কর্মসংস্থানের অন্যান্যখাতে নারীর অংশগ্রহণ বাড়লেও তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে এখনো নারীর অংশগ্রহণ সন্তোষজনক নয় বলে মনে করেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম। এমন বাস্তবতায় ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ বাস্তবায়নে নারীর অংশগ্রহণ আরও বাড়াতে নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে সরকার।
তবে দেশের প্রযুক্তিখাতে নারীদের পিছিয়ে থাকার জন্য সামাজিক পরিবেশ, নিরাপত্তার অভাব এবং বাবা-মা ও স্বামীর অসহযোগিতার মতো পারিবারিক কারণকে দায়ী করেছেন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন ফর সফটওয়্যার ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) এর সভাপতি মোস্তফা জব্বার।
অন্যদিকে মানবসম্পদ উন্নয়নের সব সরকারি উদ্যোগে নারীদের জন্য ৩০ শতাংশ কোটা নির্ধারণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন,‘আইসিটিখাতে পুরুষদের অংশগ্রহণ বেশি। এখাতে নারীর অংশগ্রহণ এখনো কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় পৌঁছায়নি। পারিবারিক প্রতিবন্ধকতা কাটানোর চেষ্টার মধ্যেই নারীকে সাইবার অপরাধের মতো চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হচ্ছে।’
নারীর জন্য নিরাপদে ইন্টারনেট দুনিয়ার দরজা খুলতে সরকারের নেয়া পদক্ষেপ তুলে ধরেন তারানা হালিম।
তিনি বলেন,‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নারীর ভাবমূর্তি ও সামাজিক মর্যাদা ক্ষুণ্ন করার জন্য হীন মানসিকতার ব্যক্তি আক্রমণ, অশালীন মন্তব্য বানোয়াট ছবি প্রচার হয়। অসচেতন সাধারণ মানুষ এসব আবার বিশ্বাসও করে। তাই উন্নত বিশ্বের সাইবার বুলিং (অসৌজন্যমূলক, অনাকাঙ্ক্ষিত শব্দ), হেট স্পিচ (ঘৃণা ছড়ানো প্রচারণা), উস্কানি বিরোধী আইনের মতো বাংলাদেশেও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে বিশেষ ধারা যুক্ত করা হয়েছে।
ইতোমধ্যে তা অনুমোদনের জন্য মন্ত্রীসভায় উত্থাপন করা হয়েছে। আইনটি এখন বাস্তবায়নের অপেক্ষায়। এরকম আইন করা হয়েছে তা জনগণকে জানাতে প্রয়োজন ব্যাপক প্রচার- প্রচারণা।’
দেশের প্রযুক্তিখাতে নারীর অংশগ্রহণ কতোটা এমন প্রশ্নের জবাবে বেসিস সভাপতি মোস্তফা জব্বার চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন,‘ডিজিটাল বাংলাদেশ রূপান্তরের সময়ে নারীদের অংশগ্রহণ হওয়া উচিৎ পুরুষের অনুপাতে সমান-সমান। দেশের শিক্ষিত নারীদের মাত্র ১০ শতাংশ কর্মসংস্থানে আসে। আর আইসিটিখাতে এই হার আরও কম। এজন্য দায়ী নারীর পরিবার। অনেক বাবা-মা অথবা স্বামী নারীকে কর্মসংস্থানের নতুন নতুন খাতে আসতে বাধা দিচ্ছে। তবে প্রযুক্তিখাতে নারীর অংশগ্রহণ আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় বেড়েছে বলে আশা করছি সামনে নারীদের সৃষ্টিশীলতার দেখা পাওয়া যাবে এইখাতে।’
দেশের নারীদেরকে ডিজিটাল বাংলাদেশের দক্ষমানব সম্পদ হিসেবে গড়তে সরকারি উদ্যোগগুলো তুলে ধরেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।
তিনি চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন,‘সরকার লার্নিং এন্ড আর্নিং সহ লিভারেজিং আইসিটি, স্টার্টআপ প্রকল্পসহ মানবসম্পদ উন্নয়নের সব উদ্যোগে নারীর জন্য ৩০ শতাংশ কোটা বরাদ্দ করেছে। জাতি সংঘের নারী বিষয়ক সংস্থা ইউএন উইমেন, উইমেন ইন ডিজিটালের মতো আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে ‘উইমেন আইসিটি ইনিশিয়েটিভ’ এর মতো প্ল্যাটফর্ম কয়েক মাসের মধ্যেই যাত্রা শুরু করবে।’
ডিজিটাল বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ শক্তি হিসেবে কিশোর-কিশোরীদের আগ্রহী করার নানা উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী বলেন,‘ শিক্ষার্থীদের দক্ষ মানব সম্পদ হিসেবে গড়তে এবার ন্যাশনাল হাইস্কুল প্রোগ্রামিং কনটেস্টে কিশোরীদের জন্য ‘গার্লস কোডিং কম্পিটিশন’ এর আয়োজন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে কিশোরীরা আইসিটিতে উৎসাহ পাবে।’