতা নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু।
মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর শিল্পকলার স্টুডিও থিয়েটারে ২০১৮ সালে ‘নদ্দিউ নতিম’ নাটকের সমাপনী প্রদর্শনী ও ‘আনন্দে আটখানা’ শীর্ষক দেশের ৮ সৃষ্টিশীল তরুণকে সংবর্ধনার আয়োজন করে ম্যাড থেটার। যেখানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু।
এদিন সন্ধ্যা ৭টায় শুরু হয় আলোচিত ‘নদ্দিউ নতিম’-এর মঞ্চায়ন। অন্ধকার স্টুডিও থিয়েটারের মঞ্চে আলো প্রস্ফুটিত হয়। রঙিন আলো! সঙ্গে সঙ্গে কথাও ফুটে। অন্ধকার ভেদ করে বেরিয়ে আসে নাটকের প্রধান চরিত্র। নদ্দিউ নতিম কিংবা মতিন উদ্দিন। বলেন, ‘আমি কবি’। এই শুরু। এরপর পুরো নাটক জুড়েই উজবেক কবি নদ্দিউ নতিম কিংবা মতিন উদ্দিনের নানা সংকট, আশা, প্রত্যাশা, প্রেম, স্বপ্ন ও সৃষ্টিশীলতার কথা উঠে আসে। কখনো বা সিরিয়াস, আবার কখনোবা স্যাটায়ারের ভঙ্গিতে! একের পর এক দৃশ্যকল্পে দর্শককে ডুবিয়ে রাখেন নদ্দিউ নতিম কিংবা মতিন উদ্দিন। একাই অজস্র চরিত্রের সমষ্টি হয়ে। টানা দুই ঘন্টা!
মুগ্ধ হন দর্শক। কড়তালির মধ্য দিয়ে শেষ হয় ‘নদ্দিউ নতিম’-এর প্রদর্শনী। পুরো থিয়েটারে আলো জ্বলে ওঠে।
অন্যদিন সাধারণত নাটক শেষ হওয়ার পর দর্শকরা থিয়েটার রুম ছাড়েন, কিন্তু এদিন ম্যাড থেটারের পক্ষে অনুরোধ আসে দর্শকের প্রতি। জানানো হয়, শিল্প-সাহিত্যাঙ্গনের আট নির্বাচিত প্রিয় মুখের সংবর্ধনা অনুষ্ঠান ‘আনন্দে আটখানা’য় সামিল হতে। মঞ্চে ডাকা হয় এ বছর শিল্প সাহিত্য ও সংস্কৃতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে পুরস্কৃত হওয়া আট গুণী মানুষকে। দুইজন ঢাকার বাইরে থাকায় উপস্থিত না হতে পারলেও একে একে মঞ্চে উঠেন প্রাচ্যনাটের বাকার বকুল, সুবচন নাট্যসংসদের সোনিয়া হাসান, নির্দেশক ও নাট্যব্যক্তিত্ব সাধনা আহমেদ, নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের পান্থ শাহরিয়ার, কবি পিয়াস মজিদ এবং কবি ও নির্মাতা জুয়েইরিযাহ মউ।
উপস্থিত ছয়জনকে সম্মাননা জানাতে মঞ্চে ডাকা হয় ম্যাড থেটারের আয়োজন ‘আনন্দে আটখানা’র প্রধান অতিথি নির্মাতা নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চুকে। তিনি ছয় প্রিয়মুখের কাঁধে উত্তরীয় পরিয়ে দেন এবং প্রত্যেককে হাতে তুলে দেন সম্মাননা পত্র ও ফুল আর বই।
এরপর সংবর্ধিত উপস্থিত ছয় জনই নিজেদের অনুভূতির কথা তুলে ধরেন। সকলেই বিভিন্ন ক্ষেত্রের সৃষ্টিশীল মানুষকে এক প্লাটফর্মে এনে দাঁড় করার জন্য ম্যাড থেটারকে ধন্যবাদ জানান। এরপর মাইক্রোফোন দেয়া হয় নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চুর হাতে।
আনন্দে আটখানার উদ্যোগ ও নির্বাচিত আটজনকে সংবর্ধনা জানানোর বিষয়টি নিয়ে নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু বলেন, ম্যাড থেটার যে আট তরুণ কৃতী শিল্প সৃষ্টিকারীকে তাদের কাজের জন্য সংবর্ধনা দিলো তাদের প্রত্যেককে আমি চিনি। তারা তাদের জায়গায় শ্রেষ্ঠ। পুরস্কার বা সম্মাননার ক্ষেত্রে একটা কথা প্রায়ই শুনি যে, পুরস্কার দেয়া হয় মুখ দেখে পরিচিত জনকে বা উৎকোচ নিয়ে ব্যাপারটা মোটেও সেরকম নয়। যে আটজনকে সম্বর্ধনা দেয়া হলো এরা প্রত্যেকেই তাদের কাজের শ্রেষ্ঠত্বের জন্যই পুরস্কৃত হয়েছেন। তারা তাদের সৃষ্টিশীলতার মধ্য দিয়ে বর্তমান বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করছেন। আর বলে দেয়ার অপেক্ষা রাখে না যে আজ প্রত্যেকেই এখানে স্ব স্ব পরিচয়েই দাঁড়িয়ে আছেন। প্রতিভা, নেশায়, শ্রমে এবং সৃষ্টিশীলতায় অনন্য বলেই ম্যাড থেটার দ্বারা সংর্ধিত হলেন। তাদের অভিনন্দন।
সবশেষে মাইক্রোফোন তুলে দেয়া হয় ‘নদ্দিউ নতিম’-এর প্রধান চরিত্র আসাদুল ইসলাম আসাদের হাতে। না, এবার তিনি নাটকের চরিত্র হিসেবে নয়, কথা বলেন ‘ম্যাড থেটার’-এর প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে।
এমন আয়োজনে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও চলচ্চিত্র নির্মাতা নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চুর উপস্থিতি গর্বিত হওয়ার মতো মন্তব্য করে আসাদুল ইসলাম আসাদ বলেন, আমরা নাটকের লোক। আর এখনকার পরিস্থিতি এরকম যে, অন্য প্লাটফর্মের মানুষের সাথে মেশা বা তাদের সাথে লেনদেন বা মত বিণিময় হয়েই ওঠে না। আমরা ম্যাড থেটার চেয়েছি যে, বছর জুড়ে শিল্প সাহিত্যে নাটকের বাইরে অন্যান্য ক্ষেত্রেও যারা সফলতা পেলেন তাদেরকে একসাথে করতে। ছোট্ট পরিসরে হলেও তাদেরকে সংবর্ধনা জানাতে। নাটকের বাইরেও আমরা চলচ্চিত্র নির্মাতা জুইয়েরিযাহ মউকে পেয়েছি, কবি পিয়াস মজিদকে পেয়েছি। সবচেয়ে বড় কথা এই বিজয়ের মাসে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধা ও চলচ্চিত্র নির্মাতা এবং মঞ্চে আমরা যাকে অভিভাবক হিসেবে পেয়েছি সেই নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু ভাইকে পেয়েছি। যিনি আমাদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এসে আমাদের অনুপ্রাণিত করেছেন। তাকে শ্রদ্ধা জানাই।