ঢাকা বিশ্ববিদ্যলয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে। পরীক্ষা শুরুর ৪৩ মিনিট আগে শিক্ষার্থীদের মোবাইলে হাতে লেখা প্রশ্নপত্র ছড়িয়ে পড়ার প্রমাণ পাওয়া গেছে। তবে প্রশ্নফাসের বিষয়টি অস্বীকার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
শুক্রবার সকালে পরীক্ষা শুরুর আগে উত্তরসহ প্রশ্নপত্র শিক্ষার্থীদের মোবাইলে আসে। প্রশ্নফাঁসের সকল তথ্য প্রমাণ সাংবাদিকদের কাছে রয়েছে। পরীক্ষা শেষে অনুষ্ঠিতব্য প্রশ্নের সঙ্গে ফাঁস হওয়া প্রশ্নের হুবহু মিল পাওয়া গেছে।
সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বাইরে ৮১টি কেন্দ্রে ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পরীক্ষা শুরুর ৩১ মিনিট পরে প্রশ্নের উত্তরসহ ১৪টি ছবি সাংবাদিকদের কাছে আসে। পরে সেগুলো যাচাই বাছাই করে প্রশ্নফাসের প্রমাণ পাওয়া যায়। সেখানে দেখা যায়, ‘প্রশ্নটি পরীক্ষা শুরু হওয়ার ৪৩ মিনিট আগে (সকাল ৯টা ১৭) উত্তরসহ শিক্ষার্থীদের মোবাইলে আসে। নিশ্চিত হওয়ার পরে বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর সোহেল রানাকে অবহিত করেন সাংবাদিকরা। পরে পরীক্ষা শেষে অনুষ্ঠিতব্য প্রশ্নের সঙ্গে মিলিয়ে দেখলে ফাঁস হওয়ার প্রশ্নের সঙ্গে মিল পাওয়া যায়। তবে পরীক্ষা শেষে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ফাঁস হওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে।
অনুষ্ঠিতব্য প্রশ্নের সঙ্গে ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্র মিলিয়ে দেখা যায়, ‘ঘ’ ইউনিটের বাংলা, ইংরেজি ও সাধারণ জ্ঞান বিষয়ে ১০০ টি প্রশ্নে মধ্যে বাংলা অংশে ১৯টি, ইংরেজি অংশে ১৭টি, সাধারণ জ্ঞান অংশে ৩৬টিসহ (বাংলাদেশ বিষয়াবলি ১৬ ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি ২০) মোট ৭২ টি প্রশ্নের উত্তরপত্রের হুবহু মিল পাওয়া যায়।
তবে প্রশ্নফাঁসের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক একেএম গোলাম রব্বানী সাংবাদিকদের বলেন, আমরা কোনো নির্ভরশীল সূত্র থেকে প্রশ্নফাঁসের তথ্য নিশ্চিত হতে পারিনি। কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে দিয়ে পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করেছি। প্রশ্নফাঁসের কোন সুযোগ নেই। তবে যে বিষয়টি বলা হচ্ছে সেটি প্রশ্নফাঁস নয়, ডিজিটাল জালিয়াতি কিনা সেটা খতিয়ে দেখবো। বিষয়টি প্রমাণিত হলে কি ব্যবস্থা নেওয়া হবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,যদি অভিযোগটি প্রমাণিত হয়, তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম-নীতি অনুসারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এই বিষয়ে ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার সমন্বয়কারী ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক সাদেকা হালিম সাংবাদিকদের বলেন, সর্বোচ্চ নজরদারির মধ্যে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রশ্নফাঁসের কোনো ভিত্তি নেই। আমরা এমন কোনো অভিযোগ পাইনি।
এর আগেও গত বছর ‘ঘ’ ইউনিটের প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ ওঠেছিল। বিশ্ববিদ্যালয় এটাকে ডিজিটাল জালিয়াতি বলে আখ্যায়িত করে একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করেছিল সেসময়। তবে এক বছর পেরিয়ে গেলেও তদন্ত কমিটির কোনো প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়নি।
প্রসঙ্গত, সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত মোট ৮১টি কেন্দ্রে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এ বছর ‘ঘ’ ইউনিটে ১৬শ ১৫টি আসনের বিপরীতে (বিজ্ঞানে- ১১৫২টি, বিজনেস স্টাডিজে- ৪১০, মানবিকে- ৫৩টি) আবেদনকারীর সংখ্যা ৯৫ হাজার ৩শ ৪১জন। প্রতি আসনে লড়ছেন ৫৯ জন শিক্ষার্থী। পরীক্ষার কেন্দ্রে মোবাইল ফোন বা টেলিযোগাযোগ করা যায় এমন কোনো ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস নিষিদ্ধ করা হয়।